ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: ম্যাগেশিমা দ্বীপে একটি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিকটবর্তী রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জে জাপানের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করা এবং শত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করা।
ম্যাগেশিমা, জনবসতিপূর্ণ তানেগাশিমা দ্বীপ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি আট বর্গ কিলোমিটারের জনমানবহীন দ্বীপ। ২০১১ সালে মার্কিন ফিল্ড ক্যারিয়ার ল্যান্ডিং অনুশীলনের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল এ দ্বীপটি। বর্তমানে এ অনুশীলন টোকিও থেকে ১,২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপে পরিচালিত হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, জাপানের সামরিক ঘাঁটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে চার বছর ধরে চলবে এ নির্মাণ কাজ। এখানে দুইটি রানওয়ে, একটি কন্ট্রোল টাওয়ার এবং একটি বিস্ফোরক ডিপো স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ম্যাগেশিমা নানসেই দ্বীপপুঞ্জের প্রতিরক্ষার জন্য সরবরাহ এবং রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র হিসাবেও কাজ করবে।
এই ম্যাগাশিমা দ্বীপের কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে। এটি রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এই রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জের মধ্য দিয়েই চীনা নৌযানগুলোকে প্রশান্ত মহাসাগরে পৌঁছাতে হয়। তাছাড়া জনমানবহীন দ্বীপ হওয়ার কারণে এখানে বিমানের শব্দ এবং নিরাপত্তা নিয়ে এত চিন্তার কোনও কারণ নেই।
তাছাড়া ম্যাগেশিমার সমতল ভূখণ্ড রয়েছে, যা এয়ারফিল্ড নির্মাণকে আরো সহজ করে তোলে। জাপানি স্ব-প্রতিরক্ষা বাহিনীর (জেএসডিএফ) শুধুমাত্র নানসেই দ্বীপপুঞ্জেই সীমিত সংখ্যক ঘাঁটি রয়েছে এবং ম্যাগেশিমায় জাপানের সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের মাধ্যমে এটি জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের বিরুদ্ধে গভীরভাবে প্রতিরক্ষা পরিচালনা করতে সক্ষম করবে।
জাপানের ম্যাগেশিমাকে একটি দ্বীপ বিমানঘাঁটি হিসেবে স্থাপনের পরিকল্পনাও একটি বৃহত্তর সামরিক কৌশলের অংশ হতে পারে। ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এফপিআরআই) ২০২২ সালের এপ্রিলে, একটি নিবন্ধে, ফেলিক্স চ্যাং উল্লেখ করেছেন যে, জাপানের দ্বীপ ঘাঁটিগুলো একটি কৌশলের দিকে ইঙ্গিত করে যার উদ্দেশ্য কেবল চীনকে সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ দখল করা থেকে বিরত রাখা নয় বরং তার বৃহত্তর নৌঘাঁটি নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষাকেও দমন করা।
চীনের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার ক্ষমতা উন্নত করতে তার দক্ষিণ-পশ্চিম দ্বীপপুঞ্জ এবং কিউশুতে দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে জাপান এমনিতেই প্রতিরক্ষার ব্যাপারে এগিয়ে রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, জাপান ম্যাগেশিমায় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করতে পারে।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ম্যাগেশিমায় স্থাপন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ম্যাগেশিমাতে যৌথ জাপান-মার্কিন ঘাঁটি প্রকল্পের লক্ষ্যও সম্ভবত প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন ঘাঁটির অবস্থানকে শক্তিশালী করা। তবে জাপান আর মার্কিন বাহিনীর জন্য অভয়ারণ্য নয়। কারণ চীন এবং উত্তর কোরিয়া দূরপাল্লার সক্ষমতাসম্পন্ন এবং স্যাটেলাইট নজরদারি-ভিত্তিক প্রযুক্তি তৈরি করেছে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।
ধারণা করা হচ্ছে, তাইওয়ান-চীন যুদ্ধের মতো ঘটনা ঘটলে, চীন সম্ভবত ওকিনাওয়ার সামরিক ঘাঁটিতে একটি প্রি-এমপটিভ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করবে, যার লক্ষ্য হবে মার্কিন এবং জাপানের বিমান শক্তিকে ধ্বংস করা।
এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই আক্রমণের বিরুদ্ধে তার সুবিধাগুলোকে কঠোর করতে হবে, বিস্তৃত এলাকায় বাহিনীকে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উন্নত করতে হবে। সুতরাং, ম্যাগেশিমায় জাপান-মার্কিন ঘাঁটি সেই দিকে একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ হতে পারে।
তবে কিছু দল আবার ম্যাগেশিমায় সামরিক নির্মাণ নিয়ে আপত্তি প্রকাশ করেছে। তাদের মতে ম্যাগেশিমায় সামরিক কার্যকলাপ তার আশেপাশের দ্বীপগুলোর দৈনন্দিন জীবনকেও প্রভাবিত করবে। তাছাড়া এটি সামুদ্রিক জীবন, এলাকার মৎস্যসম্পদকেও প্রভাবিত করবে। প্রকল্পটি জমি পুনরুদ্ধারের সাথে জড়িত কিনা সে বিষয়টিও বিবেচনা করা উচিত।
এ দলগুলো আরো বলে যে, জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (এমওডি) প্রকল্প সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট বিবরণ গোপন রেখেছে এবং শুধুমাত্র ১২ জানুয়ারি একটি পরিবেশগত মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে।
আই. কে. জে/