ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: তালেবান জঙ্গিদের সাথে শান্তি আলোচনার জন্য পাকিস্তানের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। শত শত জঙ্গি পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) প্রদেশে নিজেদের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।
নিজেদের পরাজয় স্বীকার করে অস্ত্র ত্যাগ করে ঘরে ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে, তেহরিক-ই-তালেবানের জঙ্গিরা নিজেদের শক্তি জাহির করতে পুনরায় পাকিস্তানের উপজাতীয় জেলাগুলোতে প্রবেশ করেছে। এমনকি তাদের মধ্যে গুপ্তচরের সংখ্যাও ২০০০ থেকে ২৫০০ জনের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত ১৪ বছরে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি হামলার পেছনে রয়েছে টিটিপি। দেশে ইসলামি আইনের প্রয়োগ, তাদের জঙ্গিদের পাকিস্তান সরকারের কবল থেকে মুক্তি প্রদান ইত্যাদি নানা কারণে তারা রাষ্ট্রের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহে খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলে নিরাপত্তা কর্মীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপরেও বেশ কয়েকবার হুমকি ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফলে কেপি-তে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে।
গত ২৮ নভেম্বর, পাকিস্তান সরকার তার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে অভিযোগ এনে যুদ্ধবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় টিটিপি। ফলে কেপি-তে টিটিপিয়ের সংঘর্ষের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
পেশোয়ার, দক্ষিণ জেলা এবং মারদান অঞ্চলসহ বিভিন্ন অংশে সাম্প্রতিক হামলার পর কেপি জুড়ে পুলিশ উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। নভেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে বাজাউর, পেশোয়ার, মহমান্দ, ডেরা ইসমাইল খান, ট্যাঙ্ক, বান্নু, কোহাট এবং নওশেরা। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে, টিটিপি আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী বাজাউর, খাইবার এবং উত্তর ও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান জেলায় বাহিনি গড়ে তুলেছে। তারা গ্রাম অতিক্রম করে অফিস খুলেছে। সেখান থেকে টিটিপি জঙ্গিরা খাইবার পাখতুনখোয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়, টিটিপি জঙ্গিরা আফগানিস্তান থেকে ফিরে এসে কেপির বিভিন্ন জেলায় স্থানীয়দের উপর হামলা চালাচ্ছে। গত ৬ ডিসেম্বর, খাইবার প্রদেশের তিরাহ এলাকায় পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে জঙ্গিদের সহিংসতা পরিদর্শন করেন পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান, জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দেশে যতদিন না পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা আসছে ততদিন পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন।
সম্প্রতি প্রাক্তন প্রাদেশিক মন্ত্রী ও ব্যবসায়ী, হাজি মোহাম্মদ জাভেদের বাড়িতে দ্বিতীয়বারের মতো হাতবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ হামলায় কোনও হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায় নি। এর আগে, কোহাটে প্রাক্তন ফেডারেল মন্ত্রী শেহরিয়ার আফ্রিদির বাড়িতেও হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়।
এমনকি সন্ত্রাসী হামলা থেকে দক্ষিণপন্থী ধর্মীয় দলের নেতারাও রেহাই পাচ্ছেন না। কয়েকদিন আগেই তাবলিগি জামাতের সিনিয়র সদস্যের বাড়িতে গ্রেনেড হামলা হয়, যদিও এ হামলায় কেউ আহত হন নি। তবে কয়েক মাস আগেই, তার বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছিল।
কয়েক সপ্তাহ ধরে আইমল ওয়ালি খান, সরদার হুসেন বাবাক এবং অন্যান্যরা হুমকি পাচ্ছেন। তাছাড়া এমপিএ ফয়সাল জেবের বাড়িতে গত সপ্তাহে দুইবার হামলা চালানো হয়েছে। পেশোয়ারে দলীয় সিনেটর হিদায়াতুল্লাহর বাড়িতে গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।
পাকিস্তানের অধিকাংশ রাজনীতিবিদই দুর্নীতিগ্রস্ত, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী হামলার বৃদ্ধিতে জঙ্গীরা কেপিতে সন্ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছে।
আগস্টের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত কেপিতে ১১৮টি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া যায়। এ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন পুলিশ, অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ১২ জন কর্মী এবং ১৭ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাছাড়া ১৮ জন পুলিশ সদস্য, ১০ জন বেসামরিক ব্যক্তি এবং ৩৭ জন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মী আহত হয়েছেন।
২০২১ সালে একই সময়ে, কেপিতে ১০২ টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে ৪ জন পুলিশ সদস্য, ৪ জন বেসামরিক ব্যক্তি এবং ২৩ জন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মী নিহত হন।
২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সন্ত্রাসী হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর, সাম্প্রতিক সময়ে আবার টিটিপির পুনরুত্থানের ফলে কেপির বাসিন্দারা ভয় ও উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। টিটিপি হল আফগান তালেবানদের সহযোদ্ধা, যারা রাষ্ট্র ও সমাজে ইসলামি শাসনতন্ত্র কায়েম করতে চায়।
২০২২-২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, গণহত্যার শিকার হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। ১৬২ টি দেশের মধ্যে পাকিস্তান শীর্ষ স্থান দখল করেছে। টিটিপির ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ফলে দেশটিতে গণহত্যার পরিমাণ বেড়েছে, যা ২০০১ সাল থেকেই চলমান। পাকিস্তান আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, লিবিয়া প্রভৃতি দেশগুলিকে পরাজিত করে শীর্ষস্থান লাভ করেছে। এই দেশগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে সারাবিশ্বের কাছেই কুখ্যাত।