ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: বিচার বিভাগ, ন্যায়বিচার ও সমতা উন্নয়নের জন্য নিবেদিত একটি স্থান, যেখানে নারী-পুরুষে কোনও ভেদাভেদ নেই। পাকিস্তানে প্রথম আদালত প্রতিষ্ঠার পর থেকে, আজ পর্যন্ত অর্থাৎ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর এসেও, ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখতে নারীদের উৎসাহিত করার কোনও ধরনের পদক্ষেপই চোখে পড়েনি। স্বাধীনতার পর, নারীরা পাইলট থেকে শুরু করে সামরিক জেনারেল, জাতিসংঘ থেকে বেসামরিক পরিষেবা পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষমতার পদে তো উঠেছেন, কিন্তু শুধু বিচার বিভাগকেই অন্ধকারে রাখা হয়েছে।
পাকিস্তানের সংবিধান নারী ও পুরুষকে সমান সুযোগের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর এসেও দেশে এখনো নারী-পুরুষের ক্ষমতায়নে সমতা আসেনি।
সবচেয়ে বড় বিদ্রুপের বিষয় হলো, যে জায়গাটি দেশের ন্যায়বিচার পরিচালনা করে সে জায়গাতেই নারীকে সমান ক্ষমতা প্রদান করা হচ্ছে না।
পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশ নারী। কিন্তু বিচার বিভাগে তাদের প্রতিনিধিত্ব তাদের সংখ্যার প্রতিফলন করে না। নিম্ন ও উচ্চ আদালতে ৩০০৫ জন পাকিস্তানি বিচারকদের মধ্যে মাত্র ৫১৯ জন নারী, যা মাত্র ১৭ শতাংশ।
রাজনৈতিকভাবে নারীদের সাক্ষরতা বৃদ্ধি, নারী কর্মসংস্থান এবং আইনসভা, নির্বাহী শাখা এবং বিচার বিভাগে নারীদের সমান অংশগ্রহণের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সিন্ধুতে ৩৩ জন, লাহোরে ৫০ জন, পেশোয়ারে ১৫ জন, বেলুচিস্তানে ১০ জন এবং ইসলামাবাদে ৬ জন বিচারকদের মধ্যে মাত্র পাঁচজন নারী (সিন্ধু ও লাহোরের উচ্চ আদালতে দু’জন এবং পেশোয়ারে একজন)। অর্থাৎ মাত্র ৪.৩৮ শতাংশ মহিলা বিচারক। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে প্রায় ৬৫ বছর ধরে, সর্বোচ্চ আদালতে শুধুমাত্র পুরুষ বিচারকেরাই কাজ করে গিয়েছেন।
এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে আইনসভায় পুরুষদের আধিপত্য এবং নারীদের নিয়ে আইন তৈরি করতে অনীহা বা বিরোধিতা। উচ্চ পদে লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য এবং স্বজনপ্রীতি। প্রত্যেক ব্যক্তি এ বিষয়গুলো অনুভব তো করছে কিন্তু তারা এসব ব্যাপারে উদাসীন। তাছাড়া,দেশের বেশিরভাগ নারীরা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত। যেসব নারী বিচারকরা এখন রয়েছেন, তারাও লিঙ্গ বৈষম্য করেন, এটিও অন্যতম কারণ।
শিক্ষার মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং বিচার বিভাগে মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এই বৈষম্যের দুটি সহজ সমাধান। জনগণকে জানতে হবে যে যখন বিচার বিভাগে সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে, তখনই আমরা নারীর সুরক্ষা, সমতা, মানবিক আইন ইত্যাদি বিষয়ে আরও যুগান্তকারী রায় দিতে সক্ষম হব। আমাদের অবশ্যই মানসিকভাবে নারীর প্রতি সম্মান ও সমতার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
রাজনৈতিকভাবে নারীর সাক্ষরতা বৃদ্ধি, নারী কর্মসংস্থান এবং আইনসভা, নির্বাহী শাখা এবং বিচার বিভাগে নারীদের সমান অংশগ্রহণের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
যখন নারীরা ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, ইভ-টিজিং এবং অন্যান্য অপরাধের দ্বারা প্রভাবিত হয়, তখন তাদেরকে অবশ্যই এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সমাজের বিভিন্ন বিভাগে সমান প্রতিনিধিত্ব থাকলে এটি একটি জাতির প্রাণশক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। এখন সময় এসেছে আমাদের দেখিয়ে দিতে হবে যে নারীরা শুধু একটি পরিবারেরই মেরুদণ্ড নয় বরং একটি দেশেরও মেরুদণ্ড।