ডেস্ক প্রতিবেদন, সুখবর বাংলা: রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির পরও বাংলাদেশে ভারতের তুলনায় পেট্রোল ও ডিজেল সস্তায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতের তুলনায় অনেক কম টাকায় পেট্রোল ও ডিজেলসহ পেট্রো পণ্য কিনছে বাংলাদেশের জনগণ। ভারতে প্রতিদিন রাত ১২টার পর আন্তর্জাতিক ক্রুড অয়েলের দাম হিসাবে সমন্বয় করা হয় পেট্রো পণ্যের দাম।
সেই হিসাবে শনিবার ভারতে প্রতি লিটারে পেট্রোলের সর্বোচ্চ দাম মুম্বাইয়ে ১১১.৩৫ রুপি। সর্বনিম্ন দাম দিল্লিতে ৯৬.৭২ রুপি। কলকাতায় পেট্রোলের দাম ১০৬.০৩ রুপি।
একইভাবে ডিজেলের সর্বোচ্চ দাম মুম্বাইয়ে ৯৭.২৮ রুপি। ডিজেলের সর্বনিম্ন দাম দিল্লিতে ৮৯.৬২ রুপি। কলকাতায় শনিবার ডিজেলের দাম ৯২.৭৬ রুপি।
ভারতে বাংলাদেশি টাকার বর্তমান বিনিময় মূল্য কমতে কমতে শনিবার ১০০ রুপির বিপরীতে মিলছে মাত্র ৭৪ টাকা। সেই হিসাবে একজন বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতের মুম্বাইয়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লিটার পেট্রোল কিনতে সর্বোচ্চ খরচ হবে ১৫০ টাকা ৪৭ পয়সা। সর্বনিম্ন দিল্লিতে এক লিটার পেট্রোল কিনতে খরচ হবে ১৩০ টাকা ৭০ পয়সা। কলকাতায় বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লিটার পেট্রোল কিনতে খরচ হবে ১৪৩ টাকা ২৮ পয়সা।
আগের দিন শুক্রবার দাম বৃদ্ধির পর বাংলাদেশে ১ লিটার পেট্রোলের দাম দাঁড়িয়েছে ১৩০ টাকা। একইভাবে একজন বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতে এক লিটার ডিজেল কিনতে বাংলাদেশি মুদ্রায় গুণতে হবে ১৩১.৪৬ টাকা। সর্বনিম্ন গুণতে হবে ১২১ টাকা ১২ পয়সা। কলকাতায় বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লিটার ডিজেল কিনতে খরচ হবে ১২৫ টাকা ৩৫ পয়সা। যেখানে দাম বৃদ্ধির পর শনিবার বাংলাদেশে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম দাঁড়িয়েছে ১১৪ টাকা।
এর আগে গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে পেট্রোলের জন্য সর্বোচ্চ ১২২.৩২ রুপি প্রতি লিটারে এবং ডিজেলের জন্য ১১৩.২১ রুপি দিয়েছে ভারতীয়রা। সম্প্রতি পেট্রোপণ্যের ওপর থেকে সরকারের ট্যাক্স ছাড় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোপণ্যের দাম কমায় নতুন দাম সমন্বয় করে ভারত।
বাংলাদেশি মুদ্রা হিসেবে গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে পেট্রোলের জন্য ভারতীয়রা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দামে ১৬৫.২৯ এবং ডিজেলের ক্ষেত্রে ১৫২ টাকা ৯৯ টাকায় কিনেছে।
ব্যাপক দাম বৃদ্ধির পরে ভারতে কিছুটা দাম কমায় আপাতত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে দেশটির সাধারণ মানুষ। গ্রাহকরা বলছে- এই দাম অনেকটাই তাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। ভারতে পেট্রোপণ্যের ওপর ট্যাক্স ছাড় দেওয়ার পরেও বর্তমান দামের ওপর প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি ট্যাক্স আদায় করে থাকে ভারত সরকার। কিন্তু এরপরও ভারতীয় নাগরিকরা পায় না ১০০ শতাংশ পেট্রোল বা ডিজেল।
ডলারের ওপর চাপ কমাতে গত কয়েক বছর ধরেই পেট্রোলের সঙ্গে ইথানোর ব্লেন্ড করে আসছে ভারত সরকার। চলতি বছর থেকে পেট্রোপণ্যের ৮০ শতাংশের মধ্যে ২০ শতাংশ ইথানল মেশানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ভারত সরকার। ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- গত বছর পেট্রোপণ্যের সঙ্গে শুধুমাত্র ১০ শতাংশ ইথানল মিশিয়ে ভারত সরকার প্রায় ৪১ হাজার কোটি রুপি সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে সক্ষম হয়। ভারত সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী অশ্বিনী কুমার চৌবে বলছেন, আগামী ২০২৫-২০২৬ সালের মধ্যে পেট্রোপণ্য ২০ শতাংশ ইথানল ব্লেন্ডিংয়ের ১০০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে পেট্রোপণ্য আমদানির ওপর কিছুটা হলেও নির্ভরতা কমাতে পারবে ভারত।
প্রসঙ্গত, ভারতে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করা হয় ইরাক ও সৌদি আরব থেকে। কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর দশম স্থান থেকে এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। নিষেধাজ্ঞার মুখে কম মূল্যে রাশিয়ার তেল কিনে লাভবান হয়েছে ভারত। ফলে বৈশ্বিক তেলের বাজারের ঊর্ধ্বগতি খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি ভারতের বাজারে। যদিও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলোর উচ্চহারে ট্যাক্স আদায়ের জেরে দাম কমার সুফল পাচ্ছে না ভারতের সাধারণ মানুষ।
আরো পড়ুন:
বৈশ্বিক সংকট সবাই মিলে মোকাবিলার আহ্বান বাণিজ্যমন্ত্রীর