সুখবর রিপোর্ট : বঙ্গোপসাগরের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের লোকসংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। লোকজনের স্বাস্থ্যসেবার জন্য দ্বীপে ১১ বছর আগে ১০ শয্যার একটি সরকারি হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এখনো হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি।
চিকিৎসক ও নার্সদের থাকার আবাসিক ভবনগুলো পড়ে থেকে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। তা ছাড়া, সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করে প্রতিবছর অন্তত ১৫ লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক। ভ্রমণে গিয়ে কোনো পর্যটক দুর্ঘটনা কিংবা বিপদে পড়লে প্রাণ রক্ষার কোনো উপায় নেই।
২০০২ সালে সেন্ট মার্টিনের পশ্চিমপাড়ায় দুই একর জমিতে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দোতলার ১০ শয্যার এই হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। প্রশাসনিক ভবন ও চিকিৎসকের আবাসিক ডরমিটরি নির্মাণ শেষে ২০০৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হলেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি।
এখন ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চিকিৎসক, একজন নার্স ও একজন কর্মচারী দিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগ চালু রাখা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনের পর তিনজন চিকিৎসক, ছয়জন নার্স, দুজন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, দুজন ফার্মাসিস্ট, ছয়জন ওয়ার্ডবয়, চারজন এমএলএসএস, তিনজন আয়া, একজন পিয়ন, একজন স্টোরকিপার, চারজন ঝাড়ুদার নিয়োগ দেওয়া হয়।
কিন্তু কয়েক দিনের মাথায় সবাই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। এরপর শূন্য পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। হাসপাতালে ৭৪ লাখ টাকার একটি জেনারেটর থাকলেও সেটিও অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।
হাসপাতালের একমাত্র চিকিৎসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালটি উদ্বোধনের পর থেকেই কোনো রোগী ভর্তি করা হয়নি। এখন বহির্বিভাগে রোগী দেখে ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল চালু না হওয়ায় ভবন, জেনারেটরসহ অনেক কিছু নষ্ট হতে চলেছে।
সেন্ট মার্টিন ইউপির চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, প্রায় ৩৪ কিলোমিটার দূরে টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নেওয়া দ্বীপের মানুষের পক্ষে এমনিতেই দুরূহ। এখানে স্থানীয় বাসিন্দাসহ প্রায় ১৩ হাজার মানুষের বসবাস।
বর্ষা মৌসুমে এ অবস্থা আরও চরম আকার ধারণ করে। তখন অধিকাংশ সময় টেকনাফের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এই দ্বীপের।
নৌ-অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় কেউ অসুস্থ হলে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। নানা চেষ্টা–তদবির করেও হাসপাতালটি চালু করা যাচ্ছে না। কোনো চিকিৎসক-নার্স হাসপাতালে থাকতে রাজি হন না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া বলেন, ১১ বছর ধরে নামমাত্র ১০ শয্যার একটি হাসপাতাল থাকলেও লোকবল, যন্ত্রপাতি ও ওষুধের কোনো বরাদ্দ নেই।
হাসপাতালের ভবনটিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেবা দেওয়া হচ্ছে। লোকবল নিয়োগ দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে কয়েকবার চিঠি পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।