ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: আফগান সংবাদ মাধ্যমের সংবাদকে রীতিমতো অস্বীকার করে পাকিস্তান দাবি করেছে যে, আফগানিস্তানের নাঙ্গারহার প্রদেশে আত্মগোপনে থাকা তেহরিক-ই-তালেবান গোষ্ঠী পাকিস্তানের উপর হামলা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে ২০১৫ সালের এক পুরাতন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো সাড়া ফেলেছে। উক্ত ভিডিওতে দেখা যায়, পাকিস্তান সেনাবাহিনির এক বন্দিকে টিটিপি গুলি করে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। এসব কিছুই পাকিস্তান-আফগানিস্তানের অন্তর্দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত প্রদান করছে।
বিগত কয়েক বছরে বিশ্ব দেখেছে, আফগানিস্তানে মার্কিন সমর্থিত সরকারের পতন। এরপরই ভূ-রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে সরিয়ে নেয়। দুই দশক ধরে যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রয়েছে তার কোনও শেষ দেখা যাচ্ছে না। যে পাকিস্তানের সহযোগিতায় ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের প্রত্যাবর্তন ঘটে, সেই পাকিস্তানকেই এখন তারা অস্বীকার করছে। ফলে পাকিস্তান-আফগানিস্তান পরিণত হয়েছে সন্ত্রাসবাদের বৈশ্বিক কেন্দ্রস্থলে।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে পাকিস্তান নিজের লড়াই নিজেই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ ব্যাপারে পাকিস্তান যেকোন ধরনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও প্রস্তুত। তবে পাকিস্তানের দীর্ঘসূত্রিতা কাবুলকে কূটনৈতিকভাবে আরো শক্তিশালী করে তুলছে এবং ইসলামাবাদকে পরিণত করছে হাসির পাত্রে।
ফলে পাকিস্তান সীমান্তে আফগানিস্তানের সাথে তার শত্রুতা এবং তার নিজেরই তৈরি করা বিপদে সে নিজেই আজ বিপদগ্রস্ত। ২০২২ সালে পাকিস্তানে ১৫টির মতো আন্তঃসীমা হামলা হয়েছে। কাবুলের পূর্ববর্তী সরকার এবং তালেবানরা আজ পর্যন্ত পাকিস্তান-আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক সীমারেখাকে স্বীকৃতি প্রদান না করাও আজও দুইদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ।
২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি, পাকিস্তানের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের সমীক্ষা অনুসারে জানা যায়, গত বছর পাকিস্তানে টিটিপি ও অন্যান্য ইসলামি জঙ্গীগোষ্ঠী দ্বারা ২৬২ টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে এবং এতে ৪১৯ জন পাকিস্তানি নিহত এবং ৭৩৪ জন আহত হয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবানরা আল-কায়েদা, ইসলামিক স্টেট মুভমেন্ট অফ উজবেকিস্তান, ইটিআইএম (ইস্ট তুর্কেস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট) বা টিআইপি (তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি) এবং টিটিপি-র মতো বিদেশী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে কিনা তা অনিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে।
আফগান শাসকদের বিরুদ্ধাচরণ, রাজনৈতিক বিরোধীতাসহ নানা কারণে আফগানিস্তানের সাথে পাকিস্তানের কৌশলগত সুসম্পর্কের অবসান পাকিস্তানকেই বিশ্বের কাছে উপহাসের বস্তু করে তুলেছে। কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এদের বিরোধিতা করেছিল তা এখন বিশ্বের কাছে সুস্পষ্ট।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিশেষ উপদেষ্টা, রওফ হাসানের টিটিপিকে দমন করার প্রক্রিয়া আংশিকভাবে সফল হয়েছিল। কারণ টিটিপির বেশিরভাগ কর্মীরাই সীমানা পেরিয়ে আফগানিস্তানে পৌঁছে এখন আফগান তালেবানদের সাথে জোটবদ্ধ হয়েছে।
আফগান তালেবানদের কাবুলে ক্ষমতাগ্রহণে পাকিস্তানি সহযোগিতা এবং টিটিপির সাথে শান্তি আলোচনার চেষ্টায় পাকিস্তান শুধুমাত্র দেশে সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধিতেই সাহায্য করে গেছে।
পাকিস্তান যদি এখন টিটিপিকে পরাজিত করতে চায়, তবে তার সৈন্যদেরকে আগে বুঝতে হবে তারা কেন এবং কিসের জন্য লড়াই করছে। উদ্দেশ্যহীনভাবে কোন যুদ্ধ জয় করা যায় না।