ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: ভারতের ঐতিহ্যবাহী এক কুস্তির নাম, নাগা কুস্তি। এ কুস্তিটি অন্যান্য সাধারণ কুস্তির মতো নয়। এ কুস্তিতে একজন কুস্তিগিরকে অবশ্যই প্রতিপক্ষের শরীরের যেকোনও অঙ্গকে মাটি থেকে উপরে তুলে হাঁটুর উপরে আনতে হবে। এ খেলার বিভিন্ন নিয়ম এবং কৌশলগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষদেরকে আকৃষ্ট করে আসছে।
তিন ধরনের নাগা উপজাতি- আঙ্গামি, চাখেসাং এবং জেলিয়াং এ ধরনের কুস্তি খেলে থাকে। তবে সকলের অংশগ্রহণের জন্য বছরের পর বছর ধরে এ কুস্তিখেলাটিকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট রাজ্যের বাইরের মানুষদেরকেও আকৃষ্ট করছে এ খেলা।
গত ৪ নভেম্বর, চাখেসাং ওপেন রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় ভাগ শেষ হয়। তিনটি উপজাতীয় কুস্তিগির ছাড়াও এ প্রতিযোগিতায় দিল্লি ও কর্ণাটকের কুস্তিগিররাও অংশ নিয়েছিল।
এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ব্যাপারে দিল্লির কুস্তিগির সাগর বলেন, ভিডিও দেখে তিনি নাগা কুস্তির ব্যাপারে অনেক কিছুই শিখেছিলেন। কিন্তু এ প্রতিযোগিতায় এসেও তাকে অনেক কিছুই শিখতে হয়েছিল।
এ ব্যাপারে তিনি আরো বলেন যে, এই খেলায়, প্রতিপক্ষের কোমরে বাঁধা কাপড়টি ধরে রাখতে হয় এবং শরীরের নিচের অর্ধেকের উপর এক ফুট দূরত্ব বজায় রেখে হাত বাড়াতে হয়। খেলার সময়কাল ভিন্ন, এবং এই খেলায় আক্রমণের আরও শৈলী রয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীদের শারীরিক গঠন ভিন্ন এবং তারা সমতল ভূমির মানুষদের তুলনায় অধিক শক্তিশালী। তাই তাদের জন্য এই খেলাটি অধিকতর সহজ।
সাগর জানান, তিনি দিল্লিতে ফিরে সবাইকে এই নতুন কুস্তি সম্পর্কে জানাতে চান এবং পরবর্তী প্রতিযোগিতায় আরো ভালো প্রস্তুতি নিয়ে ফিরে আসতে চান।
সাগর আরো বলেন, “কুস্তি আমার রক্তে রয়েছে এবং আমি নাগা কুস্তিসহ বিভিন্ন ধরণের কুস্তি আরও শিখতে চাই। পরের বার আরও ভালো করার চেষ্টা করব। আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য কুস্তিতে পারদর্শী হওয়া এবং আমার দেশের জন্য পদক অর্জন করা।”
সাগরের মতোই, দিল্লির ১৬ বছর বয়সী ঋত্বিকও প্রথমবারের মতো এই নাগা কুস্তি খেলতে এসেছিল। ঋত্বিক এ ব্যাপারে বলে, “আমি নতুন কিছু শিখেছি। যদিও আমি তৃতীয় রাউন্ডেই হেরে গিয়েছি, তবুও আমি নিজেকে নিয়ে গর্বিত কারণ নিয়মকানুন না জেনেই আমি সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে এই নতুন ধরনের কুস্তিটি খেলতে পেরেছি।”
কর্ণাটকের ২৫ বছর বয়সী অতুল সুরেপ শিরোলিও নাগা কুস্তি খেলতে এসেছিলেন। তিনি সারাদেশে এ কুস্তির জনপ্রিয়তা সম্পর্কে জানান।
অতুল একজন শারীরিক প্রশিক্ষক এবং কর্ণাটক রেসলিং ফেডারেশনে শিশুদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি জানান, নাগা কুস্তিতে জিততে হলে প্রতিযোগীর হাত-পায়ের গঠন অনেক শক্তিশালী হতে হয়। তিনি চেষ্টা করবেন এ কুস্তি সম্পর্কে আরো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পরবর্তীতে নাগা কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করার।
দেশীয় এ খেলার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে এ চ্যাম্পিয়নশিপে ৬০ জন কুস্তিগির লড়াই করতে আসেন।
চুমুকেদিমা জেলার অধীনে থাকা মেদজিফেমা থেকে আসা রোকোলাসি কিমহো আসেন এ প্রতিযোগিতা দেখার উদ্দেশ্যে। তিনি এই ঐতিহ্যবাহী কুস্তি প্রতিযোগিতা উপভোগ করার জন্য প্রায় ১১৩ কিলোমিটার অতিক্রম করে আসেন।
তবে এই নাগা কুস্তি কোনও সাধারণ কুস্তি নয়। এ খেলার প্রধান উদ্দেশ্য শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি।
আই. কে. জে/