ইব্রাহীম খলিল জুয়েল:
ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার প্রাচীন খেলাগুলো। এই প্রজন্মের শিশু-কিশোররা এসব খেলাধূলা করা দূরের কথা, নামও হয়তো-বা শুনেনি কেউ কেউ।
আধুনিকতার ছোঁয়া, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা আর খেলার মাঠের অভাবে নব্বইয়ের দশকের পর থেকে এই খেলাগুলো আস্তে আস্তে বিলীন হয়েছে। এর জায়গায় স্থান করে নিয়েছে অনেক শহুরে ইনডোর গেম। অনেক ক্ষেত্রে এগুলো ক্ষতিকর। ভিডিও গেমসহ অনেক রকমের অনলাইন গেম শিশু-কিশোরদের সহিংসতা শেখায়। অনলাইন জুয়ার মতো সর্বনাশা পথে পা বাড়াতে শেখায়। বিপথগামী করে।
সুখবর ডটকম ডটবিডি (sukhabor.com.bd) তার পাঠকদের সেই খেলাগুলোর সঙ্গে আবারো পরিচয় করিয়ে দিতে চায়। শেকড়ের টানে, ঐতিহ্যের দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ।
আজ আমরা বলব আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় খেলা “গোল্লাছুট” সম্পর্কে।
গোল্লাছুট
গোল্লাছুট গ্রাম বাংলার ও শহর অঞ্চলের কিশোর-কিশোরীদের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। ‘গোল্লাছুট’ -নামটা শুনলে হয়তো সবারই স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে চিরায়ত বাংলার এক ছবি! গ্রামের পরিত্যক্ত জমি, খোলা মাঠ বা বাগানে গোল্লাছুট খেলা হয়। কয়েক দশক আগেও এটি ছিল গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় খেলা। শহরের ছেলে-মেয়েরাও খেলতো এ খেলা। কিন্তু বিশ্বায়নের যুগে, প্রযুক্তির প্রভাবে এখন বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী এই খেলা। একটা সময় স্কুল, কলেজ কিংবা মাদরাসার মাঠেও টিফিনের ফাঁকে ছেলে-মেয়েরা গোল্লাছুট নিয়ে মেতে উঠতো।
স্কুল থেকে ফিরে ছেলে-মেয়েরা দল বেধে মাঠে চলে যেত। সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটিয়ে দিত গোল্লাছুট খেলে। এ খেলা খেলতে কেনো রকমের সরঞ্জামও দরকার পড়ত না। নির্মল আনন্দ দেয় এই খেলা। এতে দৌড়াদৌড়ি, ছোটছুটির ফলে শারীরিক ব্যায়ামও হয়।
খেলাটির নিয়ম-কানুন:
খেলার শুরুতে প্রথম দুজন দলপতি নির্ধারণ করা হয়। দুদলেই সমান সংখ্যক খেলোয়াড় থাকে (৫ অথবা ৭ জন)। মাটিতে এক জায়গায় গর্ত করে একটি লাঠি পুতে তাকে কেন্দ্র হিসেবে ধরা হয়। এই লাঠিকে কেন্দ্র করে বৃত্ত বা গোল্লা তৈরি করে ২৫/৩০ ফুট দূরে আরো একটি রেখা টেনে সীমানা নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে দূরে একটি গাছ বা জমির আইলকেও লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। বৃত্ত বা গোল্লা থেকে ছুটে গিয়ে ওই লক্ষ্যবস্তুকে ছুঁয়ে আসে বলেই একে গোল্লাছুট বলে। আর দৌড়ে ওই লক্ষ্যবস্তুর কাছে যাওয়ার সময় বিপক্ষ দলের তাকে ছুঁয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। ছুঁতে পারলেই সে আউট হয়ে যাবে। নইলে সফল।
দলপতি মাটিতে পুঁতা কাঠি এক হাতে ধরে অপর হাতে তার দলের অন্য খেলোয়াড়ের হাত ধরে থাকে। এভাবে তারা পরস্পরের হাত ধরে কেন্দ্র স্পর্শ করে ঘুরতে থাকে। তাদের লক্ষ্য হলো বৃত্তের বাইরে যে কাঠি বা গাছ (দ্বিতীয় লক্ষ্যবস্তু) থাকে তা দৌড়ে স্পর্শ করা।
অপরদিকে দৌড়ে কাঠি স্পর্শ করার আগেই বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা যদি ওই দলের কোনো খেলোয়াড়কে স্পর্শ করতে পারে তাহলে সে এই দানে (পর্ব) খেলা থেকে বাদ যাবে।
এভাবে শেষ পর্যন্ত দলপতিরও দৌড়ে কাঠি বা লক্ষ্যবস্তু স্পর্শ করতে হবে। কোনো খেলোয়াড়ই লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারলে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা দান পায়।
বৃত্ত তৈরি করে ঘুরতে হয় বলে একে “গোল্লা” এবং আঞ্চলিক ভাষায় ছুট হলো দৌড়ানো। এভাবেই খেলার নাম হয়েছে গোল্লাছুট।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
আই. কে. জে/
আরো পড়ুন:
এসো খেলি গ্রামীণ খেলা-২ : দাড়িয়াবান্ধা