ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সঙ্কট স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে আঘাত করার সাথে সাথে, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ শিল্পেও আঘাত হেনেছে।
মার্কিন ডলারের ঘাটতির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের দরুণ ওষুধ সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ওষুধ ক্রয় করতেও হিমশিম খাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা এ অবস্থায় শীর্ষস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরিতে কাঁচামাল সংগ্রহের দিকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ প্রদান করছেন।
দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত আট বছরের মধ্যে ৪৩ কোটি ডলার নেমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে। এ অবস্থায় দেশটি দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
ফলস্বরূপ, দেশটি ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগের চিকিৎসার জন্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ওষুধ, বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন, ইমিউনোগ্লোবুলিন এবং জৈবিক পণ্যগুলোর জন্য ওষুধ এবং সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদানগুলোর (এপিআই) মতো মৌলিক আমদানির জন্য অর্থ প্রদান করতে পারছে না।
অপারেশন থিয়েটারগুলোতে দুই সপ্তাহেরও কম চেতনানাশক মজুদ রয়েছে। এছাড়াও ওষুধ প্রস্তুতকারকদের কাছে মাত্র চার-পাঁচ সপ্তাহের কাঁচামাল মজুদ রয়েছে।
পাকিস্তান কিডনি ও লিভার ইনস্টিটিউট ও রিসার্চ সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি কার্ডিওলজি ও ক্যান্সার হাসপাতালে করোনারি স্টেন্ট, ক্যানুলা, সিরিঞ্জ, এমনকি গ্লাভস-এর মতো চিকিৎসা সরবরাহ কম থাকার কারণে ডাক্তারেরা নিরবচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারছেন না।
অন্যদিকে, মেডিকেল কোম্পানির স্টেকহোল্ডাররা প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারকে অবিলম্বে তাদের উদ্বেগ এবং দাবিগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্য এবং রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলোকে তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের পরামর্শ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।
তারা সতর্ক করে দিয়েছেন যে এ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, কারণ অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিভিন্ন ওষুধ তৈরির কাঁচামাল করাচি বন্দরে আটকে রয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে করাচি বন্দরে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, কাঁচামাল এবং চিকিৎসা সরঞ্জামসহ হাজার হাজার শিপিং কনটেইনার আটকে আছে।
গত বছরেও দেশটিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তবে এ বছর পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো ইউরোপ ও অন্যান্য দেশ ছাড়াও প্রায় ৪৭ শতাংশ কাঁচামাল চীন থেকে এবং ৪০ শতাংশ ভারত থেকে আমদানি করে।
নিউট্রো ফার্মার সিইও হামিদ রাজা বলেন, “আমরা বেশ কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি কিন্তু এই মুহূর্তে, সবচেয়ে বড় সমস্যা হল কোম্পানিগুলো টাকা দিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোও বন্দরে আটকে আছে কিন্তু ব্যাঙ্কগুলো সেগুলো ছাড়তে অনিচ্ছুক।”
তিনি অভিযোগ করেন, “ব্যাংকের পদ্ধতি ধীরগতির হওয়ার কারণে আমরাও অপেক্ষা করছি। ব্যাঙ্কগুলো অজুহাত দিচ্ছে যে তাদের কাছে ডলার নেই এবং তাদের স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে কোনও নির্দেশনা নেই।”
তিনি দাবি করেন, ওষুধ শিল্পকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকারের কাছে ডলারে অর্থ বরাদ্দ করা উচিত এবং এই সমস্যার সমাধান করা উচিত।
এদিকে, ওষুধ আইনজীবী ফোরামের চেয়ারম্যান নূর মাহার বলেন যে, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর দাবির প্রতি সরকারের নিষ্ঠুর মনোভাব মৃত্যু বিতরণেরই সমতুল্য।
তিনি জানান, ওষুধ ও অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম না পাওয়ায় মানুষ মারা যাচ্ছে।
অর্থনৈতিক সংকট শুরুর বহু আগ থেকেই ওষুধ শিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা সরকারকে এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছিল কিন্তু সরকার তখন তাদের কথা শুনে নি। এখন স্টেকহোল্ডারদের দাবি হলো যে করেই হোক সরকারকে ওষুধ শিল্পকে চাঙ্গা করে তুলতে ১৫০০ লাখ ডলারের ব্যবস্থা করতে হবে।
পাকিস্তান ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিপিএমএ) কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারুক বুখারি বলেছেন, “আমরা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তানের সাথে আলোচনা করছি। তারা আমাদের প্রয়োজনীয় আমদানি সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।”
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৩ জানুয়ারী থেকে শুরু হওয়া সংকটের সম্ভাব্য সমাধান খোঁজার জন্য ওষুধ শিল্পকে আগামী সপ্তাহে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এসবিপি গভর্নর জামিল আহমেদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে তাদের বৈঠক হবে। তিনি এই বৈঠক থেকে ইতিবাচকতার আশা করছেন।
তিনি জানান, বর্তমানে প্রায় ২০-২৫% ফার্মাসিউটিক্যাল উৎপাদন মন্থর অবস্থায় রয়েছে। বর্তমান নীতিগুলো (আমদানি নিষেধাজ্ঞা) আগামী চার থেকে পাঁচ সপ্তাহের জন্য বহাল থাকলে দেশে সবচেয়ে খারাপ ওষুধের সংকট দেখা দেবে।
তবে যাই হোক, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ওষুধগুলোকে আমদানির শীর্ষ অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছে।
তিনি বলেন, দেশে প্রায় ৭০০ ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্ম রয়েছে যার মধ্যে ৬৫০টির বেশি ফার্ম ওষুধ তৈরি করে। নির্মাতাদের মধ্যে ১২ টি বিদেশী সংস্থা রয়েছে।
এর পূর্বে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা প্রদানের সময়, পিপিএমএর কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের উচিত ওষুধ প্রস্তুতকারকদেরকে একটি অপরিহার্য শিল্প হিসাবে বিবেচনা করা, যার কাঁচামাল সারা বছর ধরেই পাওয়া উচিত।
একইভাবে, বিরাজমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অত্যাবশ্যকীয় অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানি বন্ধ রয়েছে, যার ফলে রোগীদেরকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।
তিনি প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামের নিরবচ্ছিন্ন আমদানি নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।