ডেস্ক নিউজ, সুখবর ডটকম: রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের পণ্য নিয়ে আসছিল রাশিয়ার জাহাজ ‘উরসা মেজর’। কিন্তু ওই জাহাজের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেটিকে বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ঢাকার এই অবস্থানকে ‘একদম গ্রহণযোগ্য নয়’—এমন বার্তা দিয়েছে মস্কো। তবে রাশিয়ার প্রস্তাব গ্রহণ না করে জাহাজটিকে দেশে ফেরত যেতে বলেছে সরকার। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্রগুলো বলছে, নিষেধাজ্ঞা থাকা জাহাজ দেশে প্রবেশ করতে দিলে সেই দেশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। সেদিক থেকে সরকারের অবস্থান যুক্তিযুক্ত।
সূত্রের তথ্য মতে, গত ২৪ ডিসেম্বর রূপপুর প্রকল্পের পণ্য নিয়ে উরসা মেজরের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু তার দুই দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশকে ওই জাহাজের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানানো হয়। এ বিষয়ে ‘বিব্রত বোধ’ করছে ঢাকা— এমনটি উল্লেখ করে ওই জাহাজ না ঢোকার সিদ্ধান্তের কথা রাশিয়াকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর রাশিয়ান দূতাবাস থেকে একটি কূটনৈতিক পত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ জানানো হয়। পাল্টা জবাবে অবস্থান পরিবর্তন না করার বিষয়টিও মস্কোকে জানিয়ে দেয় ঢাকা।
গত ২২ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব মো. খোরশেদ আলমের সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কির আলোচনা হয় এবং তাকে ঢাকার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে একটি সূত্র জানায়, ‘আমরা বিব্রত। নিষেধাজ্ঞা আছে; এমন একটি জাহাজে রাশিয়া পণ্য পাঠাবে, এটি আমরা আশা করিনি।’
জানা যায়, অক্টোবরে ওই পণ্য মোংলা বন্দরে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের অনুমতি চায় রাশিয়া। তখন তারা জানিয়েছিল যে পণ্যবাহী জাহাজের নাম ‘স্পার্টা-৩’। কিন্তু ওই জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা একই জাহাজের নাম পরিবর্তন করে এবং নতুন নাম দেয় ‘উরসা মেজর’। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি জাহাজের একটি নম্বর থাকে, যেটি তারা পরিবর্তন করেনি। ফলে বিষয়টি ধরা পড়ে যায়।
এ বিষয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা বিষয়টি আইনগত। মার্কিন আইন অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে— এমন জাহাজ ব্যবহার করা করা হলে যারা করবে, তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। এটি কিছুটা ঝুঁকিরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’
বাংলাদেশের অবস্থান যুক্তিযুক্ত-
বাংলাদেশের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা এবং এজন্য যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া বা অন্য কোনও শক্তির শক্ত অনুরোধও অনেক সময় পাশ কাটিয়ে যায় ঢাকা।
এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য বা কর্মকাণ্ড দেখে অনেকে মনে করতে পারে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন বা পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ঢাকা। কিন্তু বিষয়টি সেরকম নয়। সরকার জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এটি অনেক ক্ষেত্রে অন্য দেশগুলোর মতের সঙ্গে মিল নাও থাকতে পারে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে ঠিক এই জিনিসটাই ঘটেছে।’
বাংলাদেশের সংগে ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকলেও জাতীয় স্বার্থে ছাড় না দেওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দেশের নিজস্ব কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সার্বভৌমত্ব (স্ট্র্যাটেজিক সভরেইনটি) থাকে। রাশিয়ার এই ঘটনা প্রমাণ করে যে স্ট্র্যাটেজিক সভরেইনটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতা অনেক বেশি।’
এম এইচ/ আইকেজে /
আরও পড়ুন:
ব্রাজিলের রাজধানীতে আপাতত বন্দুক নয়: সুপ্রিম কোর্ট