ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চীনের ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণের মধ্যেই চীনা নেতা শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক চলমান।
পুতিন তার উদ্বোধনী বক্তব্যে, শি-কে আগামী বসন্তে মস্কো সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি আরো বলেন যে দুই দেশ তাদের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করবে এবং প্রতিকূল বাজার পরিস্থিতি সত্ত্বেও বাণিজ্য বৃদ্ধির দিকেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
শিও তার উদ্বোধনী বক্তব্যে কঠিন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে, চীন রাশিয়ার সাথে রাজনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে এবং রাশিয়ার সাথে বৈশ্বিক অংশীদার হতে প্রস্তুত বলে জানান।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মস্কো এবং বেইজিং কাছাকাছি এসেছে।
তাই চীন রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করতে অস্বীকার করেছে এবং এর পরিবর্তে বারবার ন্যাটো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর সংঘাতের জন্য দোষ চাপিয়েছে। সারা বিশ্বের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও চীন রাশিয়ার পক্ষ নেওয়া ছাড়েনি।
কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রায় ১০ মাস ধরে চলমান এবং এ কয়মাসে অনেক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। চীনের আচরণেও পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে।
প্রত্যাশিত দ্রুত বিজয়ের পরিবর্তে, মৌলিক সরঞ্জামের অভাব ও যুদ্ধক্ষেত্রের নানা প্রতিকূলতার কারণে পুতিনের আক্রমণ ব্যর্থ হচ্ছে। রাশিয়ার অনেক বেসামরিক ব্যক্তি তীব্র শীতের সময়ে অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ শুরু করেছে, যার ফলে ইউক্রেনের অনেক গ্রাম ও শহর বিধ্বস্ত হয়েছে, বেসামরিক অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে এবং অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বেশ কয়েকদিন ধরেই ধারণা করছিলেন যে রাশিয়া তাদের বিদ্যুৎ বন্ধ করার জন্য পাওয়ার গ্রিডের উপর সর্বাত্মক আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক স্টিমসন সেন্টারের চায়না প্রোগ্রামের পরিচালক ইউন সান বলেছেন, চীন যুদ্ধ শেষের ব্যাপারে আগ্রহী।
শি পুতিনের কাছে শান্তি আলোচনার ব্যাপারটি তুলে ধরবেন। যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রগতি না থাকার কারণে রাশিয়া যেহেতু এখন অধৈর্য হয়ে উঠেছে, তাই এখনই শান্তি আলোচনার জন্য উপযুক্ত সময়।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির লি কুয়ান ইউ স্কুল অফ পাবলিক পলিসির সহযোগী অধ্যাপক আলফ্রেড উ বলেছেন, চীনও রাশিয়ার প্রতি সহযোগিতামূলক অবস্থানের জন্য আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
রাশিয়ার যুদ্ধের প্রতি কঠোর মনোভাবের উদাহরণ হিসেবে উ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ইঙ্গিত করেছেন।
যদিও ভারত মস্কোর আক্রমণকে সরাসরি নিন্দা করেনি, তবুও মোদি সেপ্টেম্বরে পুতিনকে বলেছিলেন যে এখন যুদ্ধের সময় নয় এবং তাকে শান্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।
গত সেপ্টেম্বরে, পুতিনের সাথে শিয়ের উজবেকিস্তানে একটি আঞ্চলিক শীর্ষ সম্মেলনে শেষ দেখা হয়। তখন পুতিন জানিয়েছিলেন যে, ইউক্রেনে আগ্রাসন নিয়ে শিয়ের মনে অনেক প্রশ্ন ও উদ্বেগ রয়েছে। ফলে দুই নেতার মধ্যে মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের দাবি, চীনের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও কয়েক মাস ধরে পরিবর্তনশীল। যার কারণে শি পুতিনের প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
দেশটি বর্তমানে তার কঠোর শূন্য-কোভিড নীতি পরিত্যাগ, নিয়ম-কানুনের শিথিলতা এবং সীমান্ত আংশিকভাবে পুনরায় খোলার পরে, সবচেয়ে খারাপ কোভিড প্রাদুর্ভাবের সাথে লড়াই করছে।
এই সংকটের কেন্দ্রে রয়েছে শি, যিনি অক্টোবরে তৃতীয় মেয়াদে তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
স্টিমসন সেন্টারের সান বলেছেন, এখন অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি বাদ দিয়ে, শি রাশিয়াতে কাজ করার জন্য আরও ভাল অবস্থানে রয়েছে।
যুদ্ধের অজনপ্রিয়তা সত্ত্বেও, চীন এবং রাশিয়া ভূরাজনৈতিক কারণে একত্রিত হয়েছে। উভয় দেশই পশ্চিমাদের সাথে বিতর্কের সম্মুখীন হয় এবং দুই নেতা প্রায়ই নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য একটি যৌথ দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলে থাকেন।
উও স্বীকার করেছেন যে সম্পর্কটি উভয় দেশের জন্যই মৌলিক। ইউক্রেন অবশ্য ইঙ্গিত করছে যে যুদ্ধের কারণে চীন রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানির সুযোগ লাভ করেছে।
তবে চীনের কোভিড প্রাদুর্ভাব এবং অর্থনৈতিক মন্দার জন্য শি বর্তমানে দুর্বল অবস্থানে রয়েছেন। যার অর্থ হলো রাশিয়ার প্রতি তার সমর্থন আগের মতো জোরদার নাও হতে পারে।
শি জিনপিং রাশিয়াকে সমর্থন করার জন্য যে নীতি সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করেছিলেন তা এখন বেশ সীমিত।
আইকেজে /