নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর ডটকম: আশার আলো দেখাতে শুরু করেছে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে খুলনার তেরখাদা উপজেলার ‘দুঃখ’ বলে পরিচিত ‘ভুতিয়ার বিল’। ২১ হাজার একরের এই বিলে কচুরিপানা, হোগলাপাতা ও শ্যাওলা দিয়ে তৈরি ভাসমান বিছানার ওপর ফলতে শুরু করেছে প্রায় সবধরনের সবজি। কীটনাশক ও সারবিহীন এসব সবজি বেশ চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। এতেই আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন কৃষক।
জলাবদ্ধ এলাকার কৃষক উৎপাদন করছেন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, হলুদ, আলুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। পাশাপাশি মাছও পাচ্ছেন এলাকাবাসী।
তেরখাদা উপজেলার ৫০ গ্রামজুড়ে ভুতিয়ার বিল। একসময় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের আয়-রোজগারের একমাত্র উৎস ছিল এ বিল। তবে ২৫ বছর ধরে বিলটি জলাবদ্ধ থাকায় এলাকাবাসীর আয়-রোজগার কমে যায়। ফলে এক সময়ের আয়ের একমাত্র উৎস এ বিলটি হয়ে দাঁড়ায় ‘গলার কাঁটা’। বেঁচে থাকার তাগিদে এলাকাবাসীর চলে নিরন্তর সংগ্রাম। জলাবদ্ধতার কারণে বিত্তশালী কৃষকরা হয়ে যান দিনমজুর।
জলাবদ্ধতা নিরসনে এক যুগ আগে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে সেটি তেমন কাজে আসেনি। জলাবদ্ধতার কারণে বিলের কৃষিজমি অনাবাদি থাকায় ছাগলাদাহ, সাচিয়াদাহ ও তেরখাদা ইউনিয়নের ৫০ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। তিন ইউনিয়নবাসীর দুঃখ দূর করতে এগিয়ে আসে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
বিলের পানিতে জন্ম নেওয়া কচুরিপানা, হোগলাপাতা ও শ্যাওলা জমিয়ে তার ওপর চাষাবাদের পরামর্শ দেন কৃষি কর্মকর্তারা। পরামর্শ মোতাবেক কাজে নেমে পড়েন এলাকার কিছু কৃষক। এরপরই দেখা যায় আমূল পরিবর্তন।
ভাসমান বেডের ওপর সবজি চাষি হরিষ বিশ্বাস বলেন, ভাসমান বেড তৈরি করতে পানির ওপর লম্বালম্বিভাবে দুটি বাঁশ বা কলাগাছ ফেলে তার ওপর কচুরিপানা ও শ্যাওলার স্তূপ করা হয়। এই স্তূপ উঁচু হয় চার ফুটের বেশি। ক্রমে তা পচে ও শুকিয়ে এক থেকে দেড় ফুটে এসে দাঁড়ায়। পরে এর ওপর সামান্য মাটি ছিটিয়ে ৫-৭ দিন পরই লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, ঢ্যাঁড়শ, লাউ, শসা, শিম, কাকরোল, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, ডাঁটাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ শুরু করা যায়।
হরিষ বিশ্বাস জানান, দুটি বেড তৈরি করতে ২০ শ্রমিক প্রয়োজন। এতে খরচ হয় ৬-৭ হাজার টাকা। কিন্তু এখানে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে তার চেয়ে অনেক বেশি আয় করা সম্ভব হয়। ফলে এলাকার কৃষক ধীরে ধীরে এ কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন।
জেলার কৃষি দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোসাদ্দেক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে প্রায় ৫০০ কৃষককে প্রশিক্ষণ ও প্রায় ২০০ প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। মাঠে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি কৃষক লাভবান হবেন।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এর চেয়ে ভালো আর কোনো পদক্ষেপ হতে পারে না বলে দাবি করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক ফরিদুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, এক ইঞ্চি জমিও যেন চাষের বাইরে না থাকে। তাই যদি হয় তাহলে আমরা এভাবেই আমাদের খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলা করতে পারি। সবজি আর মাছচাষ একই সঙ্গে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।’
এম/
আরো পড়ুন:
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে কে কখন বয়ান করবেন