নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর বাংলা: গুরুদাসপুরে বেড়ঙ্গারামপুর কানু মোল্লার বটতলায় বসে নাটোরের সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার। ওইখানে ২০ থেকে ২৫টি ফল বিক্রির আড়ৎ রয়েছে। থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য গ্রীষ্মকালীন এই ফল। দূরদূরান্ত থেকে ফরিয়ারা আসছে সেগুলো ক্রয় করতে। যাবে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে। এ নিয়ে বাগান মালিকদের একদিকে স্বপ্ন পূরণের আশা, অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়ায় ন্যায্য মূল্য নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। আবহাওয়া অনুকুলে না থাকলে লোকসানও গুনতে হতে পারে তাদের।
চলনবিল অঞ্চলের নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, পাবনার চাটমোহর ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় লিচুর আবাদ হচ্ছে।
এছাড়াও মোল্লা বাজার, বিয়াঘাট সুজার মোড়, মশিন্দা, তাড়াশের ধামাইচ হাট, সিংড়ার বাহাদুরপুর বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে চলছে পুরোদমে খুচরা ও পাইকারি লিচু বেচা-কেনা। এছাড়া ফরিয়া ও মহাজনরা বিভিন্ন গ্রামের বাগানগুলোতেও গিয়ে লিচু ক্রয় করে প্রতিদিন নিয়ে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে।বেড়ঙ্গারামপুর কানু মোল্লার বাজার আড়ৎ সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন মোল্লা জানান, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫টি ট্রাক বোঝাই ঝুড়িভর্তি লিচু চলে যাচ্ছে চলনবিল ছেড়ে শহরে। প্রতি ছোট ঝুড়িতে ১ হাজার, মাঝারিতে ২ ও বড়গুলোতে ৩ হাজার লিচু থাকে। প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ১২শ থেকে ১৬শ টাকায়। এ বছর ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় বাজার ইজারা নিয়েছেন। বেচা-কেনা সর্বোচ্চ ১৫ দিন চলতে পারে।
সরেজমিনে চলনবিল অঞ্চলের বিভিন্ন বাগান ও আড়তে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত লিচু ভাঙার কাজে ব্যস্ত শ্রমিকসহ পরিবারের ছোট বড় সকলকে। সেগুলো সময় মতো নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় আড়তে। বাগান মালিকদের রসালো ফল লিচুতে জমে উঠেছে বাজারসহ আড়তগুলো। মৌসুমী ফল লিচুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী সব আড়ৎ।
ভোর থেকে রাত অবধি চলছে চলনবিলের বিভিন্ন লিচুর আড়তে বেচা-কেনা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা লিচু ক্রেতা, মহাজন, পাইকার ও ফড়িয়াদের কেনাকাটায় মুখরিত এখন আড়ৎগুলো। এ ছাড়া জমি থেকে পাইকারি ও ক্ষুদ্র মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে লিচু সংগ্রহ করছেন নগদ টাকায়। কেউবা আবার অগ্রিম টাকাতেও কিনে রেখেছেন বাগান।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চলনবিল অঞ্চলে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়েছে। তার মধ্যে শুধু গুরুদাসপুর উপজেলাতেই ৪১০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লিচুর চাষ হয় উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নে। বর্তমানে চলনবিলের উৎপাদিত লিচু এখন ফরিয়া ও মহাজনদের হাত বদলে চলে যাচ্ছে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, যশোর, ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেটসহ দেশের নানা প্রান্তে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, মূলত লিচুর আবাদ গুরুদাসপুরেই বেশি হয়। গুরুদাসপুরের দেখাদেখি এখন চলনবিল অঞ্চল জুড়েই কৃষকদের মাঝে লিচু আবাদে আগ্রহ বাড়ছে। পাশাপাশি ফলন ও ভালো দাম পাওয়াতে কৃষকরা উৎসাহিত হয়ে উঠছেন লিচু চাষে। এখানে চায়না, বোম্বাইসহ মোজাফ্ফর জাতের লিচু হয়। এবার আকারে লিচু ছোট হলেও ফলন ভালো হয়েছে। শুধু গুরুদাসপুরেই রয়েছে ২০৫টি বাগান। মোট ৪১০ হেক্টর জমিতে যার লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার মেট্রিক টন।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে আম পাড়া শুরু