spot_img
32 C
Dhaka

২৬শে মার্চ, ২০২৩ইং, ১২ই চৈত্র, ১৪২৯বাংলা

ফ্রিল্যান্সিং পেশায় নারীদেরও সমানতালে এগিয়ে আসার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

- Advertisement -

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর ডটকম: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ফ্রিল্যান্সিং পেশায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যাতে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারে সে ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বুধবার রাজধানীর আগারগাঁয়ে তিন দিনব্যাপী ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০২০’ এর ভার্চুয়ালি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবন থেকে ভিডিও রেকর্ডকৃত ভাষণে বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিং পেশায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যাতে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারে সে ব্যাপারেও উদ্যোগী হতে হবে। এর পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিয়মিত গবেষণা ও মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টিতে আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে।’

তরুণ প্রজন্মকে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমানে অন্যান্য খাতে চাকুরির সুযোগ কমে এলেও ফ্রিল্যান্সিং এর কারণে অসংখ্য তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বর্তমানে দেশে সাড়ে ৬ লক্ষ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০২০-এর আজকের এই অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে এটা তারই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন লালন করেছেন। তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি টেলিযোগাযোগ, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানিসহ প্রায় সকল খাতে নানা উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছিলেন।

আবদুল হামিদ জানান, ৭০ এর দশকে ইন্টারনেটের আবিষ্কার ডিজিটাল জগতে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করে। ডিজিটাল বিপ্লবে শামিল হওয়ার দূরদর্শী চিন্তা থেকেই তিনি বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভিত্তি রচনা করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় স্যাটেলাইট কমিনিউকেশনে দেশকে যুক্ত করতে ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। এ উদ্যোগগুলোই ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল ভিত্তি।

তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণে বর্তমান সরকার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, মেহনতি জনতা, বাংলার মাটি ও মানুষকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে একই সাথে সংযুক্ত করতে পেরেছে। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য হ্রাস, অবকাঠামো সৃষ্টি এবং সর্বোপরি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে গত কয়েক বছরে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটেছে। আগে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেটের মূল্য ছিল ৭৮ হাজার টাকা, এখন প্রতি এমবিপিএস এর মূল্য ৩শ টাকার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

দেশে ২০০৯ সালের আগে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ, বর্তমানে সেই সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে ৩৪০০ ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, ১৮ হাজার ৫০০ সরকারি অফিসকে একই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে ১৩ হাজারের অধিক উদ্যোক্তা তৈরি করা হয়েছে, যার অর্ধেকই নারী। জনগণের সেবা প্রাপ্তি সহজতর করার জন্য আরও ১০ হাজার ডিজিটাল সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, ‘এতে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নিতে সক্ষম হবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা মহামারি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্থ করলেও, থামিয়ে দিতে পারেনি। এর কারণ ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়ন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে যে দূরদর্শী অঙ্গীকার করেছিল তারই সুফল আজ মানুষ ঘরে বসে পাচ্ছে।

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ই-কমার্সের মাধ্যমে ঘরে বসে কেনা-বেচা করা, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম, টেলি মেডিসিন সেবাসহ বিভিন্ন অনলাইন সেবা এ কঠিন সময়ে জীবনযাত্রাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। অফিস-আদালতে চালুকৃত ই-নথি ব্যবস্থা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি করেছে। এতে সরকারি সেবা কার্যক্রম চালু রাখা এবং নাগরিকের কাছে সেবা পৌঁছানো সহজ হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘করোনা ট্রেসার বিডি’ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহ চিহ্নিতকরণ সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও গুজব ও অসত্য তথ্য রোধে দেশব্যাপী ‘সত্যমিথ্যা যাচাই আগে ইন্টারনেটে শেয়ার পরে’ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হচ্ছে যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে আমি মনে করি।

তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের ফলে সামনে নতুন এক শিল্প বিপ্লবের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে প্রধান অংশীদার দেশের তরুণরা। প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করছে। ইতোমধ্যে আইসিটি বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ৫ লক্ষ ৮৫ হাজার জনকে আইসিটি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১০ লক্ষ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের এ সুযোগ তৈরি করে দেয়ার পাশাপাশি তারা নিজেরাও যাতে তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা হতে পারে সে ব্যাপারেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এ যুগে হাই-টেক শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার সারাদেশে ৩৯টি হাই-টেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো নির্মাণ সম্পন্ন হলে ৩ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ খাতে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইওটি, রোবোটিক্স, সাইবার সিকিউরিটির উচ্চপ্রযুক্তির ৩১টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। প্রযুক্তি ও জ্ঞান নির্ভর প্রজন্ম বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার ও আইটি সেবা এখন আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে গত ১২ বছরে আইটি খাতের রপ্তানি ২৬ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে এ আয় ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে এবং জিডিপিতে সফটওয়্যার ও আইসিটি সেবাখাতের অবদান ৫ শতাংশে উন্নীত হবে।’

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের রোডম্যাপ ঘোষণার দশ বছর পর সরকার ‘আমার গ্রাম-আমার শহর, সুশাসন ও তারুণ্যের শক্তি’ এই তিনটি বাতিঘর কেন্দ্রিক উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়। এতে ডিজিটাল বিপ্লবের বাস্তবায়ন আরও গতিশীল হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সকল ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির বাস্তবায়ন ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিতকে আরও শক্তিশালী করেছে। তিনি দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে বলেন, উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০২০’ একটি সময়োচিত পদক্ষেপ। এতে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রসার ত্বরান্বিত হবে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল-বিসিসি, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি-বিসিএস ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কল সেন্টার এন্ড আউটসোর্সিং-বিএসিসিও এর সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের ব্রান্ড ইভেন্ট ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’ পাবলিক ও প্রাইভেট পার্টনারশিপ এই ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০২০’ এর আয়োজন করেছে।

- Advertisement -

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলো করুন

25,028FansLike
5,000FollowersFollow
12,132SubscribersSubscribe
- Advertisement -

সর্বশেষ