ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: হিমালয় থেকে তাইওয়ান পর্যন্ত চীনের যে বাহ্যিক বিবাদ সেটা তার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বেরই প্রতিফলন। চীনা সেনাবাহিনীও তাদের জাতীয় অস্থিতিশীলতা ভুলতে যুদ্ধকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
নয়াদিল্লি, তাইপেই কিংবা পশ্চিমা বিশ্বকে উত্যক্ত করার মাধ্যমে চীন হয়ত গত তিন বছর ধরে চলা মহামারীর কারণে তার জনগণের সমস্ত হতাশা, অভিযোগগুলোর প্রতি জনগণের মনোযোগ সরাতে চায়।
চলতি বছরের ৯ ডিসেম্বর, ভারতের অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সেক্টরে, বিতর্কিত সীমান্ত রেখার কাছে চীনা ও ভারতীয় সৈন্যদের মাঝে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষেরই অনেক সেনাসদস্য আহত হন।
১৩ ডিসেম্বর, নয়া দিল্লিতে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, রাজনাথ সিং এ ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি জানান, গত ৯ ডিসেম্বর, পিপলস লিবারেশন আর্মি (চীন) এর সৈন্যরা একতরফাভাবে স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করে। তারা অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং জেলার ইয়াংটসে এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী সাহসিকতার সাথে চীনের এ প্রচেষ্টার মোকাবেলা করে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দৃঢ়তায় চীন পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে এ ঘটনায় উভয় পক্ষেরই কয়েকজন সেনা আহত হয়।
বেইজিংয়ের পক্ষে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র, গুইলার্ড জানান, সমগ্র বিষয়কে ভিন্নভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। তার মতে, চীন এবং ভারতের মধ্যকার সীমান্ত পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে স্থিতিশীল।
তিনি আশা রাখেন, ভারত ও চীন, উভয় দেশের নেতাদের ঐকমত্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে এবং দুইদেশের স্বাক্ষরিত চুক্তির মর্যাদা রক্ষা করবে।
১৩ ডিসেম্বর, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আন্তঃরাজ্য উত্তেজনা বজায় থাকবে। তাওয়াং থেকে ৩০০০ কিমি পূর্বে,পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের সশস্ত্র বাহিনি আকাশপথে কাজ করে যাচ্ছে।
তাইওয়ানের খাদ্য, পানীয়, মদ এবং মাছের আমদানিতে বেইজিংয়ের নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের এক সপ্তাহ পর, তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাইওয়ানের বিমান প্রতিরক্ষা অঞ্চলে ২১ টি চীনা বিমানের উপস্থিতির নিন্দা জানায়। গুইলার্ড বলেন, তাইওয়ানের উপর বেইজিংয়ের সামরিক হুমকি আগের চেয়েও আরো গুরুতর হয়েছে।
অবশ্য, বেইজিংয়ে গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০ তম কংগ্রেসের সময়েই এটা ভালোভাবে বুঝা গিয়েছিল যে চীনের নেতা শি জিনপিং যেভাবে দেশের বাইরে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন এটা আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই চীনের সম্পর্কে মোটামুটি সবাইকেই সতর্ক থাকা উচিত।
চীনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার সবচেয়ে বড় উপায় হলো ভারত এবং চীনের বিরোধী দলগুলোর সাথে হাত মেলানো, যেন সবাই একত্রিতভাবে চীনের মোকাবেলা করতে পারে।
মূলত, নভেম্বরের শেষ দিকে চীনে দেখা দেওয়া অর্থনৈতিক মন্দা, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জনগণের হতাশা এসব থেকে জনগণের মনোযোগকে সরাতে এবং জনগণের সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ কমানোর জন্যই চীন এসব কর্মকাণ্ড করছে।
শি’এর শূন্য কোভিড নীতি তুলে নেওয়ার পর বেইজিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। পুলিশ যেন এখন আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পুলিশের এই অতিরিক্ত সংঘবদ্ধকরণ একই সময়ে চীনের অভ্যন্তরে এবং বাইরে (চীন-ভারত সীমান্ত, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগর) উত্তেজনার কারণ হতে পারে।
চীন তিন বছরের ঘরোয়া মহামারীর ফলে বিপর্যস্ত জনগণদের ক্ষোভের নিরসন না করে নয়া দিল্লি, তাইপেই এবং পশ্চিমা বিশ্বকে উত্যক্ত করে যাচ্ছে এবং এটি অবশ্যই চীনের কোন কূটনৈতিক কারণ।
আই. কে. জে/