ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: শহুরে অবকাঠামোসহ জনকেন্দ্রিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনরায় চালু করার জন্য ভারতীয় প্রচেষ্টার আশায় আছে তালেবান।
তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান, সুহেল শাহীন বলেছেন, আফগানিস্তান শহুরে পরিকাঠামোসহ ভারতীয় বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত। সেই সাথে দেশটি ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য একটি শান্তিপূর্ণ কাজের পরিবেশেরও আশ্বাস প্রদান করেছে।
তিনি জানান, ভারতীয়দের নিরাপত্তা প্রদান করা আফগানিস্তানের দায়িত্ব এবং তারা সে দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর। এছাড়া আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লির উদ্যোগে অসমাপ্ত প্রকল্প শেষ করার জন্য দেশে ভারতের কূটনীতিকদেরকেও আহ্বান জানিয়েছে।
গত দুই দশকে, ভারতীয় সরকারি ও বেসরকারি খাতের সংস্থাগুলো প্রধানত আফগানিস্তানের অবকাঠামো খাতে প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে আফগানিস্তানের সাথে ভারতের সম্পৃক্ততার মধ্যে রয়েছে দেশটির ৩৪টি প্রদেশের প্রতিটিতে বিদ্যুৎ, জল সরবরাহ, সড়ক যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, কৃষি এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পাঁচ শতাধিক প্রকল্প।
২০২১ সালে তালেবানের কাবুল দখলের আগে আফগানিস্তানের সমস্ত প্রদেশে ভারতীয় আর্থিক সহায়তায় প্রায় ৪৩৩টি উচ্চ প্রভাবসম্পন্ন কমিউনিটি উন্নয়ন প্রকল্প (এইচআইসিডিপি) সম্পন্ন হয়েছিল।
সম্প্রতি, আফগানিস্তানের নগর উন্নয়ন ও আবাসন মন্ত্রণালয় (এমইউডিএইচ) ভারতের সহায়তায় সম্পর্কের উন্নতি এবং দেশে আটকে থাকা প্রকল্পগুলি পুনরুদ্ধারের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আফগানিস্তানের জনগণদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে ভারতীয় অংশগ্রহণ আফগানিস্তানের মনে আশা জাগিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে এই প্রকল্পগুলি পুনরায় চালু হলে আফগানিস্তানে দারিদ্র্য ও বেকারত্বের মাত্রা হ্রাস পাবে। এই প্রকল্পগুলো পুনরায় চালু হলে মানুষের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি হবে এবং আফগানিস্তানও রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হবে।
এদিকে, ভারত আফগানিস্তানের নতুন শাসকদেরকে স্বীকৃতি প্রদান করে নি। তারা কাবুলে একটি সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের জন্য জোর দিচ্ছে। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণেই ২০২১ সালের আগস্ট মাসে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পর ভারত দূতাবাস থেকে তাদের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে নেয়।
তবে ২০২২ সালের জুনে, আবার ভারত আফগান রাজধানীতে তার দূতাবাসে একটি প্রযুক্তিগত দল মোতায়েন করে কাবুলে তার কূটনৈতিক উপস্থিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে।
তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও ভারত আফগান জনগণদের দিকে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই ২০,০০০ মেট্রিক টন গম, ১৩ টন অসুধ, ৫০০,০০০ ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এবং শীতের পোশাকের বেশ কয়েকটি চালান আফগানিস্তানে পাঠিয়েছে ভারত।
কাবুলে ভারতের উপস্থিতি এই অঞ্চলে বিভিন্ন শক্তিকে গতিশীলতা প্রদান করেছে। আফগানিস্তানে আশরাফ ঘানি সরকারের পতনের পর, পাকিস্তান এবং তার নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আফগানিস্তানে কৌশলগত নিরাপত্তা লাভের আশা করেছিল। তারা ভেবেছিল আফগানিস্তানে ভারতীয় প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, যেহেতু আফগানিস্তানি তালেবান এবং পাকিস্তানি সামরিক বাহিনির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
তবে এক বছর পর এসে দেখা যায়, আফগান তালেবান এবং পাকিস্তানি সামরিক বাহিনির মধ্যে বিভিন্ন কারণে উত্তেজনা বেড়েছে। যেমন, তালেবানের ডুরান্ড লাইনকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে পাকিস্তান এবং তেহরিক-ই-তালেবানের কার্যকলাপ দুই দেশের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি করেছে। আফগান অঞ্চলে টিটিপির প্রায় চার হাজার সন্ত্রাসী রয়েছে। তাছাড়াও সীমান্ত সংঘর্ষের ফলে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়।
মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠকে ভারতের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে তালেবান। তালেবান আরো বলেছে যে, তারা অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য তার ভূখণ্ডকে কোন সংস্থা বা ক্ষমতার জন্য ব্যবহার করার অনুমতি দিবে না।
যদিও আফগানিস্তানে ভারতের উপস্থিতি এখনো একটি সংবেদনশীল ব্যাপার হয়েই রয়ে গেছে। কাবুলে মোতায়েন করা ভারতের প্রযুক্তিগত দলের বেশিরভাগই নিরাপত্তা কর্মী যারা মূলত আফগানদের সাহায্য করার কাজে নিয়োজিত।
ইতিমধ্যেই উচ্চ দারিদ্রতায় ভুগা দেশটিকে বৈদেশিক সাহায্য স্থগিতকরণ, আফগান সরকারের সম্পদ রোধ এবং তালেবানের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মতো বিভিন্ন বিষয় সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত করেছে।