সুখবর রিপোর্ট : বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর্পোরেট কর কমানোর জোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানও এ হার কমানোর প্রস্তাব করেছে।
এ বিষয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) থেকেও এসব প্রস্তাব করা হয়েছে।
তারা বলেছে, বাংলাদেশে কর্পোরেট করের হার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। যে কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়েও বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রতি আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট কিছু খাতে কর্পোরেট করের হার কমানো হলে বিনিয়োগ বাড়বে।
এ ছাড়াও ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বার, বাংলাদেশ চেম্বার, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) কর্পোরেট করের হার কমানোর প্রস্তাব করেছে।
সূত্র জানায়, এবারের বাজেটে সরকার বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে বিশেষ নজর দেবে। সেজন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কর ছাড় দেয়া হবে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর ক্ষেত্রে বিশেষে নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য কর্পোরেট করের হার কিছুটা কমানোর চিন্তাভাবনা করছে। তারা কর কোন খাতে কম কমলে রাজস্ব আদায়ে কী ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে, সে হিসাব কষছে।
এ ঘাটতি কোন খাত থেকে পূরণ করা যাবে, সেটিও পর্যালোচনা করছে। এর ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করা হবে। কর্পোরেট কর কমানোর বিষয়টি একেবারেই রাজনৈতিক সিন্ধান্তের ব্যাপার।
রাজস্বনীতির পর্যালোচনা করে এ সিন্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে না। সে কারণে তারা এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কর্পোরেট কর কমালে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি হবে। তবে শুধু কর কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে না। এর সঙ্গে অন্যান্য উপকরণের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে হবে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে বর্তমান কর সাড়ে ৩৭ শতাংশ। আগে ছিল ৪০ শতাংশ। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কর ৪০ শতাংশ। আগে ছিল সাড়ে ৪২ শতাংশ।
তৈরি পোশাক খাতে কর্পোরেট কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে এ হার সাড়ে ১২ শতাংশ এবং গ্রিন ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাকি সব খাতের কর আগের অবস্থায়ই রয়েছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ২৫ শতাংশ; তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ; মার্চেন্ট ব্যাংককে সাড়ে ৩৭ শতাংশ; সিগারেট, জর্দা ও বিড়ি উৎপাদকদের ৪৫ শতাংশ কর দিতে হয়।
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত মোবাইল ফোন কোম্পানিকে ৪০ শতাংশ এবং তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিকে ৪৫ শতাংশ কর দিতে হয়। সমবায় সমিতি আয়ের বিপরীতে ১৫ শতাংশ ও লভ্যাংশ আয়ের ওপর ২০ শতাংশ কর আরোপিত রয়েছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদের হার কমানোর জন্য তাদের কর্পোরেট করের হার কমানো হয়েছিল। বাস্তবে সুদের হার কমেনি। বরং আরও বাড়তে শুরু করেছে।