নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর ডটকম: মৃৎশিল্প একটি অতি প্রাচীন শিল্প। আবহমান বাংলায় এই মৃৎশিল্পের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে কুমার বা কুম্ভকার। প্রাচীন কাল থেকেই এই শিল্পের সাথে জড়িত হিন্দু ধর্মাবলম্বী পাল সম্প্রদায়ের লোকেরা।
পালরা মাটি দিয়ে কঠোর পরিশ্রমে সুনিপুণ হাতে তৈজসপত্র তৈরির মাধ্যমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। আশির দশকের দিকেও গ্রামের মানুষরা মাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের হাঁড়ি, সরা, কলস, বাসন, বদনা, মুড়ি ভাজার খোলা, কোলা, বাটিসহ মাটির তৈরি জিনিসপত্র গৃহস্থালির নানা কাজে ব্যবহার করতো। আর এসব তৈরি হতো কুমারপল্লীতে।
গাড়ির চাকার মতো একটা চাকা বসানো থাকে কুমারের ঘরের মেঝেতে। গর্ত খুঁড়ে বিশেষ কায়দায় বসানো হয় চাকাটা। চাকার ওপর একটা গোল পাটাতন আছে। তার ওপর বসানো থাকে একতাল কাদা। বাঁশের একটা লাঠি দিয়ে কুমার একবার করে ঘুরিয়ে নেন চাকা। বাকিটা হাতের কাজ।
কলসি, হাঁড়ি, পাতিল, শানকি, মালসা ইত্যাদি নানা রকম জিনিস তৈরি হয় একই কাদা দিয়ে। একেবারে জাত শিল্পীর হাত কুমারদের। নিপুণ হাতে কাদার ওপর ঢেউ খেলিয়ে পাতিলের চেহারা তৈরি করেন। এরপর কুমার ব্যবহার করেন বাঁশের ধারালো চোঁছ।
চোঁছটা ঘুরন্ত পাতিলের গায়ে ধরেন। অপ্রয়োজনীয় কাঁদা কেটে মসৃণ হয় কলস। সবশেষে কলসের নিচের দিকে বাঁশের চোঁছটা ধরেন ছুরির মতো করে। কাদার তাল থেকে কলসটা কেটে আলাদা হয়ে যায়।
কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই। কুমার এবার হাত ঠেকিয়ে ধীরে ধীরে চাকাটা থামিয়ে ফেলেন। তারপর দুহাত দিয়ে আলতো করে ধরেন কলসটাকে। কাটা কলস সাবলীলভাবে উঠে আসে তার হাতে। কুমার সেটা রেখে আসেন রোদে শুকানোর জন্য।
পাতিল রোদে শুকানো হয় দু-তিন দিন। শুকিয়ে সেটা শক্ত-সাদা হয়ে যায়। এরপর রং করে পোড়ানো হয় আগুনে।
পাতিল পোড়ানোর জন্য বিশাল এক চুলা থাকে কুমারের বাড়ির উঠানে। চারপাশে সাজানো হয় শুকনো পাতিলগুলো। তারপর চুলার বড় মুখ দিয়ে জ্বাল দেওয়া হয়। বেশ কয়েক ঘণ্টা পোড়ানোর পর লাল হয়ে আসে পাতিলগুলো। তখন সেগুলো বিক্রির উপযোগী হয়।
তবে প্লাস্টিক ও স্টিলের তৈজসপত্র এখন অনেক সুলভ। অনেক বেশি টেকসই। অন্যদিকে মাটির পাত্র সামান্য আঘাতেই ভেঙে যায়। তাই মানুষ এখন আর আগের মতো মাটির পাত্র ব্যবহার করে না। কুমারদের বেচাবিক্রিও আগের মতো হয় না। তাই বাধ্য হয়ে অনেক কুমার পেশা পরিবর্তন করছেন। দিন দিন ছোট হয়ে আসছে এ দেশের মৃৎশিল্প। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো হারিয়ে যাবে হাজার বছরের পুরোনো এই শিল্প।
আই. কে. জে/