ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫১ বছর পর এসেও পাকিস্তানি সরকারি কর্মকর্তারা অতীত ইতিহাসকে লুকাতে চায়। তাদের নিজেদের অন্যায়কে ঢাকতে তারা ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানোর চেষ্টা করে।
৫১ বছর আগে ঘটে যাওয়া এ যুদ্ধের বিভীষিকা এখনো মানুষ ভুলতে পারেনি, আবার এ যুদ্ধের ইতিহাস এতোটা বেদনাদায়ক যে যুদ্ধের দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আজও মানুষ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠে। কিন্তু পাকিস্তান এ যুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করতে, সত্যকে আড়াল করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। রাষ্ট্র সমর্থিত পাঠ্যপুস্তক, সামরিক স্মৃতি ও জাদুঘরকে ব্যবহার করে পাকিস্তান অতীত ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাইছে।
‘১৯৭১ সালে মূলত পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে অন্যায় হয়েছে এবং ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের ফলে ভারত পাকিস্তানকে ভাগ করে এর প্রতিশোধ নিয়েছে’– পাকিস্তানিরা এই বিকৃত তথ্যগুলোই প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
পাকিস্তানিদের কাছে ১৯৭১ সাল হলো পাকিস্তানি নির্বাচনী সংস্থার করা অন্যায়ের ফল। যুদ্ধে রক্তপাতের কথা তারা স্বীকার করে কিন্তু যুদ্ধের সময় বাঙালি ও সংখ্যালঘুদের উপর হওয়া সহিংসতার কথা আজও তারা অস্বীকার করে।
পাকিস্তানি পাঠ্যপুস্তকগুলোতে বাঙালিদের উপর হওয়া অত্যাচারের কোনও উল্লেখ নেই। পুরো যুদ্ধ এবং যুদ্ধের পেছনের ইতিহাসকে কয়েকটি লাইনে শুধু সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। ১৯৭১ এর মূলধারার কথাও এখানে সীমিত।
পাকিস্তানের প্রাক্তন সেনাপ্রধান তার এক বক্তৃতায় ১৯৭১ সালের উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর সাহসিকতার প্রশংসা করেন। তার মতে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ মূলত সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতা। সামরিক বাহিনি তখন রাজনৈতিক নেতৃত্বে ছিল।
যুদ্ধের ৫০ বছর পর এসেও পাকিস্তানি কোনও সেনাপ্রধান এ ঘটনার জন্য জবাবদিহি করেননি।
অথচ তারা তখন বাঙালিদের বাংলাকে অন্যতম প্রধান ভাষা করার দাবিকে উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিটিতে সম্মতি জানিয়েছিল। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রতিবাদকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করা হয় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। মূলত ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান জন্মের পর পাকিস্তানি সরকার ও সেনাপ্রধানরা বাঙালিদেরকে তাদের দেশের নাগরিক হিসেবেই ‘অযোগ্য’ ভেবেছিলেন।
১৯৫৬ সালে অবশ্য নবগঠিত ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের অধীনে বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। কিন্তু পাকিস্তানিদের পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর অহেতুক অত্যাচার এবং বাঙালিদের পাকিস্তানিদের উচ্ছৃঙ্খলতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ একটি নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছিল।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যা বিশ্বের ইতিহাসে অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটি ঘটনা, এই একটি ঘটনাই পাকিস্তানের মানহানির কারণ হতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কেউ এ ঘটনা স্বীকার করেনি। অথচ জেনারেল টিক্কা খান ও জেনারেল নিয়াজীর নেতৃত্বে ত্রিশ লাখ বাঙালি শহীদ ও চার লাখ মা-বোন সম্ভ্রমহানির শিকার হন।
আই.কে.জে/