spot_img
28 C
Dhaka

২৬শে মার্চ, ২০২৩ইং, ১২ই চৈত্র, ১৪২৯বাংলা

ঢাকায় আবার চালু হচ্ছে বৃত্তাকার নৌপথ

- Advertisement -

ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: সড়কের ওপর থেকে চাপ কমাতে ঘটা করে কয়েক দফায় ঢাকা ঘিরে বৃত্তাকার নৌপথে যাত্রী পরিবহন শুরু করা হলেও কোনো উদ্যোগই বেশিদিন টেকেনি। ফলে সড়কের অবস্থা রয়ে গেছে আগের মতোই।

তবে যাত্রীদের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার নতুন করে এই সেবা চালু করতে চাইছে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

অন্যদিকে পরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক মো. শামসুল হক আগের উদ্যোগে পেশাদারিত্ব এবং জবাবদিহিতার অভাব দেখছেন।অবস্থা একই রকম থাকলে নতুন উদ্যোগও সফল হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন না তিনি।

২০০৪ সালে প্রথম ঢাকা থেকে গাবতলী পর্যন্ত একটি যাত্রীবাহী ওয়াটার ট্যাক্সি নামানো হয়েছিল। তারপর ২০১০ সালে ২৮ আগস্ট দুটি ওয়াটার বাস নামানো হয়। কিন্তু যাত্রীর অভাব ও ওয়াটার বাসে ত্রুটির কারণে সেবাটি বন্ধ হয়ে যায়।

তৃতীয় বার ২০১৩ সালে জুলাই মাসে ওয়াটার বাসায় নামানো হয়। সেসময় চারটি এবং আগের দুটি মিলিয়ে মোট ছয়টি ওয়াটার বাস নামানো হয়। কিন্তু কিছুদিন চলার পর তাও বন্ধ হয়ে যায়।

নারায়ণগঞ্জ থেকে কাঁচপুর হয়ে টঙ্গী পর্যন্তও ওয়াটার বাস নামিয়েছিল সরকার ২০১৪ সালের ২২ নভেম্বর; সেটিও টেকেনি।

এসব উদ্যোগ চালু থাকলে ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সদরঘাট থেকে সোয়ারীঘাট, কেরানীগঞ্জের খোলামুড়া, বসিলা, গাবতলী ও আশুলিয়া আর পূর্বাঞ্চাললের মানুষ নারায়ণগঞ্জ থেকে কাঁচপুর, ডেমরা, রাজাখালী, বেরাইদ বাজার, ইছাপুরা ও টঙ্গী যাতায়াত করতে পারত। ফলে সড়কের উপর চাপ অনেক কমে যেত।

সরকারের ভাবনা

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ঢাকার নৌপথে বেশকিছু বাধা রয়েছে বলে জানিয়েছেন, যার একটি হচ্ছে কয়েকটি নিচু সেতু।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা ঘিরে থাকা চারটি নদীতে মোট ১৩টি সেতু রয়েছে। এগুলো হল বুড়িগঙ্গা প্রথম ও দ্বিতীয়, বসিলা, আমিন বাজার, বিরুলিয়া, ধৌড়, প্রত্যাশা, কামারপাড়া, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গীর রেলওয়ে, কায়েতপাড়া, ডেমরার সুলতানা কামাল ও কাঁচপুর সেতু।

বিআইডব্লিউটিএর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বুড়িগঙ্গা দুটি ও কাঁচপুর সেতু ছাড়া বাকিগুলোর নিচ দিয়ে বর্ষা মৌসুমে জাহাজ চলে না।

প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “ঢাকার চারিদিকে বৃত্তাকার নৌপথে কিছু বাধা রয়েছে। যেমন কয়েকটি নিচু সেতু রয়েছে। এখন (সেতুগুলোর নিচ দিয়ে) ছোট নৌযান চলতে পারে কিন্তু বড়গুলো পারে না। তাছাড়া নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে সীমানা প্রাচীরও বসানো হচ্ছে।

“নদীর পলিথিনসহ নানা বর্জ্যও অপরাসরণের কাজ রয়েছে। ড্রেজিং কাজ করা ছাড়াও বিদেশি এক্সপার্টদের সঙ্গেও কথাবার্তা হচ্ছে কিভাবে ঢাকার চারিদিকের নদীকে আপডেট করে বহুমাত্রিক কাজে লাগানো যায়।”

তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাস্টারপ্লান বাস্তবায়ন হলে নদী দখল, দূষণ থাকবে না। সেতুগুলোর বিষয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয়ের বৈঠক হবে। যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালেই ত্রিমাত্রিক সড়ক, রেল ও নৌপথের একটা পরিকল্পনার কথা বলেছেন। সেটা বাস্তবায়ন হলেই …।”

আগের উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় প্রতিমন্ত্রী খালিদ বলেন, “বাসগুলো যখন কেনা হযেছিল তখন আপডেট বাস নেওয়া হয়নি। বাসগুলো যাত্রীবান্ধব ছিল না। যদি যাত্রীবান্ধব করতে না পারি, তাহলে মানুষ যাবে না। দেখুন ট্রলারেও মানুষ যাতায়াত করছে।”

ওয়াটার বাসগুলো বর্তমানে কেরানীগঞ্জে যাত্রী পারাপার করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বৃত্তাকার নৌপথে যাতায়াতের জন্য যাত্রী পেতে হলে ওয়াটার বাসের মান বাড়াতে হবে। সেটা আমরা চিন্তাভাবনা করছি। বৃত্তাকার নৌপথ বন্ধ নেই। মানুষ ও মালামাল পরিবহন হচ্ছে, কিন্তু সেভাবে হচ্ছে না। যেহেতু আমরা যাত্রীদের মনোভাব বুঝতে পারছি, সেভাবেই নৌযান সংগ্রহ করব এবং রুটটা চালু করার চিন্তাভাবনা করছি।”

কি বলছেন বিশেষজ্ঞ?

পরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েট অধ্যাপক মো. সামছুল হক বলেন, “নৌপথের প্রজেক্ট করে শুধু সেদিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। নৌপথ কখনও একা সারভাইব করে না। এর সঙ্গে সড়কের একটা সমন্বয় থাকতে হয়। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় তারা কিভাবে তাদের পরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত করেছে।

“সেসব দেশের পরিবহন ব্যবস্থার দিকে তাকালেই দেখা যায় যে, নৌপথে এসেই সে (যাত্রী) আরেকটা বাহন পেয়ে যায়, কোনো কষ্ট করতে হয় না। অনেক ক্ষেত্রে এক টিকিটে পেয়ে যায়। অর্থাৎ যারা পেশাদার, তারা মানুষের চাহিদা বোঝেন।”

পেশাদারিত্বের গুরুত্ব বোঝাতে তিনি বলেন, “পেশাদার লোক কখনও মানুষের যাত্রাপথের খণ্ডিত অংশের সমাধান দেয় না। এতে জনগণের কোনো লাভ হয় না। আমাদের এখানে সব প্রজেক্ট খণ্ডিত, সমন্বিত নয়। কারণ আমরা পেশাদার না।”

বৃত্তাকার নৌপথ চালুর উদ্যোগ সফল না হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে অধ্যাপক সামছুল বলেন, “বৃত্তাকার নৌপথের প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছিল শুধু নৌযানের উপর ভিত্তি করে। সুতরাং সদরঘাটে নামার পর আমার সড়কের গাড়ি পেতে যদি ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত হাঁটতে হয়। তাহলে মানুষকে আকর্ষণ করবে কিভাবে?

“অনেক সম্ভবনা থাকা সত্ত্বেও সড়কের যানজটের ভার কমাতে পারছে না নৌপথ; শুধু একটির সঙ্গে আরেকটি সংযোগের অভাবে।”

নতুন পরিকল্পনাও সফল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখেন না এই বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন, “সড়কের উন্নয়নের কথা বলে নদী পথের যে গেইট রুম রাখার কথা সেটাও রাখা হয়নি। ঢাকার চারপাশের সেতুর নিচ দিয়ে বর্ষা মৌসুমে ওয়াটার বাস চলতে পারেনা। কারণ নদীর গেইট রুম রাখা হয়নি। বিষয়টি জট লেগে আছে। সমন্বয়হীন অবস্থায় আছে।

“তাহলে অনেক টাকা কেন খরচ করা হয়েছে? এর জন্য কিন্তু দায়বদ্ধতা নেই। দায়হীন সংস্কৃতি চলতে থাকলে হবে না। প্রজেক্ট নেবে কিন্তু দায় নেবে না, তা তো হয় না। দায় নিলেই ফলাফল আসবে।”

ব্যর্থতার চক্র থেকে বের হওয়ার উপায়ও বাতলে দিলেন বুয়েটের এই অধ্যাপক।

“অবকাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়াও নদীপথে আড়াআড়ি নৌকা চলাচল বন্ধ করতে হবে। কিন্তু বুড়িগঙ্গাসহ অন্যান্য নদীতে প্রচুর আড়াআড়ি নৌকা চলাচল করে। এতে দ্রুতগামী নৌযান চলাচল ব্যহত করে।

“আমাদের পাশের দেশ ভারতের হুগলি নদীতে আড়াআড়ি নৌকা চলে না।বালুবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ করতে হবে। দ্রুতগামী নৌযান চলাচলের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দ্রুতগামী নৌযান দুই পাশে প্যারালাল চলবে, কোনো আড়াআড়ি নৌযান চলবে।”

তবে আবারও সমন্বিত উদ্যোগ আর জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ওপর জোর দেন তিনি।

সামছুল হক বলেন, “ঢাকার চারদিকের নৌপথ সুন্দরভাবে চালু করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবেশের উন্নয়ন আর ব্যবসাবন্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।”

আর প্রকল্প কেন সফল হয়নি- এই জবাবদিহিতা থাকলে সবকিছুই সুন্দর হবে বলে মত দেন এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ।

সূত্র: বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম।

- Advertisement -

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলো করুন

25,028FansLike
5,000FollowersFollow
12,132SubscribersSubscribe
- Advertisement -

সর্বশেষ