সাইদ মাহবুব, সুখবর ডটকম: দুই বাংলায় সমানভাবে জনপ্রিয় জয়া আহসান। তার অভিনয়শৈলী দর্শকপ্রিয়। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সেও চেহারায় চোখ ধাঁধানো জেল্লা। এই বয়সে এমন ফিটনেস কী করে ধরে রেখেছেন সে এক রহস্য!
জয়া ১লা জুলাই ১৯৮৩ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাদের আদি বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা এ এস মাসউদ এবং মা রেহানা মাসউদ ছিলেন একজন শিক্ষিকা। তারা দুই বোন এক ভাই। অভিনয় শুরুর আগে জয়া নাচ ও গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি ছবি আঁকা শিখেছিলেন। তিনি একটি সংগীত স্কুলও পরিচালনা করেন। তবে ১৯৯৭ সালে কোকা-কোলার বিঞ্জাপনের মাধ্যমে তাকে প্রথম টিভিতে দেখা যায়। এরপর তিনি টিভি ধারাবাহিক পঞ্চমীতে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় জীবনের যাত্রা শুরু করেন।
১৯৯৮ সালের ১৪ই মে জয়া, টেলিভিশন অভিনেতা এবং মডেল ফয়সল আহসানকে বিয়ে করেন। তাদের দুজনকে একইসাথে টিভি বিজ্ঞাপনে কাজ করতে দেখা গেছে। তারা দুজনে একত্রে একটি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিও পরিচালনা করেছেন। অবশ্য ২০১১ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

এরপর তিনি পরপর বেশ কিছু সিরিয়ালে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। টেলিভিশন ধারাবাহিকের মধ্যে লাবণ্য প্রভায় মনিকা এবং শঙ্খবাঁশ এর পুষ্প চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ২০০৯ সালে মেজবউর রহমান সুমনের ‘তারপরও আঙ্গুরলতা নন্দকে ভালোবাসে’ নামক সিরিয়ালে অভিনয় করে জয়া খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেন। এরপর একে একে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেন।
২০০৪ সালে জয়া ব্যচেলর সিনেমায় অতিথি শিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর ২০১১ সালে ‘গেরিলা’ সিনেমাটি মুক্তি পায়। নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত। সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটি৷ যৌথভাবে চিত্রনাট্য রচনা করেছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও এবাদুর রহমান। গেরিলা সিনেমাতে জয়া প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সু্যোগ পান। সিনেমাটি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় নির্মিত। সেখানে জয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এরপর তিনি রিদোয়ান রনির সিনেমা চোরাবালিতে এক সাংবাদিক চরিত্রে অভিনয় করে পুনরায় জাতীয় পুরষ্কারে সম্মানিত হন।
দেশে অভিনীত একাধিক সিনেমায় জয়া নিজের দুর্দান্ত অভিনয় প্রতিভার পরিচয় দেন। এরপর তিনি ভারতের কলকাতায় ২০১৩ সালে অরিন্দম শীলের ‘আবর্ত’ তে অভিনয় করেন। জয়া অভিনয় প্রতিভার জন্য ৬৬তম কান ফিল্ম ফেস্টিভালের নিমন্ত্রণ পান। এরপর তিনি একে একে অনিমেষ আইচ এর জিরো ডিগ্রি, সৃজিত মুখার্জীর রাজকাহিনী, এক যে ছিল রাজা, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর একটি বাঙ্গালী ভূতের গল্প প্রভৃতি সিনেমায় দাপটের সাথে অভিনয় করেছেন। তিনি ঋতুপর্না সেনগুপ্ত, সোহিনী সরকার,পার্নো মিত্র, আবীর চ্যাটার্জি, রজতাভ দত্ত, কৌশিক গাঙ্গুলি, প্রসেনজিত চ্যাটার্জি প্রমুখ অভিনেতাদের সাথে অভিনয় করেছেন।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলি হল- ব্যাচেলর, ডুবসাঁতার, ফিরে এসো বেহুলা, গেরিলা, চোরাবালি, আবর্ত, পূর্ণ দৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি, জিরো ডিগ্রি, একটি বাঙ্গালী ভূতের গল্প, রাজকাহিনি, ইগলের চোখ, ভালবাসার শহর, বিসর্জন, খাঁচা, আমি জয় চ্যাটার্জি, পুত্র, দেবী, এক যে ছিল রাজা, ক্রিসক্রস, বিজয়া, বৃষ্টি তোমাকে দিলাম, কন্ঠ।
অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি চারটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ছয়টি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ও তিনটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। এছাড়া কলকাতায় ‘বিনি সুতোয়’ চলচ্চিত্রের জন্য জয়া আহসান অর্জন করেন জিও ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের সেরা অভিনয়শিল্পীর সম্মাননা।
এবার একই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তাকে দেওয়া হলো বাংলা ভাষার জনপ্রিয় সাময়িকী আনন্দলোক সেরা অভিনেত্রী সম্মাননা। সমস্ত জল্পনা কল্পনাকে পেছনে ফেলে, চড়াই উৎরাই পার করে তার সৌন্দর্য আর প্রদীপ্ত অভিনয়ের মাধ্যমে দেশের মানুষের মন যেমন জয় করেছন, তেমনি দেশের গন্ডি পেরিয়েও সুনাম অর্জন করে চলেছেন।
এম/ আই. কে. জে/
আরো পড়ুন:
মধ্যরাতে বন্ধু সালমানকে শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে গেলেন শাহরুখ খান