সাইদ মাহবুব, সুখবর ডটকম: বাংলা সিনেমার জীবন্ত কিংবদন্তি চিত্রনায়িকা শাবানা। বাংলার ঘরে ঘরে তিনি ছিলেন দেবীতুল্য অভিনেত্রী। সব শ্রেণির দর্শকের কাছে এই অভিনেত্রী ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্রী। বর্তমানে অভিনয়ে না থাকলেও তার কাজ দিয়ে তিনি আছেন সবার হৃদয়ে।
সাবলীল অভিনয়ের কারণে অতি অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়ে যান শাবানা। দর্শক পর্দায় খাটিঁ বাঙালি রমণীর ছায়া খুঁজে পায় অভিনেত্রী শাবানার অভিনয়ের মধ্যে। শাবানা নায়িকা চরিত্রে যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, ঠিক তেমনি মা বা ভাবীর চরিত্রে অভিনয় করে সমান দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন।
১৯৬৭ সালে ‘চকোরী’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নায়িকা হিসেবে আগমন ঘটে শাবানার। শাবানা প্রথম জীবনে উর্দু ছবিই বেশি করতেন। তিনি ১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ ছবিতে প্রথম ছোট্ট মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন এবং ১৯৬৩ সালে তিনি উর্দু ‘তালাশ’ ছবিতে নাচের দৃশ্যে অংশ নেন। এরপর বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তিনি এক্সট্রা হিসেবে কাজ করেন।
শহর বা গ্রামীণ তরুণী, বধূ, মাতা এবং ভাবীর চরিত্রে দক্ষতার সাথে অভিনয় করে গেছেন শাবানা। ১৯৯৭ সালে শাবানা হঠাৎ করেই চলচ্চিত্র-অঙ্গন থেকে বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর তিনি আর নতুন কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি। শাবানার উল্লেখ্যযোগ্য ছবি হলো চকোরী, আনাড়ি, সমাধান, জীবনসাথী, মাটির ঘর, লুটেরা, সখী তুমি কার, কেউ কারো নয়, পুত্রবধূ, রজনীগন্ধা, দোস্ত দুশমন, ওস্তাদ সাগরেদ, আক্রোশ, ভাত দে, অশান্তি, চাপা ডাঙ্গার বউ, দুই পয়সার আলতা, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, সারেন্ডার, বিজয়, অন্ধ বিশ্বাস, স্বাক্ষর, সান্ত্বনা, বিদায়, মরণের পরে, অচেনা, মাস্তান রাজা, কালিয়া, লক্ষ্মীর সংসার, রক্ত নিশান, গৃহযুদ্ধ, শ্রদ্ধা, স্নেহ, স্বামী কেন আসামী, বিশ্বনেত্রী, বাংলার নায়ক প্রভৃতি।
ঢাকার ছবিতে প্রায় ৩০ বছর ধরে শাবানা ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়িকা। শাবানা নাম শুনতেই দর্শকদের উন্মাদনা শুরু হয়ে যেত। শুধুমাত্র শাবানার নামেই হলে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় লেগে যেত। শাবানার রুপালী জগৎ থেকে চলে যাওয়ার পরও এখনও হাজারো মানুষ তাকে মনে রেখেছে। নায়িকাদের মধ্য তিনি সর্বাধিক সংখ্যক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ।
শাবানা ও ওয়াহিদ সাদিক তাদের চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা এস এস প্রোডাকশন প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৭৯ সালে। ওই বছর প্রথম ছবি নির্মাণ করেন ‘মাটির ঘর’। ছবিটি পরিচালনা করেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক প্রয়াত আজিজুর রহমান। এরপর ছুটির ঘন্টা, আমি সেই মেয়ে, স্বামী কেন আসামীসহ স্থানীয় ও যৌথ প্রযোজনায় প্রায় দুই ডজন ছবি নির্মাণ করেন এবং সবই বাম্পার হিট ব্যবসা করে।
তাদের প্রযোজিত সর্বশেষ ছবি ‘স্বামী কেন আসামী’। এটি মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। শাবানা ও ওয়াহিদ সাদিকের ছবির মাধ্যমেই ঢাকার ছবিতে অভিনয় করেন বলিউড অভিনেত্রী জয়া প্রদা, অভিনেতা চাঙ্কি পান্ডে, কলকাতার অভিনেতা-অভিনেত্রী রঞ্জিত মল্লিক, প্রসেনজিত, ঋতুপর্ণা সেনসহ অনেকে।
বাংলা চলচ্চিত্রের বিউটি কুইন-খ্যাত অভিনেত্রী শাবানা এবং তার স্বামী প্রখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক ওয়াহিদ সাদিক দীর্ঘ দুই যুগ পরে আবার চলচ্চিত্র নির্মাণে করছেন। এবার তারা ফের ভারতের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ করবেন। আর এই ছবিতে নায়ক থাকবেন বাংলাদেশের শাকিব খান এবং নায়িকা হতে পারেন বলিউড অভিনেত্রী কাজল অথবা বিদ্যা বালান। প্রযোজক ওয়াহিদ সাদিক এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
দেশীয় চলচ্চিত্রের প্রাণ ফেরাতে আবার চলচ্চিত্র নির্মাণে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তারকা এই দম্পতি ১৯৯৭ সালের দিকে চলচ্চিত্র জগৎ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হন। এরপর তারা প্রায় প্রতিবছরই দেশে আসলেও চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারেন নি। বর্তমানে ঢাকার চলচ্চিত্রকে ফের উজ্জীবীত করতে বিগ বাজেট ও অ্যারেঞ্জমেন্টে চলচ্চিত্র নির্মাণে আবারও ফিরছেন তারা।
প্রযোজক ওয়াহিদ সাদিক গণমাধ্যমকে জানান- “চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করবেন কলকাতার পরিচালক রাজীব কুমার বিশ্বাস। আর বাংলাদেশ থেকে একজন নির্মাতা নেওয়ার জন্য অনেকের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।“
ছবির গল্প প্রসঙ্গে ওয়াহিদ সাদিক বলেন, ছবিটি হবে যথারীতি পারিবারিক – অ্যাকশন ও রোমান্টিক গল্পের।
ছবিটিতে প্রখ্যাত অভিনেত্রী শাবানা অভিনয় করবেন কিনা জানতে চাইলে ওয়াহিদ সাদিক জানান, “না, তিনি এখন আর অভিনয় করবেন না, প্রযোজনাই শুধু করবেন।”
ওয়াহিদ সাদিক জানান, তাদের চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ‘এস এস প্রোডাকশন’ আবার নিয়মিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যাবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন দেশে সিনেমা হল ও সিনেপ্লেক্সের সংখ্যা বাড়ানো। কারণ দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিনেমা হল না থাকায় চলচ্চিত্র নির্মাণে লগ্নীকৃত অর্থ ফেরত আনার নিশ্চয়তার অভাবে নির্মাতারা এখন চলচ্চিত্র নির্মাণে সাহস পান না। তিনি সিনেমা হল বৃদ্ধির জন্য সরকার ও সিনেমা হল মালিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।
এম/ আই. কে. জে/
আরো পড়ুন:
জয়া আহসান : দুই বাংলায় সমানভাবে জনপ্রিয়তার রহস্য কী?