ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
ঢাকার কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশন গত ১৯শে জুলাই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রায় ২ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই স্টেশনগুলোর সংস্কার কাজ শুরু করেছে। এখন শোনা যাচ্ছে, ৩৫০ কোটি টাকার বদলে এ কাজে খরচ হবে মাত্র ১৩৮ কোটি টাকা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মিরপুর-১০ স্টেশনের নিচে পুলিশ বক্সে ভাঙচুর করা হয়। এরপর থেকেই মেট্রোরেলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। হামলার পর কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশনে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ গণমাধ্যমকে জানালেন, কাজীপাড়া স্টেশনের মেরামতের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্থানীয়ভাবে তা করা হবে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে চালুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।
তিনি বলেন, কাজীপাড়া স্টেশন তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তার সংস্কার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমরা এখনই ভাবিনি, খরচ এত কম হবে। শুরুতে যা বলেছিলাম, এখন তাতে পরিবর্তন আসছে।
ডিএমটিসিএলের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, মিরপুর-১০ স্টেশনের যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হলে বেশ কিছু সময় লাগবে। খরচের চূড়ান্ত হিসাব এখনো করা হয়নি। তবে আমরা যেভাবে স্থানীয়ভাবে কাজ করছি, তাতে আশা করছি খরচ কমবে।
আবদুর রউফ বলেন, বর্তমানে কাজীপাড়া স্টেশনটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি মাসের শেষের দিকে এটি যাত্রীদের জন্য খুলে দেয়া হবে। ১৮ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা প্রস্তুত হয়ে যাবো।
আরেকটি সুখবর হলো, ২০শে সেপ্টেম্বর থেকে শুক্রবারেও মেট্রোরেল চলবে। ঢাকার যাত্রীদের কথা ভেবে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা তাদের জন্য একটি বড় সুবিধা হবে, যোগ করেন তিনি।
আবদুর রউফ বলেন, এভাবে সবার জন্য সুবিধাজনক পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। আশা করা যায়, দ্রুত সময়ের মধ্যে দুই স্টেশন আবার যাত্রীদের জন্য খুলে যাবে, এবং ঢাকা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
গত ১৯শে জুলাই হামলার ঘটনার পর আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দু’টি সংস্কার করে পুনরায় সচল করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। গত ২৭শে জুলাই সাংবাদিকদের বলেন সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশন ধ্বংসপ্রাপ্ত। এক বছরেও যন্ত্রপাতি এনে সচল করা সম্ভব হবে না বলে এক্সপার্টরা জানিয়েছে।
এছাড়া স্টেশন দু’টি মেরামত করতে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার মতো খরচ হবে বলেও তখন সরকারি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তবে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর কর্মকর্তারা এখন জানাচ্ছেন, স্টেশন সংস্কারে এত বিপুল অর্থের প্রয়োজন পড়বে না।
গত ১৯শে জুলাইয়ের হামলায় মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশনে অবকাঠামোগত যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটি পূরণে প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে জানিয়েছিল ডিএমটিসিএল।
কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর এখন জানা যাচ্ছে, স্টেশনটি সংস্কারে ১ কোটি টাকাও খরচ হচ্ছে না। ডিএমটিসিএলের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, স্টেশনটি ঠিকঠাক করতে আপাতত আমাদের খুব মিনিমাম একটা অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তবে সেটা কোটির ঘরে যাবে না, কোটির মধ্যেই থাকবে।
অন্যদিকে, মিরপুর ১০ স্টেশনের যেসব যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে, সেগুলো আমদানি করতে হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আনতে বেশ কয়েক মাস সময় যেমন লাগবে, তেমনি বেশ খরচেরও প্রয়োজন হবে। তবে ঠিক কত টাকা ব্যয় হতে পারে, সেটির চূড়ান্ত হিসাব এখনও নির্ধারিত হয়নি।
মূলত আমদানির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে স্থানীয়ভাবে যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও উপকরণ সংগ্রহ করে কাজীপাড়া স্টেশনের সংস্কার কাজ করার কারণে খরচ একেবারে কমে গেছে বলে জানিয়েছেন শীর্ষ কর্মকর্তারা।
ডিএমটিসিএলে নতুন এমডি জানান, মেট্রোরেলের যাত্রীদের একটি বড় অংশ কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশন থেকে উঠতেন। ওইসব যাত্রীদের কথা বিবেচনা করেই আমরা সিস্টেমের কিছু জিনিস আমরা লোকাল প্রকিউরমেন্ট করেছি এবং সেগুলো দিয়েই যতটা সম্ভব দ্রুত কাজীপাড়া স্টেশনটি চালু করছি।
তবে এক্ষেত্রে ডিএমটিসিএলের সংগ্রহে থাকা যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামই বেশিরভাগই ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আবদুর রউফ বলেন, আমাদের ডিপোতে কিছু জিনিস ছিল, সেগুলো আমরা ব্যবহার করছি। আবার মিরপুর ১০ স্টেশনে যেসব যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক করে ব্যবহার করা সম্ভব, সেগুলো কাজীপাড়ায় কাজে লাগানো হচ্ছে।
ফলে খরচ কমলেও যাত্রীসেবার মানে সেটার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেই আশা করছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।
ওআ/
খবরটি শেয়ার করুন