ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: বিশ্বে প্রথম করোনার ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে, রাশিয়ায় করোনার টিকা অনুমোদনের খবরে বিশ্বজুড়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল মঙ্গলবার বলেন, তার এক মেয়ের শরীরে এরই মধ্যে টিকাটি প্রয়োগ করা হয়েছে। পুতিন বলেন, আজ (গতকাল) সকালে বিশ্বে প্রথমবারের মতো নতুন করোনার একটি টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমি জানি, এটি অত্যন্ত কার্যকর। এটি টেকসই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম। মেয়ে টিকাটি গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে পুতিন বলেন, ‘সে টিকার পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। টিকাটির দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের পর তার হালকা জ্বর এসেছিল। (পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলতে) এটুকুই।’
রাশিয়ার বিনিয়োগ তহবিল রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ) টিকা উদ্ভাবন কার্যক্রমে অর্থায়ন ও সমন্বয় করেছে। এই সংস্থার প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, টিকাটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা আজ বুধবার শুরু হবে। এই ধাপে বড় সংখ্যায় স্বেচ্ছাসেবীরা অংশ নেবেন। তিনি আরও বলেন, টিকার ব্যাপক উৎপাদন শুরু হবে সেপ্টেম্বর থেকে। ২০টি দেশ এরই মধ্যে ১০ কোটি ডোজের বেশি টিকা সরবরাহের প্রাথমিক ‘আবেদন’ দিয়ে রেখেছে।
তবে রাশিয়ার অনুমোদিত করোনার এই টিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। অন্যান্য দেশের গবেষকেরা বলছেন, যে দ্রুততায় টিকাটি উদ্ভাবন করা হয়েছে, তাতে এটা নিশ্চিত যে রুশ গবেষকেরা তাড়াহুড়ো করেছেন। শুধু তা-ই নয়, এই টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার খসড়া তালিকায়ও নেই।
তবে রাশিয়ার এই টিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংশয়ে রয়েছে। খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, তারা টিকাটির ব্যাপারে খুঁটিনাটি পর্যালোচনা না করে অনুমোদনই দেবে না। জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র তারিক জানারেভিচ বলেন, ‘আমরা রুশ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ ও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার খসড়া তালিকায় নেই রাশিয়ার এই টিকা। গত সোমবার পর্যন্ত হালনাগাদকৃত এই খসড়া তালিকায় ১৬৭টি সম্ভাব্য টিকার নাম রয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি টিকা মানবদেহে পরীক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। বাকিগুলো এখনো উদ্ভাবন পর্যায়ে রয়েছে। ওই ২৮টি টিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা। এ ছাড়া চীনের সিনোভ্যাক, যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না ও ফাইজার, জার্মানির বায়োএনটেকের টিকাগুলোও আলোচনায় রয়েছে। এই টিকাগুলো মানবদেহে পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে রয়েছে।
বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের সতর্কতা
টাইমের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন যে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার আগেই কোনো টিকা গণহারে প্রয়োগ হিতে বিপরীত হতে পারে। তাদের আশঙ্কা, রুশ বিজ্ঞানীরা হয়তো কর্তৃপক্ষের চাপে পড়ে টিকা উদ্ভাবনের ধাপগুলো কমিয়ে এনেছেন। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার আগেই টিকাটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। তা ছাড়া টিকাটি নিয়ে কোনো পরীক্ষার ফলাফলও কোনো সুপরিচিত সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়নি।
উল্লেখ্য, গত মাসে রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারা আগস্টেই বিশ্বের প্রথম করোনার টিকা উদ্ভাবনে সক্ষম হবেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার টিকাটির প্রাথমিক ধাপের পরীক্ষা সফল হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এটি মূলত সাধারণ সর্দি–কাশি সৃষ্টিকারী অ্যাডেনোভাইরাস থেকে তৈরি করা হয়, যা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী সক্ষমতা দেখাতে পারে।
প্রথম দিনেই বাজিমাত রাশিয়ার ভ্যাকসিনের!
এই ভ্যাকসিনটির প্রথম ডোজ নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কন্যা। টিকার সফলতার কথা শুনে বিশ্বের অনেক দেশ ইতিমধ্যে রাশিয়া থেকে টিকা নিতে ইচ্ছুক হয়েছে। যার দরুণ ২০টি দেশ থেকে ১০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের অর্ডার পেয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার ডাইরেক্ট ইনভেসমেন্ট ফান্ডের (আরডিআইএফ) প্রধান ক্যারিল দিমিত্রিভ এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গামালিয়া গবেষণা ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি কর্তৃক উৎপাদিত করোনা ভ্যাকসিনের জন্য রাশিয়া ২০টি দেশ থেকে এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) ভ্যাকসিন ডোজ অর্ডারের অনুরোধ পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গামালিয়া গবেষণা ইন্সটিটিউট কর্তৃক উৎপাদিত রাশিয়ান ভ্যাকসিনের জন্য আমরা বিদেশে থেকে প্রচুর পরিমাণে আগ্রহ পেয়েছি। এরই মধ্যে আমরা ২০টি দেশ থেকে এক বিলিয়নের বেশি ভ্যাকসিনের ডোজ কেনার প্রাথমিক অনুরোধ পেয়েছি। আমরা এমন পাঁচটি দেশের সাথে অংশীদারত্ব বিষয় নিয়ে কথা বলছি যারা ৫০০ মিলিয়নের বেশি ভ্যাকসিনের ডোজ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারবে। সেই সাথে আমরা আরও পরিকল্পনা করছি যে কিভাবে আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা আরো বেশি বাড়ানো যায়।
দিমিত্রিভের মতে, আজ পর্যন্ত লাতিন আমেরিকার কিছু দেশ, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ ভ্যাকসিন কেনার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। তারমধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি চূড়ান্তও হয়েছে।
তিনি সম্মেলনে বলেন, বিশ্বের সব দেশের জনগণ যেন করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিনের সমান অধিকার পায় সে জন্য আরডিআইএফ এবং অংশীদাররা বেশ কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি মানবিক সহায়তা কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে।