ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: সম্প্রতি কোভিডের কঠোর বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার পরপরই কোভিডের সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করে চীনে। এ পরিস্থিতিতে কোভিড আক্রান্ত হলেও চীনা চিকিৎসক এবং নার্সদের তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বেইজিংয়ের এক চিকিৎসক জানান, বেইজিংয়ের অনেক হাসপাতালের ৮০% কর্মীই কোভিড সংক্রমণের শিকার। কিন্তু কর্মী ঘাটতির কারণে তাদেরকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ চিকিৎসক জানান, গুরুতর প্রয়োজন ছাড়া হাসপাতালের সমস্ত অপারেশন এবং সার্জারি বাতিল করা হয়েছে।
গত বুধবার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কঠোর বিধিনিষেধের কারণে জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি হলে হুট করেই বেইজিংয়ের প্রধান শহরগুলোতে নিষেধ তুলে নেওয়ার ফলে প্রচুর পরিমাণে সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে। তবে ঠিক কয়জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়, যেহেতু সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনা যাচ্ছে না।
গত বুধবার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিভাগের প্রধান, মাইকেল রায়ান জানান, শূন্য কোভিড বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার অনেক আগে থেকেই চীনে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা উর্ধ্বেই ছিল। তবে এ বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর হঠাৎ করেই আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে।
সিচুয়ানে, লি নামের একজন ডাক্তার জানান, তাদের হাসপাতাল রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ৭০০-৮০০ জন জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বর এবং সর্দির জন্য হাসপাতালের ওষুধও শেষের দিকে। কয়েকজন রোগীকে পরীক্ষা করলে তারা কোভিড আক্রান্ত বলে জানা যায়। কিন্তু হাসপাতালের কর্মীদের জন্য কোন ধরনের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি। তাই অতি শীঘ্রই তাদের মাঝেও করোনা সংক্রমণের আশংকা থেকেই যায়।
চংকিং-এর এক বাসিন্দা জানান, তাদের শহরে সংক্রমণের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। এমন একটি প্রত্যন্ত শহরের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের ৮০% ই কোভিড আক্রান্ত। গত ৮ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালের প্রায় অর্ধেক কর্মীই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে।
এ কোভিড প্রাদুর্ভাব কেবল বেইজিংয়েই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
চংকিংয়ের এক বাসিন্দা জানান, এখানকার স্কুলের প্রায় সব শিক্ষকই করোনা আক্রান্ত এবং অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদিকে ঝেংঝুতে ঘরে বসে ব্যবসার কাজ করতে হচ্ছে।
গুয়াংজুর এক বাসিন্দা জানান, এখানকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং রেস্টুরেন্ট খোলা থাকলেও সেখানে লোকেদের আনাগোনা নেই। জ্বর আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি হাসপাতালের হটলাইনে ফোন করলে, সেখান থেকে কোনও ধরনের সাহায্য পাননি।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের মুখপাত্র জন কিরবি জানান, এ সংকটকালীন সময়ে বেইজিং অনুরোধ করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত। তবে এখন পর্যন্ত বেইজি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কোনও ধরনের সাহায্য চায়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, চীনের ১৪ কোটি মানুষকে এখনো পর্যাপ্তভাবে টিকা দেওয়া হয়নি।
তবে চীন জানায়, তাদের প্রায় ৯০% নাগরিকদের টিকা প্রদান করা হয়েছে। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) গত বুধবার জানান, ৬০ বছর ও তার বেশি বয়স্ক লোকেদের জন্য দ্বিতীয় বুস্টার ডোজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এনএইচসি থেকে টিকা প্রদানের সংখ্যা সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায় গত মঙ্গলবার, ১৪.৩ লাখ টিকা প্রদান করা হয়েছে।
আই.কে.জে/