ব্যারিস্টার সৌমিত্র সরদার পিকলু:: ২০১৯-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যার সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রাচীনতম দলের একটি আওয়ামী লীগ আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন। মানে বাংলাদেশের সংসদীয় শাসনের ইতিহাসে মাত্র প্রথমবারের মতো নির্বাচিত সরকার পরপর তিনবার ক্ষমতায় আসীন। ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বেই এই সফলতা অর্জন সম্ভব হয়েছে।
একটু পিছনের দিকে ফিরে তাকাই বিষয়ের প্রাসংগিকতার কারণে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি অর্থায়নে বিএনপি-জামায়াত দেশব্যাপী পরিকল্পিত নাশকতা চালায়। যদিও তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোরহস্তে তা দমন করেন। এজন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানাই।
বাংলাদেশ এখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে অধিকাংশ কাজ। উন্নয়নের মহাসড়কে আজ বাংলাদেশ। আজ আসলেই ডিজিটাল বাংলাদেশ।
সর্বশেষ ক্যাসিনো কেলেংকারিতে আটক সব রাজনৈতিক কর্মীরা (একজন বাদে) বিভিন্ন দল থেকে যুবলীগে অনুপ্রবেশ করেছে এবং বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকান্ড দিয়ে দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে যা আমাদের জন্য অনেক বেদনাদায়ক ব্যাপার। কিছু ঘটনাবলী আমাদের দৃষ্টিতে খুব সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। ইদানীং জামাত, বিএনপিপন্থী কর্মী-সমর্থক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যে হারে অনুপ্রবেশ করেছে তা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। আওয়ামী লীগের এই সুসময়ে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে প্রাক্তন ছাত্রলীগ ছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনো নিরাপদ নয়। হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসারা দলের জন্য কখনও নিরাপদ নয়। বর্তমানে প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা দলের ভিতর শুদ্ধিকরণ অভিযান চালাচ্ছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়। অতীতে বাংলাদেশের কোনো দলপ্রধান এমন উদ্যোগ নেননি।
সামনে ডিসেম্বরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। দুর্দিনের নেতা-কর্মীরা আশায় বুক বেঁধেছেন যে এবার তারা মূল্যায়িত হবেন। অতীতে ছাত্রলীগ করেননি এমন কোনো লোককে আওয়ামী লীগসহ এর অন্যান্য সহযোগী সংগঠনে কোনো পদে বসানো মানে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বৈ কিছু নয়। যার সাক্ষাৎ প্রমাণ আমরা পেয়েছি। আমি মনে করি, যারা জেনে-শুনে নেত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে আর্থিক সুবিধা নিয়ে এইসব সুবিধাবাদী অনুপ্রবেশকারীদের আওয়ামী লীগে স্থান দেয় তারাই মূল কালপ্রিট। এদের চিহ্নিত করে শ্রীঘ্র ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আজ আতংকিত এই অনুপ্রবেশকারীদের দাপটে। তবে দমে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এরা মধু লুটতে দলে ভিড়েছে, আর আমরা ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ এই স্লোগানের যাদুতে আওয়ামী লীগ করছি। নিষ্কাম কর্ম।
প্রশ্ন আসতে পারে, কেউ জামায়াত-শিবির করে কোনোদিন কি আওয়ামী লীগে যোগদান করতে পারবেন না? উত্তরে বলা যায়… ‘না’। কেননা যারা এতদিন একটি চরম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা করেছেন তারা হঠাৎ করে সম্পূর্ণ প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি দলে ভিড়েছেন কোন মোটিভ নিয়ে তা ট্রিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন।।।
জামায়াত, বিএনপি নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে ভিড়ে দলের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়ন করবে না তার গ্যারান্টি কি কেউ দিতে পারবে???
আমাদের বুঝতে হবে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রীর উপর হামলা হয়েছে কম করে হলেও ১৭/১৮ বার। তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই হামলা ছিল। তিনি বেঁচে গেছেন সবার ভালোবাসায়। প্রতিবার প্রিয় নেত্রী বেঁচে গেছেন। আমরা চাই তিনি বেঁচে থাকুন। তিনি সফল বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। সময় থাকতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তির অবাঞ্ছিত অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। সাধু সাবধান।
একটি বাংলা প্রবাদ আছে “সাবধানের মার নেই”।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী।