ধর্ম ও জীবন ডেস্ক, সুখবর ডটকম: দিন যতই যাচ্ছে, বিজ্ঞান যতই উৎকর্ষ সাধন করছে, মানুষ ততই বস্তুবাদের প্রতি ধাবিত হচ্ছে। বস্তু ও যন্ত্রের ছোঁয়ায় মানুষ যেন মনুষত্ব হারিয়ে ফেলছে। খুইয়ে ফেলছে তার নীতি-নৈতিকতা ও মানবতা।
শহুরে জীবন ব্যস্ততম জীবন। কেউ কারো দিকে তাকানোর সুযোগ নেই। প্রত্যেকেই নিজের কাজে ব্যস্ত। এটা ভালো, খারাপ নয় কিন্তু কোনো মানুষ বিপদে পতিত হলে তার পাশে দাঁড়ানো, তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া- এটা যেমন প্রতিটি মানবের নৈতিক দায়িত্ব, ঠিক তেমনি মানবতার ধর্ম ইসলামও এর প্রতি উৎসাহিত করেছে। ক্ষেত্র বিশেষ এমন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির সাহায্যে এগিয়ে আসাকে আবশ্যক করে দিয়েছে।
মাঝেমধ্যে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শোনা যায়, গাঁয়ের অনেক মানুষ শহরে আসে কোনো প্রয়োজনের তাগিদে কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বেড়াতে। সহজ সরল মানুষ, ডান-বাম তেমন চেনে না। পথ-ঘাট চেনে না। বাসার ঠিকানা খুঁজে পায় না। তখন সে শহরের মানুষের মুখাপেক্ষী হয়।
তাদের জিজ্ঞাসা করে কিন্তু অনেককেই দেখা যায়- পথিককে সঠিক পথের দিশা দেয় না, বিরক্ত বোধ করে। কেউ তো এ সুযোগে তার সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আর রোড এক্সিডেন্ট হলে তো কথাই নাই।
কিছু বিবেক এবং মানবতাহীন মানুষকে দেখা যায়, আহত-নিহতদের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে তাদের মালামাল ও অর্থ-সম্পদ লুটতে শুরু করে! মানুষ হিসেবে এটা যে কত বড় অমানবিক ও লজ্জাকর কাজ তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। অথচ ইসলাম বিপদগ্রস্ত লোকদের সাহায্য করতে এবং পথভোলা পথিকের পথ দেখিয়ে দিতে আদেশ করেছে।
মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, “তোমরা তাকওয়া এবং পুণ্যের কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো। পাপাচার এবং অবাধ্যতার কাজে একে অপরের সহযোগী হয়ো না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা”। (সূরা মায়েদা আয়াত নং ২)
হযরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন-
১. ‘হাস্যোজ্জ্বল মুখে মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ’
২. ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ’
৩. ‘পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া’
৪. দৃষ্টিহীনকে পথ দেখানো
৫. রাস্তায় পড়ে থাকা পাথর, কাঁটা ও হাড় বা কষ্টদায়ক বস্তু রাস্তা থেকে সরানো
৬. ‘নিজ বালতি দিয়ে পানি তুলে অপর ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া এসবগুলোই তোমার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (সুনানে তিরমিজি- হাদিস নং ১৯৫৬)
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা রাস্তার উপর বসা থেকে দূরে থাকো’।
লোকজন বলল, এছাড়া তো আমাদের কোন উপায় নেই। কেননা এটাই আমাদের উঠাবসার জায়গা এবং এখানে বসেই আমরা কথাবার্তা বলে থাকি। তিনি বলেন, ‘যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক আদায় করবে।’
তারা প্রশ্ন করলেন: রাস্তার হক কি? তিনি বললেন,
১. দৃষ্টি অবনমিত রাখা,
২. মানুষকে কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকা,
৩. সালামের উত্তর দেওয়া,
৪. সৎকাজের আদেশ দেওয়া ও
৫. অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৫৪৬)
তিনি আরও বলেন, তোমাদের যদি রাস্তায় বসতেই হয় তাহলে সালামের প্রসার করো, মাজলুমকে সাহায্য করো এবং মানুষকে পথ দেখাও। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১৭৭৫২)
অন্য হাদিসে এসেছে- আর তোমরা বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে এবং পথহারাকে পথ দেখাবে। (সুনানে আবু দাউদ, ২/৬৭২)
আসুন আমরা পথ ভোলা পথিকের পথ দেখিয়ে এবং বিপদগ্রস্তের সাহায্যে এগিয়ে এসে অসংখ্য সাদকার সওয়াব অর্জন করি।
এম এইচ/ আইকেজে /
আরও পড়ুন:
অমুসলিম অভিবাসীদের জন্য আরব আমিরাতে নতুন পারিবারিক আইন