ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: চীন হয়তো কূটনৈতিকভাবে নেপালের উন্নয়নকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল, কিন্তু নেপালি মাওবাদী নেতা পুষ্পকমল দাহাল প্রচণ্ড, কে পি শর্মা ওলির কাঁধে ভর দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসে সমস্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। প্রচণ্ডের প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সূচনা ঘটেছে নেপালে এবং নেপালবাসীরা এক্ষেত্রে অসহায়।
দাহাল এবং ওলি পূর্বে বন্ধু ছিলেন এবং পরবর্তীতে তারা শত্রুতে পরিণত হন। নির্বাচনের প্রাক্কালে তাদের মধ্যে শাসনভার ভাগ করা নিয়ে চুক্তি হয়, যার ফলে এ নির্বাচন ছিল নাটক মাত্র।
দাহাল-ওলির বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি চমকপ্রদ হলো হিন্দু জাতি ও সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ানো রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টিকে (আরপিপি) জোটের দলভুক্ত করা।
আরপিপি প্রধান কমল থাপা জোট সরকারে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থা থেকে নিজেকে রক্ষা করেছেন। সকলের দৃষ্টি এখন প্রচণ্ডের দিকেই থাকবে, যিনি আজীবন রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করেছেন।
অপ্রত্যাশিত রাজনীতি নেপালে একটি রীতিতে পরিণত হয়েছে। এই অপ্রত্যাশিত কারণটিই প্রচণ্ডকে নভেম্বরের নির্বাচনে, নেপালি কংগ্রেসের শের বাহাদুর দেউবার নেতৃত্বে পাঁচ-দলীয় জোটের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করেছিল। কারণ দেউবা নতুন সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদের প্রথমার্ধে তাকে সরকার পরিচালনা করতে দিতে রাজি ছিলেন না।
দাহাল যদি মেয়াদের প্রথমার্ধে প্রধানমন্ত্রী হতে এতই আগ্রহী হতেন, তাহলে তিনি দেউবা এবং জোটের শরিকদের কাছে তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে পারতেন। দেউবা স্পষ্টতই এমন কোনও ইঙ্গিত পাননি।
স্পষ্টতই ফলাফলের পর দাহালের মনে প্রথমার্ধে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জন্মে। নেপালের ২৭৮ সদস্যবিশিষ্ট হাউজের ৮৯টি আসন দখল করে নেপালি কংগ্রেস। ওলির কমিউনিস্ট পার্টি দ্বিতীয় হিসেবে ৭৮ টি আসন দখল করে। অপরদিকে দাহালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী দল) ৩২ টি আসন দখল করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
সংসদকে নিজের সুবিধামতো পরিচালনা করার ক্ষমতা দেউবার রয়েছে। তবে তিনি ধারণাও করতে পারেন নি যে প্রধানমন্ত্রীত্ব লাভের জন্য দাহাল তার জোট থেকে বেরিয়ে যাবেন।
হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এবং রাজতন্ত্রের পক্ষের দাবির সাথে দাহাল একমত হয়েছেন এটা বিশ্বাস করাই কঠিন। কিন্তু নেপালের ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে অবশ্য সবই সম্ভব।
রাজতন্ত্র বাতিলের দাবিতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছিলেন দাহাল। এ সশস্ত্র বিদ্রোহ এক দশক স্থায়ী হয়েছিল এবং এতে নেপালের মানুষদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
দাহাল হয়তো সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করেছেন এবং ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণের পর আরো জ্ঞানী হয়ে উঠেছেন, তবে এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে নেপালকে আবার একটি হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করতে তিনি রাজি হবেন।
প্রকৃত রাজনীতি তাকে ভারত-বিরোধী নেতা থেকে সরে আসতে বাধ্য করেছে। ভারতের সাথে নেপালের সম্পর্ক অনেক পুরাতন। এ পরিস্থিতিতে ভারত-বিরোধী রাজনীতি বেশিদিন টিকতেও পারতো না।
নিঃসন্দেহে অনেক নেপালিই রয়েছেন যারা ভারতকে পছন্দ করেন না। তাছাড়া চীনও নেপালিদের মনে ভারত বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। নেপালের মনে চীন এ ধারণার জন্ম দিয়েছে যে, তারা ভারতের চেয়েও সামরিক দিক দিয়ে বেশি লাভবান হবে চীনের সাথে যুক্ত হলে।
ওলি শক্তিশালী চীনপন্থী নীতি অনুসরণ করে ভারত-নেপাল সম্পর্ককে বিষিয়ে তুলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দাহাল যখন তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে, তখন রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য তিনি তার অবস্থান থেকে সরে আসেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পূর্ববর্তী মেয়াদে, দাহাল ভারত বিদ্বেষ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনেন। ফলে চীনারা তার প্রতি বিরক্ত হয়েছিল।
তবে নেপালের কমিউনিস্ট নেতাদের মতপার্থক্য চীনকেও ভাবিয়ে তুলেছে। এই মতপার্থক্যের কারণে চীন-নেপাল সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
তৎকালীন চীনা রাষ্ট্রদূত, হাউ ইয়ানকি নেপালের কমিউনিস্টদের বিভক্ত হওয়া থেকে আটকাতে অনেক চেষ্টা করেছিলেন। তার কূটনীতি চীনকে বিব্রত করলেও নেপালের রাজনৈতিক দলগুলোর উপর এর কোন প্রভাবই পড়েনি।
তবে তার মানে এই নয় যে, চীন নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা ছেড়ে দিয়েছে। দাহাল ও ওলির হাত মেলানো হতে পারে চীনাদেরই কোনও পরিকল্পনার অংশ।
দাহাল তার ভারত নীতিকে কিভাবে পরিচালনা করেন সেটাও দেখবার বিষয়। তবে তার ভারত বিরোধী কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। যদিও তার পেছনে ওলি থাকায় তাকে হয়তোবা চীনের সাথেও ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।
তবে ওলির প্রভাবে সীমান্ত সীমানা নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দাহাল কিভাবে ভারতের সাথে আলোচনা করেন তা অবশ্যই দেখবার মতো বিষয় হবে।
আই.কে.জে/