ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: পাকিস্তানি সিনেটের চেয়ারম্যান, মুহাম্মদ সাদিক সানজরানি সিনেটের পক্ষে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির কাছে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি লিখেছেন এবং ইউক্রেনের সংঘাত সমাধান প্রচেষ্টার কাজে “নোবেল শান্তি পুরস্কার” এর জন্য তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের মনোনয়ন নিবন্ধন করেছেন। উল্লেখ্য, রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান গত দুই দশক ধরে তুরস্কের অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রপতি এবং তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তুরস্কের পার্লামেন্টের স্পিকার, মুস্তফা শেনটপ বলেন যে, তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের মনোনয়নের সূচনা করেন। সেন্টপ আরো বলেন যে অন্যান্য দেশের পার্লামেন্টের স্পিকাররাও তার এ প্রচারকে সমর্থন জানান। এরদোগানের নোবেল প্রার্থিতার ব্যাপারে প্রথম সমর্থন আসে পাকিস্তানের সিনেটের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ সাদিক সানজরানির কাছ থেকে। মোহাম্মদ সানজরানি নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির কাছে তার চিঠিতে দাবি করেন যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুতই একটি পারমাণবিক ফ্ল্যাশপয়েন্টে পরিণত হয়েছিল যা সমগ্র বিশ্বের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারতো। এরদোগানের অক্লান্ত প্রচেষ্টার দরুণ, উভয় পক্ষের সাথে সময়োপযোগী এবং কার্যকর হস্তক্ষেপের কারণে, তিনি এককভাবেই একটি বৈশ্বিক বিপর্যয় এড়িয়ে গিয়েছেন।
এরদোগানকে একজন সত্যিকারের রাষ্ট্রনায়ক এবং নেতা হিসাবে অভিহিত করে তিনি বলেন, এরদোগান সবসময় কেবল তার দেশেরই নয়, এই অঞ্চল এবং বিশ্বের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট থাকেন। সানজরানি জোর দিয়ে বলেন যে, তুর্কি রাষ্ট্রপতি পবিত্র নবী মুহাম্মদের সত্য বার্তা বহন করেন এবং সমস্ত মানবতার জন্য শান্তি, সহনশীলতা এবং ভালবাসার শিক্ষা বহন করেন।
পাক-তুরস্ক জুটি বিশ্বব্যাপী ভারত-বিরোধী অবস্থানের অগ্রভাগে রয়েছে এবং ভারতীয় কাশ্মীরকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্যে বিখ্যাত। তুরস্ক গোপনে পাকিস্তানকে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অধীনে একটি সাইবার-আর্মি গঠন করতে সাহায্য করেছে যা অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক লক্ষ্যের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে, প্রেসিডেন্ট এরদোগান ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে সৃষ্ট সঙ্কট থেকে মর্যাদাপূর্ণ উপায় বের করার আহ্বান জানান। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার কিছুক্ষণ আগে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জরুরি আবেদন জানান।
তিনি বলেন, ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার ওপর ভিত্তি করে স্থায়ী শান্তি হতে হবে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তুর্কি তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
২০২২ সালের জুলাইয়ে, তুর্কি, রাশিয়া এবং ইউক্রেন সশস্ত্র সংঘাতের কারণে ফেব্রুয়ারীতে স্থগিত হওয়া কৃষ্ণ সাগরে তিনটি ইউক্রেনীয় বন্দর থেকে শস্য রপ্তানি পুনরায় শুরু করার জন্য ইস্তাম্বুলে জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এর নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগে, ল্যান্ডমার্ক শস্য চুক্তিটি ১৯ নভেম্বর ২০২২ থেকে শুরু করে আরও ১২০ দিনের জন্য বাড়ানো হয়। অন্য কথায়, এরদোগান বৃহত্তর সংঘাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার জন্য শস্য চুক্তিটিকে একটি ধাপ হিসেবে ব্যবহার করেন।
২০২২ সালের শেষের দিকে তুরস্ক ইউক্রেনে ডিজাইন করা, আর্টিলারি-চালিত ক্লাস্টার বোমা পাঠাতে শুরু করে। তুরস্ক ইউক্রেনকে সশস্ত্র ড্রোনও সরবরাহ করে যা কিয়েভে রাশিয়ার অগ্রগতি ভাঙতে সাহায্য করে। একই সময়ে, তুরস্ক রাশিয়ার অস্ত্র ক্রয় অব্যাহত রাখে।
এরদোগান রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছেন এবং তুরস্কের শুধুমাত্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ-অনুমোদিত নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করার নীতির সাথে সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন তুরস্কের জন্য অর্থনৈতিক সংযোগ বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ফলস্বরূপ, রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যে বাণিজ্য ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে উন্নত হয়েছে। রাশিয়ায় তুরস্কের রপ্তানি ৮৬ শতাংশ বেড়ে ১১.৫ কোটি ডলার হয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া থেকে আমদানি দ্বিগুণ হয়ে ৫০.৩ কোটি ডলার হয়েছে।
তুরস্ক এরদোগানের অধীনে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হওয়ায় পর্যটন এবং অন্যান্য বৈদেশিক আয় গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছে।
মজার ব্যাপার হল, প্রেসিডেন্ট পুতিন তুরস্ককে ইউরোপের বাজারে রাশিয়ান গ্যাস বিক্রির কেন্দ্রে পরিণত করার ধারণাটি তুলে ধরেছিলেন, নগদ অর্থের সংকটে থাকা তুরস্কের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় প্রণোদনা ছিল। ২০২২ সালে রাশিয়া থেকে আসা প্রাকৃতিক গ্যাস তুরস্কের চাহিদার ৪৫ শতাংশ পূরণ করে এবং আঙ্কারা তার অর্থপ্রদান ২০২৪ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছেন।
একজন বিশ্লেষক পরামর্শ দেন যে, দুইদেশের এই অর্থপ্রবাহ প্রধানত রাশিয়ান অর্থ। প্রেসিডেন্ট পুতিন এখন দৃঢ়ভাবে এরদোগানকে তার পুনর্নির্বাচন নিশ্চিত করতে সমর্থন করছেন। এইভাবে, প্রেসিডেন্ট এরদোগান তার পুনঃনির্বাচন নিশ্চিত করতে দূর দুরান্তে জাল বিস্তার করেছেন।
অন্যদিকে পাকিস্তান এখন অর্থনৈতিক অবনতির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। এমন একটি দেশের জন্য এরদোগানকে সমর্থন করা যুক্তিসঙ্গত নয়।
আইকেজে /