নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর ডটকম: পেঁয়াজ শীতের ফসল হলেও মেহেরপুরে পেঁয়াজের গ্রীষ্মকালীন জাতের চাষে সফলতা পেয়েছেন চাষিরা। দশ বছর আগে পেঁয়াজের গ্রীষ্মকালীন জাত উদ্ভাবিত হলেও আগ্রহ দেখায়নি কেউ। দেশে পেঁয়াজ সংকট বাড়তে থাকায় খোঁজ পড়ে এ জাতের।
বাংলাদেশ মসলা গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণার ফসল এই জাতের পেঁয়াজ এবার পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় ১০১ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে।
এই পেঁয়াজ চাষ সরেজমিনে দেখতে এসে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক্সপার্ট পুলের সদস্য হামিদুর রহমান বলেন, “মেহেরপুরে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ সফল হওয়ায়, দেশে পেঁয়াজ নিয়ে সব দুশ্চিন্তা দূর করতে সক্ষম এখন আমরা।”
বরাবরই দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে ভারত থেকে আমদানি করা হয়ে আসছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ সংকটে গত এবং এ বছর থেকে আগাম কোনো তথ্য ছাড়াই হুট করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে তারা। এতে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের ব্যাপক দাম বৃদ্ধি পায়। পরিস্থিতি সামালে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়।
কৃষি গবেষক হামিদুর রহমান জানান, এতদিন পেঁয়াজ এক মৌসুমে ফলানোয় উৎপাদনের পর চাষি যেমন দাম পেত না আবার বছরের অন্য সময় সংকটের কারণে বাজারে দামের ঝাঁঝ বেড়ে যেত। তখন বিদেশ থেকে পেঁয়াজ এনেও ঘাটতি পূরণ করা যেত না।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, মেহেরপুরে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের এমন সফল চাষাবাদ দেখে আমরা মুগ্ধ।
তারা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষকে মেহেরপুর থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকদের প্রণোদনাসহ করণীয় নির্ধারণ করে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেবে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) মেহেরপুরের চাষিদের দিয়ে এই পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেয়।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক ড. আকন্দ রফিকুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ মসলা গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত বারি-৫ জাতের পেঁয়াজের বীজ ভ্যালু চেইন প্রকল্পের মাধ্যমে তারা মেহেরপুরে প্রথম গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ শুরু করেন।
এ পেঁয়াজ সংরক্ষণেও তারা চাষিদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, এ প্রকল্পের আওতায় দুই হাজার ২৫০ জন কৃষককে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ বিষয়ক এবং ৭৮০ জন কৃষককে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন বিষয়ক কারিগরী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ১৭০টি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী এবং শীতকালীন পেঁয়াজের পচন রোধে স্বল্পব্যয়ে ‘এমবিয়েন্ট কুলিং সিস্টেম’ প্রযুক্তির ১৩৭টি সংরক্ষণাগার প্রর্দশনী হিসাবে স্থাপন করা হয়েছে। এতে পেঁয়াজের ওজন কম হ্রাস পায় ফলে মজুদে রেখে চাষিরা বেশি দামে বিক্রি করতে পারে বলেন তিনি।
এই পেঁয়াজ চাষের সফলতা কথা উঠে আসল চাষিদের কাছ থেকেও। মেহেরপুরের চাষি গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি সদর উপজেলা ইছাখালী গ্রামে ৩০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন এ পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হয়েছেন।
“৯০ থেকে ১১০ দিনে মধ্যে এ পেঁয়াজ বিঘায় ১২০ থেকে ১৫০ মন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। গ্রীষ্মকালীন এ পেঁয়াজ প্রতি বিঘায় চাষ করতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়।”
গাংনী উপজেলার কালীগাংনীর কৃষক সামিনুর রহমান জানান, তিনি ১৭ বিঘা বারী-৫ গ্রীষ্মকালীন নতুন জাতের পেঁয়াজের চাষ করেছেন।
আবহাওয়া অনূকুল হওয়ায় এ পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকি কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ক্ষেত থেকে এ পেঁয়াজ ওঠানো হবে।
কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, সারা দেশে বারী-৫ জাতের এ পেঁয়াজ চাষ করতে পারলে দেশে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
এই জাতের পেঁয়াজের উদ্ভাবক বাংলাদেশ মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ড. হামিম রেজা জানান, ১০ বছর আগে তারা বারী-৫ জাতের গ্রীষ্মকালীন নতুন এ পেঁয়াজের বীজ উদ্ভাবন করেন কিন্তু কেউ ব্যবহার না করায় এ বীজ গবেষণাগারেই সংরক্ষণ করা ছিল।
সারাদেশে এ বীজ ছড়িয়ে দিতে বেশি বেশি বীজ উৎপাদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছের জানিয়ে তিনি বলেন, মেহেরপুর দেশের স্বাধীনতা এনেছে। এবার পেঁয়াজে স্বাবলম্বী হতেও প্রথম ভূমিকা রাখল।