নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর ডটকম: প্রকৃতিতে যখন মাঘের হাওয়ার শীতের কাঁপন, তখন শীত ভেদ করে পাতার ফাঁকে ফাঁকে দেখা মিলছে আমের সোনালি মুকুল। ইতিমধ্যে মৌ মৌ ঘ্রাণ ছড়াতেও শুরু করেছে প্রকৃতিতে। রোদ-কুয়াশার লুকোচুরির মধ্যেই আমের বাগানে সোনালি মুকুল প্রস্ফুটিত হচ্ছে। এরই মধ্যে চাষি ও বাগান মালিকরা বাগান পরিচর্যায় নেমে পড়েছেন। এবার অনেক গাছে আগাম মুকুলের দেখা মিলছে।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মৌসুম শুরুর আগে গাছে মুকুল আসা তেমন ভালো নয়। কারণ আগেভাগে মুকুল আসায় কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বরগুনার চান্দখালী, লাকুরতলা, বুড়িরচর, সোনাখালী, কোটবাড়িয়া, আদম দরবার এলাকায় অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট আম গাছে মুকুল আসতে শুরু হয়েছে। কিছু কিছু গাছ মুকুলে ছেয়ে গেছে। সোনারাঙা সেই মুকুলের সৌরভ ছড়াচ্ছে বাতাসে। প্রজাপতি, মৌমাছি মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে মুকুল আসা শুরুর পর থেকেই বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বাগানের মালিক, চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
আম চাষি ও বাগান মালিকরা বলছেন, মাঘের মাঝামাঝিতে গাছে মুকুল দেখে তারা বুঝছেন, আমের মৌসুম এসে গেছে। বাগানের গাছগুলোর যত্ন নিতে পরিশ্রম শুরু করে দিয়েছেন। ভালো ফলনের আশায় জোরেশোরে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার গাছগুলোতে মুকুলের সমারোহ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। বড় ধরনের কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এবারও আমের বাম্পার ফলন হবে।
বরগুনা অঞ্চলে ১৫ থেকে ২০ জাতের আম চাষ হয়ে থাকে। আর সারা বাংলাদেশে রয়েছে ২৫০ জাতের। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফজলী, গোপাল ভোগ, মোহন ভোগ, ল্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত, হিমসাগর, কৃষাণ ভোগ, মল্লিকা, লক্ষণা, আম্রপলি, দুধসর, দুধকলম, বিন্দাবনী, আরজান, রাণী পসন, মিশ্রীদানা, সিঁন্দুরী, আশ্বিনা সেই সঙ্গে নানা প্রকার গুটি আম।
কৃষি বিভাগ বলছে, এবার শেষ সময়ে শীতের প্রকোপ থাকার পরেও আমের মুকুল এসেছে। তাদের ভাষ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ এলাকায় কিছু কিছু গাছে আগাম মুকুলের দেখা মিলেছে। ফাল্গুনের শুরুতেই এবার শতভাগ গাছেই প্রস্ফুটিত হবে মুকুল। আর এক সপ্তাহের মধ্যে পাল্টে যাবে আম বাগানের চেহারা। তখন গাছে গাছে দেখা মিলবে শুধু মুকুল আর মুকুল। সোনালি মুকুলের সুবাসিত গন্ধে মুখরিত হবে বরগুনা। তার আভাস এখনই পাওয়া যাচ্ছে বরগুনার প্রকৃতিতে। তাই আম প্রধান এই অঞ্চলের মানুষের এখনই সময় কাটতে শুরু করেছে আম গাছ ও মুকুলের যত্নআত্তি নিয়েই।
এদিকে এরইমধ্যে মুকুলের উঁকিতে গাছে গাছে প্রজাতির, মৌমাছির গুঞ্জন শুরু হয়েছে। মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ যেন জাদুর মতো কাছে টানছে তাদের। গাছের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় তাই চলছে মৌমাছি আর ভ্রমরের সুর-ব্যঞ্জনা। বছর ঘুরে আবারও তাই ব্যাকুল হয়ে উঠেছে আম চাষিদের মন।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও চাষ হয়ে থাকে নানা জাতের আম। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই আম চাষের জমি বাড়ছে বরগুনায়। কৃষি বিভাগ জানায়, আমের ফলন নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন বাগান মালিকরাও।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, এখনও পুরোদমে গাছে মুকুল আসেনি। তবে কিছু কিছু গাছে এসেছে। এ সময় পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আমাদের সাধারণ চাষিদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠান অতি মুনাফার লোভে অতিরিক্ত রাসায়নিক ও হরমোন প্রয়োগ করাচ্ছে। এতে আমের গুণগত মান ঠিক থাকছে না।
এম/ আই. কে. জে/
আরো পড়ুন:
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি ২ মার্চ