spot_img
24 C
Dhaka

১লা এপ্রিল, ২০২৩ইং, ১৮ই চৈত্র, ১৪২৯বাংলা

৬টি কাজ করলে বাংলাদেশও পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে

- Advertisement -

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর ডটকম: বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। তা সত্ত্বেও পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবছরই এ নিয়ে লঙ্কা কাণ্ড ঘটে যাচ্ছে। অথচ সামান্য কিছু বিষয় মাথায় রাখলেই এই সমস্যা থেকে সরে আসা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মাত্র ৬টি কাজ করলে ছয় বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের পেঁয়াজের চাহিদার শতভাগ দেশেই মেটানো সম্ভব।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ৩০ লাখ মেট্রিক টনের মতো। কিন্তু চলতি বছর মোট ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্য থেকে গড়ে ২৫-৩০ শতাংশ নষ্ট হওয়ায় মোট উৎপাদন দাঁড়ায় ১৮ থেকে ১৯ লাখ টন। বাকি প্রায় ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মোট চাহিদার পুরোটা মেটাতে হলে অন্তত ৩৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশেই উৎপাদন করতে হবে। এ থেকে নষ্ট হওয়ার অংশটা বাদ দিলে যা থাকে, তাতে দেশের পুরো চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে ছয় কারণে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারছে না। এগুলো দূর করা গেলে পেঁয়াজের চাহিদার শতভাগ পূরণ করা সম্ভব হবে।

পেঁয়াজের বিষয়গুলো দেখভাল করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার। তিনি জানান, পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে এবং কৃষকরাও এতে আগ্রহী। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

এ ক্ষেত্রে প্রধান ছয়টি কারণ চিহ্নিত করে তা কীভাবে সমাধান করা যায়, সে বিষয়েও কিছু পরামর্শ দিয়েছেন শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার। সেগুলো হলো-

১. পেঁয়াজের ভালো ও উন্নতমানের বীজের অভাব।

২. সমন্বিত চাষাবাদের অভাব।

৩. দামের উঠানামায় কৃষকের ক্ষতি।

৪. পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাব।

৫. গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন বেশি।

৬. চরের বিস্তীর্ণ জমি পেঁয়াজ চাষে অন্তর্ভুক্ত করতে না পারা।

পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধিতে যেসব পরামর্শ দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে- প্রতিবছর দেশে ১১০০ টন পেঁয়াজের বীজের প্রয়োজন। কিন্তু সরকারিভাবে ৫-৬ টন, বেসরকারিভাবে ৫০-৬০ টন এবং বাকিটা কৃষকেরা উৎপাদন করেন। ফলে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে বীজের উৎপাদন ও সংরক্ষণ বাড়াতে হবে।

সমন্বিত চাষাবাদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, দেশের ২ লক্ষ ৩৭ হাজার জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়। চাহিদার ঘাটতি ১০ লাখ টন পূরণ করতে বাড়তি জমির প্রয়োজন নেই। ভালো জাতের বীজ এবং উৎপাদন কৌশলে পরিবর্তন এনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হলে ৪-৫ লাখ টন উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

পেঁয়াজের দামের উঠানামার কারণে বিপাকে পড়েন চাষীরা। দাম কম থাকলে লোকসান আর বেশি থাকলে বীজ পেঁয়াজ বিক্রি করে দেন তারা। তাই কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য পেঁয়াজের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ একটি দাম নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। এতে লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর পেঁয়াজ চাষীর সংখ্যা বাড়বে, তাতে ঘাটতিও কমবে।

দেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য কোনো কোল্ড স্টোরেজ নেই। বর্তমানে বাড়িতে দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করায় পেঁয়াজ নষ্টের হার বেশি হয়। মোট চাহিদা মেটাতে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপান করলে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

এখন পর্যন্ত পেঁয়াজের ছয়টি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটিই গ্রীষ্মকালীন। এসব জাত মার্চ মাসে রোপণ করে জুন-জুলাই মাসে এবং আগস্ট মাসে রোপণ করে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ফসল পাওয়া যায়। বারি-৫ সহ এই জাতগুলো চাষের পরিমাণ বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

দেশে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল পেঁয়াজ উৎপাদনে কাজে লাগাতে পারলে বাড়তি চাহিদার ১০ লক্ষ টনের পুরোটা দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব। এ জন্য পেঁয়াজ উৎপাদনের সমস্যাগুলো দ্রুত ও কার্যকরভাবে সমাধান করা জরুরি বলে মনে করেন ড. শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার।

গবেষকরা বলছেন, সব সমস্যা দূর করলে এক বছরের মধ্যই হয়তো ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে না। তবে সঠিক নীতি, পরিকল্পনা ও উদ্যোগের মাধ্যমে ছয় বছরেই পেঁয়াজের ঘাটতি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব।

- Advertisement -

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলো করুন

25,028FansLike
5,000FollowersFollow
12,132SubscribersSubscribe
- Advertisement -

সর্বশেষ