লাইফস্টাইল ডেস্ক, সুখবর ডটকম: এমন কিছু পানীয় উল্লেখ করা হল, যা গোপনে শরীরে বাড়তি ক্যালোরি যোগ করছে। আর ওজন কমানোর পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে ওত পেতে বসে আছে। কিছু কিছু পানীয় আছে, যা খেতে শুরু করলে শেষ করা যায় না। আর তাতেই শুরু হয় জটিলতা। চটজলদি এগুলোই নিয়ে আসে বাড়তি ক্যালোরি। আর সেটাই কিছুতেই ওজন কমাতে দেয় না।
কঠোর ব্যায়াম থেকে মাইল মাইল হাঁটা, এমনকী ডায়েট পরিবর্তন করলেও, ওজন কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না? আসলে লুকিয়ে লুকিয়ে এমন ড্রিঙ্কে চুমুক দিলে তো এমনই হওয়ারই কথা। খাবারের আগে-পরে খাওয়া পানীয় থেকে আসা খালি ক্যালোরিগুলোর কী হবে? এখানে এমন কিছু পানীয় উল্লেখ করা হল, যা গোপনে শরীরে বাড়তি ক্যালোরি যোগ করছে। আর ওজন কমানোর পরিকল্পনা ভণ্ডুল করার জন্য ওত পেতে বসে আছে।
>> কফি-
কফি অনুরাগীরা মনে করতে পারেন যে, তিক্ত কফি হয়তো ওজন কমানোর জন্য খুব ভাল। আসলে কথাটা পুরোটা মিথ্যে নয়। কফি ওজন কমাতে অক্ষম হওয়ার পিছনে অন্য কারণ রয়েছে! সঠিক উপায়ে ক্যাফেইন গ্রহণ করলে তা ওজন কমাতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু চিনি, ক্রিম, অত্যধিক দুধ এবং হুইপড ক্রিমের সঙ্গে কফি মেশালে এর কার্যকারিতা কমে যায়। বরং তাতে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়তে পারে। প্রকৃতপক্ষে, বিশেষজ্ঞরা ব্ল্যাক কফি খাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে ব্ল্যাক কফি তেঁতো মনে হলে এভাবে বানিয়ে নেওয়া যায় বাটার কফি।
লাগবে- ১ ১/২ কাপ পানি। একটি প্যানে ১ ১/২ কাপ পানি ১ চা চামচ কফি দিয়ে মিশ্রণটি তৈরি করতে হবে। এর মধ্যে একটি বড় বাটিতে মাখন, নারকেল তেল, দারচিনি, জায়ফল (ঐচ্ছিক) দিয়ে সবকিছু একসঙ্গে ফেটিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি ফেনা-ফেনা হয়ে গেলে ২ টেবিল চামচ ফেনাযুক্ত মিশ্রণে ১ কাপ উষ্ণ কফি ঢেলে ভাল করে মেশাতে হবে। ওয়ার্কআউটের পরে অনায়াসে এই পানীয়টি বানিয়ে পেটের চর্বি কমানো যায়।
>> প্রিমিক্সড টি-
ওজন কমানোর জন্য, প্রিমিক্সড ড্রিঙ্কগুলো সবচেয়ে সুবিধাজনক বিকল্প মনে হলেও বাস্তব কিন্তু একেবারে আলাদা। আসলেও প্রিমিক্সড চা কিছুই নয়, চিনি সেখানে চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া থাকে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে এটি শুধুমাত্র ক্যালোরি বাড়িয়ে তোলে। সবথেকে ভাল হয় যদি, তাজা চা তৈরি করা যায়। বা স্বাস্থ্যকর এবং আরামদায়ক ভেষজ চায়ের বিকল্পগুলি বেছে নেওয়া যায়। যেমন এই লেমন গ্রিন টি রেসিপি-
লেমন গ্রিন টি: গ্রিন টি-র সঙ্গে লেবু পানীয়র স্বাদ তো বাড়ায়ই, চর্বিও ঝরায় দ্রুত। এর জন্য লাগবে – এক কাপ পানি, এক চা চামচ অরগ্যানিক গ্রিন টি পাতা, ১/২ লেবু, ১/২ চামচ মধু। এক কাপ পানি ফুটিয়ে তাতে দিতে হবে অরগ্যানিক গ্রিন টি পাতা। ১০ মিনিট পানি ফুটুক। এরপর একটা কাপে চা ছেঁকে তাতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে দিতে হবে। স্বাদ বাড়ানোর জন্য মধুও দেওয়া যায়।
>> কার্বনেটেড ড্রিঙ্কস-
কোল্ড ড্রিঙ্কস, সোডাভিত্তিক এনার্জি ড্রিঙ্কগুলো তাদের লোভনীয় স্বাদ দিয়ে সাময়িক তৃষ্ণা মেটাতে পারে ঠিকই, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে এই পানীয়গুলো কেবলমাত্র প্রচুর পরিমাণে চিনি এবং ক্যালোরি দিয়ে ভরা হয় যা মাত্র তাৎক্ষণিকভাবে শক্তির মাত্রা বাড়াতে সক্ষম।
শক্তির এই হঠাৎ আগমন ধীরে ধীরে কমেও আসে, আর তখনই শরীরে জলের অভাব অনুভূত হয়। তখন এটা রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক গুণ বাড়িয়ে তোলে। ফলত হার্টের সমস্যা থেকে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, সঙ্গে বাড়ায় ওজন।
>> মদ-
ওয়াইন, বিয়ার এবং অন্যান্য অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় যদি প্রতিদিনের সঙ্গী হয় তবে ওজন কমানোর পরিকল্পনা না করাই ভাল। একটি ডিজিটাল দৈনিকে প্রকাশিত সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকায় এক সার্ভেতে দেখা গিয়েছে যে আমেরিকান প্রাপ্তবয়স্করা অ্যালকোহল যুক্ত পানীয় থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০ ক্যালোরি গ্রহণ করেন। প্রকৃতপক্ষে, রাতের খাবারের সঙ্গে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়তে চুমুক দেওয়া ক্যালোরির সংখ্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যার ফলে দেখা দেয় হজমের সমস্যা।
>> ফলের রস-
ফলের রসে যতই ‘স্বাস্থ্যকর’ লেবেল লাগিয়ে দেওয়া হয় না কেন, আদতে এটা সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর পানীয়গুলির মধ্যে একটি। এর কারণ হল বাজারে প্যাকেট করা ফলের রসে ভাল স্বাদ আনার জন্য চিনি এবং নানা প্রিজারভেটিভ মিশিয়ে প্যাক করা হয়। যা ক্যালোরির সংখ্যা ফালতু বাড়িয়ে ডায়েট পরিকল্পনা নষ্ট করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে প্যাকেটের জুসের পরিবর্তে তাজা জুস বেছে নেওয়া ভাল, কারণ তাতে বাড়তি চিনি মেশানো থাকে না। ফলে ওজন বাড়াতে পারে না। কিন্তু বাজারে পাওয়া জুস স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এম এইচ/ আই. কে. জে/
আরও পড়ুন:
শীতকালে রাতে মোজা পরে ঘুমাবেন না