spot_img
24 C
Dhaka

১লা এপ্রিল, ২০২৩ইং, ১৮ই চৈত্র, ১৪২৯বাংলা

সম্পদের বাটোয়ারা ও ভাগীদার : সুষ্ঠু বন্টনই মানবিক দাবি

- Advertisement -

খোকন কুমার রায়:

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল মাতৃভূমির বিশাল এক রত্নকোষ আমাদের। ইংরেজরা দুশ বছরের শাসনামলে লুটপাট করেছে আর পাকিস্তানিরা করেছে দুই যুগ। তারপরও আমাদের মাতৃভাণ্ডারে রয়ে গেছে অঢেল সম্পদ। কী নেই আমাদের? নদ-নদী, জল, পাহাড়-সাগর, উর্বর জমি, খনিজ, বনজ- এসব সম্পদে এখনো ভরপুর আমাদের মাতৃকোষ। তারপরও কেন মানুষের হাহাকার?

কিছু স্বল্প মেয়াদী হাহাকার থাকে নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগে। যেমনটা বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি। সম্মিলিতভাবে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে আমরা দুর্যোগগুলো পার করি। তারপর সব আগের নিয়মেই চলে।

আমাদের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ হচ্ছে দিন আনে দিন খায় প্রকৃতির। এ অংশটা ক্রমশই শহর কেন্দ্রিক হচ্ছে। এরা ভাগ্যোন্বেষণে দলে দলে গ্রাম থেকে শহরে আসছে এবং রাস্তার পাশে, বস্তিতে, রেলস্টেশনে প্রভৃতি জায়গায় অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবেশে কোনোরকমে বেঁচে থাকছে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ভাগ্য পরিবর্তনে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। জাতীয় দুর্যোগগুলোতে এই শ্রেণীটাকে বাঁচিয়ে রাখতেই সম্মিলিতভাবে আমাদের যুদ্ধ করতে হয় এবং এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

আর রোগজীবাণু সংক্রমণে, মহামারীতে এই শ্রেণীটাই সবচেয়ে বেশি ভোগে। কারণ অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অসচেতনতা ও অপ্রতুল চিকিৎসা। দীর্ঘদিন যাবৎ এই শ্রেণীটা টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে এবং আমরা টিকিয়েও রাখছি। কিন্তু কেন? মানবিক মূল্যবোধ, পরোপকারিতা কিংবা সামাজিক দায়িত্ব বা সরকারি দায়িত্ব বা অন্য কিছু- সে যে কারণেই হোক না কেন।

রাষ্ট্রের নাগরিকদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং এ দায়িত্ব থেকেই সরকার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হচ্ছে সম্পদের উৎকৃষ্ট ব্যবহার ও সুষম বন্টন নিশ্চিত না করতে পারা। কারণ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও উপযুক্ত বন্টনের আগেই এর একটা বড় অংশ ব্যক্তিবিশেষের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে রূপান্তরিত হওয়া এবং বেশিরভাগ অংশ পাচার হয়ে যাওয়া। এ বিষয়ে অসংখ্য প্রমাণ আমরা ইতিমধ্যে পেয়েছি। অনেক দুর্নীতিবাজ ধরা পড়েছে, কেউ কেউ ধরা পড়ার অপেক্ষায় আছে। আবার কেউ কেউ লুণ্ঠিত সম্পদসহ নিজেরাই পাচার হয়ে গেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে আমরা আর কতোদিন এই চোর-পুলিশ খেলবো? কার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবো? এইসব বিশ্বাসঘাতক দুর্নীতিবাজদের জন্যই আমরা ১৭৫৭ সাল হতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পরাধীন ছিলাম এবং নির্যাতনে নিপীড়নে কেটেছে কয়েকশ বছর। এই স্বাধীন বাংলাতেও মীরজাফরদের বংশধরেরা অসুরিক শক্তি নিয়ে টিকে রয়েছে। এরা বাংলার নদ-নদী, জমি, পাহাড়, সাগর, বনজঙ্গল, রাষ্ট্রীয় কোষাগার, কিছুই বাদ দিচ্ছে না লুটপাটে।

এদেরকে উদ্দেশ্য করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে দুর্নীতি করলে কেউ ছাড় পাবে না এবং দানে যারা ভাগ বসাবে তাদের রেহাই নেই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছিন্নমূল ও সুবিধাবঞ্চিত এবং দুর্যোগে ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল এই গোষ্ঠীটাকে পুনর্বাসন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং সকলকে আহ্বান জানিয়েছেন। এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ।

খুব ভালো হয় বস্তিবাসী ও ছিন্নমূল মানুষগুলোকে চিহ্নিত করে যদি কৃষিভিত্তিক আশ্রয়ন প্রকল্পে পুনর্বাসন করা যায় বা “একটি বাড়ি একটি খামার” আদলের প্রকল্প করা যেতে পারে। তাহলে হয়তো এরা খেয়ে পরে সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকবে।

আমরা মাতৃকোষে বহু রত্ন রেখে ভিখারী দশায় থাকতে চাই না। চাই সম্পদের সুষ্ঠু ও বিকল্প ব্যবহার এবং সুষম বন্টন যা ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের আওতার বাইরে থাকবে। আমরা কর্মহীনদের তালিকা করতে চাই না। তাদের জন্য বিকল্প আশ্রয় ও কর্মসংস্থান করতে চাই।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, সুখবর.কম।

- Advertisement -

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলো করুন

25,028FansLike
5,000FollowersFollow
12,132SubscribersSubscribe
- Advertisement -

সর্বশেষ