ছবি-সংগৃহীত
দেশের নন্দিত জাদুশিল্পী, খ্যাতিমান বাঁশি বাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জুয়েল আইচ আমেরিকায় গিয়েছেন। সেখানে নিউইয়র্কে ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ‘হুমায়ূন আহমেদ সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা’য় তিনি অংশ নেন। সেখানে তিনি জাদুও প্রদর্শন করেছেন।
জুয়েল আইচ এবারের আমেরিকায় অনুষ্ঠান শেষে এক বিরল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। সেকথা তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্তদের জানিয়েছেন।
এ নিয়ে তিনি দীর্ঘ একটি পোস্ট দেন। পাশাপাশি সেই মুহূর্তের একটি ছবিও প্রকাশ করেন। এতে তিনি লেখেন- এবার নিউইয়র্কে ‘হুমায়ূন আহমেদ সম্মেলন এবং আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা’য় নানা রকমের অবিশ্বাস্য সমস্ত ঘটনা ঘটেছে।
আমি একজন সামান্য জাদুশিল্পী মাত্র। তরুণ বয়সে ১৯৭১ সালে রাইফেল হাতে যুদ্ধ করেছি। লাখ লাখ মানুষের আত্মদানে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল।
কিন্তু আমার কথা এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে হলভর্তি দর্শক পিন-পতন নিস্তব্ধতা, কখনো অট্ট হাসিতে এবং প্রচণ্ড হাততালিতে ছাদ ফাটিয়ে ফেলার মতো পরিস্থিতি তৈরি করলেন। আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। এতো ভালোবাসা আমি কোথায় রাখি!
বক্তৃতা শেষে অডিটরিয়ামের মঞ্চ থেকে নেমে বাইরে বেরিয়ে আসছি। আমার সামনে পেছনে হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো নানান বয়সী মানুষের মিছিল।
সবার ভূয়সী প্রশংসায় আমি বিহ্বল হয়ে পড়লাম। কেউ কেউ ফটো তুলছেন। কেউ সেলফি তুলতে চাইছেন। আবার কেউ কেউ আমাকে রক্ষা করার জন্য ভলান্টিয়ারের মতো এগিয়ে এসেছেন।
এই সময় হঠাৎ একজন মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা সামনে এগিয়ে এলেন। হলুদ শাড়ি পরা। মাথায় কাঁচা-পাকা চুল। আমার মুখের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে দাড়িয়ে গেলেন। অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্না মানুষ। খুবই দৃঢ়।
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে আমায় সুদৃঢ় উচ্চারণে বললেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে ছবি তুলতে আসিনি’-তার এই ব্যক্তিত্ব এবং কথা বলার আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গি আশেপাশের সবাইকে থামিয়ে দিল।
তিনি আরও বললেন, ‘আপনি আমার বাংলাদেশ’। মুহূর্তে একদম মায়ের মতো আমার বুকের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। ডুকরে কেঁদে উঠলেন। তার কান্না আর থামছে না। আমি পরম শ্রদ্ধায় তার মাথায় এবং পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।
আরো পড়ুন: দেশের ১৫৩ হলে মুক্তি পেল ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’
ধীরে ধীরে তার কান্না থেমে এলো। আশেপাশের লোক কাছে এসে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকে এবং আমাকে দেখতে লাগলেন। এমন দৃশ্য এর আগে আমি এবং তারা কেউই কখনো দেখিনি বা দেখেননি।
আমি তারপরে যা কিছুই করেছি সবটাজুড়ে মায়ের মতো এই ভদ্রমহিলা আমার সমস্ত সত্তাকে আবিষ্ট করে রাখলেন।
হোটেলে গেলাম কিছুতেই আর ঘুম পাচ্ছিল না। সারাটা রাত সেই স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে বেরিয়েছে। আমি খুবই তুচ্ছ একজন মানুষ। অথচ এই ব্যক্তিত্বসম্পন্না ভদ্রমহিলা আমাকে কোথায় তুলে দিলেন!
এসি/ আই.কে.জে/