spot_img
32 C
Dhaka

২৪শে মার্চ, ২০২৩ইং, ১০ই চৈত্র, ১৪২৯বাংলা

খুব উদ্বেগের কথা কিন্তু!

- Advertisement -
সুদেব কুমার বিশ্বাস:

সেদিন একজন সহকর্মী বলছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া তার ছেলের স্কুলের কথা। ঢাকা শহরের খুব নামকরা একটি স্কুল। শিক্ষক বাড়ির কাজ হিসেবে একটি অংক করতে দিয়েছিলেন। অংকটি কঠিন বলে তার ছেলে তা নিজে নিজে করতে ব্যর্থ হয়। তাই তিনি সাহায্য করেন সেটি করার কাজে।

পরেরদিন স্কুলের শিক্ষক সেই অংক করা ভুল হয়েছে বিবেচনা করে তা কেটে দেন। ছেলে মন খারাপ করে সেই খাতা এনে বাবাকে দেখায়। ভীষণ অবাক হয়ে যান বাবা।

আমার সেই সহকর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা। তার খুব আত্মসম্মানে লাগে একটি সঠিক অংক শিক্ষকের কেটে দেওয়া দেখে।

রাগে-দুঃখে পরেরদিন তিনি সেই শিক্ষকের সাথে দেখা করেন। তার সন্তান তাকে খুব করে মানা করেছিল দেখা করতে। বলেছিল, এতে নাকি শিক্ষক রেগে যেতে পারেন। তবুও তিনি গিয়েছিলেন। গিয়ে বিনয়ের সাথে বুঝে নিতে চান তার করা অংকটির কোথায় কী ভুল হয়েছে। শিক্ষক কোনো সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন। কেবল বলেন, অংকটি নাকি তার শেখানো নিয়মেই করতে হবে। অন্য নিয়মে করলে হবে না। আমার সহকর্মী কোনো কথা না বাড়িয়ে ফিরে আসেন সন্তানের মঙ্গলের কথা ভেবে।

বাবা চলে আসলে শিক্ষক তার ছাত্রটিকে ডেকে নেন তার কক্ষে। ধমকের পর ধমক দিয়ে বলেন, ‘কত বড় সাহস তোমার বাবার! আমার করে দেওয়া অংক চ্যালেঞ্জ করেন তিনি? ভুলে যেও না, তোমার পরীক্ষার ৬০% নম্বর এখন আমার হাতে। দেখি তখন তোমার কোন বাবা এসে বাঁচায় তোমাকে!’

ছেলেটি কাঁদতে কাঁদতে শিক্ষকের কক্ষ থেকে বের হয়ে আসে। বাড়িতে এসে আবার কাঁদে। বাবাকে অনুযোগ করে বলে, তার বাবা কেন তাকে এই বিপদে ফেলল? তাকে যদি শিক্ষক এখন কম নম্বর দিয়ে দেন! যদি ফেল করিয়ে দেন!

এই ঘটনার উল্লেখ করে আমি হয়তো শিক্ষককে দায়ী করে ফেললাম। বরাবর শিক্ষকদের পক্ষে লিখি আমি। তাঁদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সব শিক্ষক কি এই ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করতে পারবেন?

বলি কী, শিক্ষাক্রম ও তার প্রয়োগ নিয়ে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে স্কুল এবং প্রকারান্তরে শিক্ষকের হাতে ৬০% নম্বর ছেড়ে দেওয়া একটু ঝুঁকির বিষয় হয়ে গেল না? Formative Assessment বা গাঠনিক মূল্যায়নের সাথে নম্বর দেওয়ার বাধ্যবাধ্যকতা কি আদৌ আছে? গাঠনিক মূল্যায়নের খুব কাছের একটি উদাহরণ হলো ধারাবাহিক মূল্যায়ন যার মাধ্যমে শিক্ষক তাঁর পাঠের কার্যকারিতা যাচাই করবেন এবং শিক্ষার্থীদের শেখার কাজটি কতটা হলো তা খতিয়ে দেখবেন। তারপর সেই মূল্যায়নের ফলাফলের আলোকে শিখন-শেখানোর কাজে যথাযোগ্য পরিবর্তন আনবেন। সেই কাজ না করে গাঠনিক মূল্যায়ন যদি নম্বর দেওয়ার মধ্যে আটকে যায় তাহলে তো বড় বিপদের কথা।

অন্যদিকে Summative Assessment বা সামষ্টিক মূল্যায়নের লক্ষ্য হলো একটি সুনির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড বা বেঞ্চমার্কের সাথে তুলনা করে একটি সুনির্দিষ্ট সময় শেষে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূল্যায়ন করা। সামষ্টিক মূল্যায়নের সাথে নম্বর বা গ্রেড দেওয়ার সরাসরি সম্পর্ক আছে। মধ্যবর্তী/অর্ধবার্ষিকী বা বার্ষিক পরীক্ষা সামষ্টিক মূল্যায়নের সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ।

আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই উপলক্ষ্য তার লক্ষ্যকে ছাপিয়ে যায়। আর এক্ষেত্রে গাঠনিক মূল্যায়ন করে নম্বর দেওয়ার মাধ্যমে ও বার্ষিক পরীক্ষার নম্বরের সাথে তা যোগ করার মাধ্যমে তার মূল লক্ষ্য থেকে সরে গিয়ে সামষ্টিক মূল্যায়নের অংশ হয়ে উঠছে। সেই যুক্তিতে তাকে আর তখন গাঠনিক মূল্যায়ন বলা যাবে? নাকি সামষ্টিক মূল্যায়নের সামগ্রিক প্রক্রিয়ার অংশ বলা হবে তাকে?

কিছুদিন আগেই ধারাবাহিক মূল্যায়নের আরেক ফর্মুলা আবিষ্কার করে শিক্ষকদের উপরে একপ্রকার চাপিয়ে দিয়েছিলাম আমরা। সঙ্গত কারণেই তা মুখ থুবড়ে পড়ে। সৃজনশীল পদ্ধতির কথা তো আর বলার অপেক্ষাই রাখে না। গাঠনিক মূল্যায়নের এই নতুন পদ্ধতি নিয়েও খুব শঙ্কার মধ্যে আছি আমি। সময়ই হয়তো সব বলে দেবে।

(সুদেব কুমার বিশ্বাস-এর ফেসবুক পোস্ট থেকে নেয়া। সুখবর ডটকম-এর অভিমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের)

আই. কে. জে /

- Advertisement -

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলো করুন

25,028FansLike
5,000FollowersFollow
12,132SubscribersSubscribe
- Advertisement -

সর্বশেষ