spot_img
23 C
Dhaka

২২শে মার্চ, ২০২৩ইং, ৮ই চৈত্র, ১৪২৯বাংলা

হৃদরোগ থেকে বাঁচার ১১ উপায় : ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

- Advertisement -

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর ডটকম: মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে হার্ট বা হৃদপিণ্ড একটি জরুরী অঙ্গ। হার্টের কর্মক্ষমতার ওপর বেঁচে থাকা, শক্তি, শারীরিক কর্মক্ষমতা, আবেগ অনুভূতি- বলতে গেলে জীবনের সবকিছুই নির্ভরশীল। হার্টের দ্বারা রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পুষ্টি এবং শক্তি সঞ্চালিত হয়, অক্সিজেন সরবরাহ হয় এবং কার্বনডাই অক্সাইড নির্গমন হয়।

অন্য যেকোনো অঙ্গ অকেজো বা নষ্ট হয়ে গেলে শুধু ওই অঙ্গের কার্যের ব্যাঘাত ঘটে, কার্যক্ষমতা লোপ পায়। কিন্তু হৃদপিণ্ড নষ্ট বা বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ মারা যায়। তাই হার্ট ভালো থাকলে একজন মানুষ ভালো থাকবে, হার্ট কার্যক্ষম থাকলে মানুষটিও শক্তিশালী কার্যক্ষম থাকবে।

আবার হার্ট আক্রান্ত হয়ে থাকলে এবং দুর্বল হয়ে পড়লে মানুষটিও দুর্বল হয়ে পড়বে। এর কার্যক্ষমতা কমে গেলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক কার্যক্ষমতা কমে যায়। এই জরুরী অঙ্গটিকে তাই ঠিক রাখতেই হবে এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করতে হবে।

একথাও মনে রাখতে হবে যে, একবার হার্ট আক্রান্ত হয়ে ভালো হয়ে গেলেও সারা জীবন ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হবে এবং সাবধানে নিয়ম অনুযায়ী অন্যান্য রোগের চিকিৎসাসহ নিয়মিত চেকআপ করতে হবে।

প্রবাদ আছে, ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম’। তাই এই অঙ্গটিকে ঠিক রাখার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্নভাবে সংক্রামক ব্যাধির উন্নত চিকিৎসা করার ফলে তা কমতে শুরু করেছে এবং নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে। অপরদিকে অসংক্রামক ব্যাধি বেড়ে চলেছে, তার মধ্যে হৃদরোগ অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

হৃদরোগের কারণ

পারিবারিক হৃদরোগ ইতিহাস, ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপ, অতিরিক্ত ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা এবং অলস জীবনযাত্রা, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা, অতিরিক্ত মদ্যপান।

হৃদরোগ প্রতিরোধের ১১ উপায়

সুস্থ, স্বাভাবিক ও আনন্দপূর্ণ জীবনের জন্য দরকার একটি সুস্থ হৃদযন্ত্র। কিন্তু এ যন্ত্রটিকে সুস্থ রাখাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আধুনিক বিশ্বে জীবনযাত্রার নানামুখী পরিবর্তন, কাজের পরিবেশ সব কিছুই যেন প্রতিনিয়ত হৃদযন্ত্রকে প্রতিকূলতার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। তারপরও হৃদযন্ত্র ভাল রাখতেই হবে। আর তাই সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের কোনও বিকল্প নেই। মোটা দাগে হৃদরোগ থেকে বাঁচার ১০টি টিপস নিম্নে দেওয়া হলো-

* ধূমপান বর্জন: হৃদযন্ত্রের অন্যতম প্রধান শত্রু ধূমপান। ধুমপায়ীদের শরীরে তামাকের নানা রকম বিষাক্ত পদার্থের প্রতিক্রিয়ায় উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনী, শিরার নানা রকম রোগ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। ধূমপান অবশ্যই বর্জনীয়। ধূমপায়ীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন। তামাক পাতা, জর্দা, গুল লাগানো ইত্যাদিও পরিহার করতে হবে।

* স্থূলতা হ্রাস: যথেষ্ট পরিমাণে ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম না করলে শরীরে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এতে হৃদযন্ত্রকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, ফলে অধিক ওজন সম্পন্ন লোকদের উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনী, শিরার নানা রকম রোগ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

* মানসিক ও শারীরিক চাপ থেকে মুক্তি: অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা, ভীতি এবং মানসিক চাপের কারণেও রক্তচাপ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। নিয়মিত বিশ্রাম, সময় মতো ঘুমানো, শরীরকে অতিরিক্ত ক্লান্তি থেকে বিশ্রাম দিতে হবে।

নিজের শখের কাজ করা, নিজ ধর্মের চর্চা করা ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক শান্তি বেশি হবে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ঙ্কর। এজন্য খেলাধুলা, আড্ডা, বইপড়া, যোগব্যায়াম ও ধ্যান হতে পারে চাপ মুক্তির উত্তম দাওয়াই। প্রতি রাতে ভাল ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।

* মদ্যপান পরিহার : অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার করতে হবে। বেশি এ্যালকোহল গ্রহণ মানে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়া। এতে হৃদস্পন্দনেও প্রভাব পড়ে। সুস্বাস্থ্য ও সবল হৃদযন্ত্রের জন্য ধূমপানের মতো মদ্যপানও ছাড়তে হবে।

* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস রোগীদের এ্যাথারোস্কে¬রোসিস বেশি হয়। ফলে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। তাই রোগীদের অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

* ভারসাম্যপূর্ণ ওজন: ওষুধ খেয়ে ওজন কমানো বিপজ্জনক। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওজন কমানোর ওষুধ না খাওয়াই ভালো। স্থূলতায় হৃদরোগ থেকে শুরু করে নানা সমস্যা হতে পারে। ফলে ভারসাম্যপূর্ণ ও সঠিক ওজন বজায় রাখতে মনোযোগী হতে হবে।

* উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: জীবন যাত্রায় পরিবর্তন এনে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত। যত আগে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে, তত আগে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং জটিল রোগ বা প্রতিক্রিয়া হতে রক্ষা পাওয়া যায়।

* নিয়মিত ব্যায়াম: হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য ব্যায়ামের মতো কার্যকর অন্য কোনো পথ নেই। সকাল-সন্ধ্যা হাঁটা চলা, সম্ভব হলে দৌড়ানো, হালকা ব্যায়াম, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার ইত্যাদি। জিমে যেতে হবে এমন নয়। ঘরেই ব্যয়াম করা যায়। তাও না করতে পারলে প্রতিদিন অবশ্যই হাঁটতে হবে।

* অতিরিক্ত লবণ নয় : খাবার লবণে সোডিয়াম থাকে, যা রক্তের জলীয় অংশ বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের আয়তন বেড়ে যায় এবং রক্তচাপও বেড়ে যায়, ফলে হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। তরকারিতে প্রয়োজনীয় লবণের বাইরে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে। অনেকেই খাবারের সঙ্গে কাঁচা লবণ খান। এটা অবশ্যই বর্জন করতে হবে। বেশি লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। এ থেকে হৃদযন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

* চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন : রক্তে উচ্চ চর্বি, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল হলে রক্তনালীর দেয়াল মোটা ও শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে এবং হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।

কম চর্বি ও কম কোলেষ্টেরল যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। খাশি বা গরুর গোসত, কলিজা, মগজ, গিলা, গুর্দা, কম খেতে হবে। কম তেলে রান্না করা খাবার এবং ননী তোলা দুধ, অসম্পৃক্ত চর্বি যেমন সয়াবিন, ক্যানোলা, ভুট্টার তেল অথবা সূর্য্যমুখীর তেল খাওয়া যাবে।

*আঁশযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া: বেশি আশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা ভাল। আটার রুটি এবং সুজি জাতীয় খাবার পরিমাণ মতো খাওয়া ভাল। খাবারের আইটেমে নানা রঙের শাকসবজি ও ফলমূল থাকা বাঞ্ছনীয়। তাজা ফলে প্রচুর আঁশ এবং ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ, এতে ক্যালোরি কম থাকে ও এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বেশি থাকে- সতেজ ও সবল হৃদযন্ত্রের জন্য যা সহায়ক। তেল-চর্বিতে ভরা ফাস্টফুড এড়িয়ে চলতে হবে। দুধ, বাদাম ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে।

সুন্দর জীবনের জন্য সুস্থতা প্রয়োজন। সুস্থতার জন্য সুস্থ হার্টের বিকল্প নেই। আমরা যদি কিছু নিয়ম মেনে চলি তাহলে কঠিন অসুখ হৃদরোগ থেকে অনেকাংশে মুক্তি পেতে পারি।

লেখক: প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

- Advertisement -

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলো করুন

25,028FansLike
5,000FollowersFollow
12,132SubscribersSubscribe
- Advertisement -

সর্বশেষ