spot_img
26 C
Dhaka

২৩শে মার্চ, ২০২৩ইং, ৯ই চৈত্র, ১৪২৯বাংলা

কোভিড ১৯ : অনুমোদন ছাড়া কোনো ওষুধ ব্যবহার না করার পরামর্শ জাতীয় কমিটির

- Advertisement -

সুখবর প্রতিবেদক: নানা ওষুধ প্রয়োগ করে করোনা রোগীর চিকিৎসার উপায় ডাক্তাররা খুঁজলেও পরীক্ষামূলক ব্যবহারের বাইরে কোনো ওষুধ কিংবা প্লাজমা থেরাপি গণহারে প্রয়োগ না করার পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। পরীক্ষামূলক ব্যবহারের ফলাফল দেখে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় পরীক্ষামূলকভাবে রেমডেসিভির, আইভারমেকটিন, ডক্সিসাইক্লিনসহ গুটিকয়েক ওষুধের পাশাপাশি কনভালেসেন্ট প্লাজমা ব্যবহার হচ্ছে।

তবে বিভিন্ন হাসপাতালে এরই মধ্যে প্লাজমা থেরাপি ও বিভিন্ন ওষুধ রোগীদের দিচ্ছেন চিকিৎসকরা, যা পরীক্ষামূলক ব্যবহারের ফল না দেখে দেওয়া ঠিক নয় বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে এসব ওষুধ প্রয়োগের পক্ষের চিকিৎসকরা বলছেন, কোনো কার্যকর ওষুধ না আসায় রোগীদের সুস্থ করার লক্ষ্যে তা ব্যবহার করছেন তারা। তবে তারাও চান এসব ওষুধের ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা হোক।

দেশে কোনো ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রটোকল অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। আর বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) থেকে রিসার্চ ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়।

এ দুটি প্রতিষ্ঠান বলছে, কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় কোনো ওষুধ পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য কোনো অনুমতি কেউ তাদের কাছ থেকে নেয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েকটি ওষুধে সায় দিলেও তা শুধু ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা হাসপাতালে পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য। এ সময় দেশে কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসার জন্য আলোচনায় আছে প্লাজমা থেরাপি।

কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের দেহ থেকে রক্তরস বা প্লাজমা নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সম্প্রতি বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে।

প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। রোগীকে প্লাজমা দান করতে ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা মানুষের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন স্বজনরা। ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে অনেক আবেদন দেখা গেছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৬ মে আনুষ্ঠানিকভাবে প্লাজমা সংগ্রহ শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২১ জন প্লাজমা দিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে চারজনসহ ৮টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১৮ জনের শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে প্লাজমা প্রয়োগ করা হয়েছে।

প্লাজমা থেরাপির জন্য গঠিত কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ খান বলছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের রিসার্চ ইথিকস কমিটির কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছেন তারা। প্রটোকল অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ৪৫ জনের ওপর তারা এটি প্রয়োগ করবেন ।

তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ এর যেহেতু কোনো ওষুধ নেই তাহলে এটা চেষ্টা করতে তো সমস্যা নাই। এখন যে যার মতো করে দিচ্ছে। তবে নিয়ন্ত্রিতভাবে এটির প্রয়োগ হলে কাকে প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে, ফলাফল কী আসছে, তা বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে।”

নিয়ম অনুযায়ী সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে যেন প্লাজমা থেরাপি দেওয়া যায়, সেজন্য কর্মসূচি নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অনুরোধ করেছেন তিনি।

তবে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) পরিচালক ডা. মাহমুদ উজ জাহান বলছেন, প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের জন্য ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ঢাকা মেডিকেল দিতে পারে না।

কোনো ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের আগে বিএমআরসির রিসার্চ ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স নিতে হলেও এখনও কোনো ওষুধের জন্য তা নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

মাহমুদ বলেন, “আপনি একটা বিষয়ে গবেষণা করবেন, কিন্তু তার নিয়ম মানবেন না, তা হতে পারে না। এজন্য ন্যাশনাল রিসার্চ ইথিকস কমিটির অনুমোদন লাগে। প্লাজমা থেরাপির জন্য এই ধরনের অনুমতি নেওয়া হয়নি। লোকাল ইথিকস কমিটি এই অনুমতি দিতে পারে না। এজন্য আমরা তাদের চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানতে চেয়েছি।”

এ সময় আলোচনায় থাকা আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন প্রয়োগ করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এই ওষুধ অন্যান্য হাসপাতালেও ব্যবহার হচ্ছে।

বাংলাদেশ মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. তারেক আলম বলেন, এখন আর ওই ওষুধ তারা ব্যবহার করছেন না। তবে বিভিন্ন দেশে এই ওষুধটি ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়ার দাবি ওঠায় এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা যায়।

“আমি একটা স্টাডি দেখেছিলাম অস্ট্রেলিয়ার, সেখানে তারা এই ওষুধটি দিয়েছিল। আমিও ট্রাই করেছিলাম, রোগী ভালো হয়েছে। আমার কথা হচ্ছে ১০টা করে রোগীকে ওষুধটা দিয়ে দেখেন।”

ওষুধটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য ‘প্রটোকল’ করছেন জানিয়ে ডা. তারেক বলেন, “আশা করছি, আগামী সোম-মঙ্গলবারের দিকে জমা দিতে পারব। ১০ তারিখে উনাদের একটা মিটিং আছে, আশা করছি ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়ে দেবে।”

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে ‘গাইডলাইন’, তাতে আইভারমেকটিন, ডক্সিসাইক্লিন ব্যবহারের কথা বলা নেই। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালসহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে এই ওষুধ প্রয়োগ হচ্ছে।

২৬ এপ্রিলের পর থেকে কোভিড-১৯ লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে আসা পুলিশ সদস্যদের ওপর আইভারমেকটিন প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাসান উল হায়দার।

তিনি বলেন, তাদের পর্যবেক্ষণে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। তবে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন আছে।

“আমরা এই ওষুধ প্রয়োগ করে দেখেছি রোগীরা সুস্থ হচ্ছেন। ওষুধটা ভালো কাজ করছে, এটা পর্যবেক্ষণ হিসেবে আমি বলতে পারি।”

ঢাকার বাইরের একটি সরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় আইভারমেকটিন এবং ডক্সিসাইক্লিন ব্যবহার করা হচ্ছে।

গাইডলাইনে না থাকার পরও এই ওষুধের ব্যবহার করছেন কেন- জানতে চাইলে ওই হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, “কোনো ওষুধই তো নাই। আইভারমেকটিন এবং ডক্সিসাইক্লিন তো নতুন ওষুধ না। এটার সাইড ইফেক্ট নাই, সহজলভ্য এবং দাম কম।

“আমার হাসপাতালে বেশ খারাপ সিম্পটম নিয়ে এসেছে, এমন কয়েকজনের উপর প্রয়োগ করেছি, তারা এখন ভালো আছে। তাদের আমি অন্য কোনো ওষুধ দিইনি।”

ইবোলা ভাইরাসের ওষুধ রেমডেসিভির তৈরি করে তা সরকারের কাছে দিয়েছে দেশের একটি ওষুধ কোম্পানি। বিভিন্ন হাসপাতালের আইইসিইউতে থাকা কোভিড-১৯ রোগীদের উপর তার প্রয়োগ হচ্ছে।

কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের ১৪ জন রোগীর ওপর এই ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের সমন্বয়ক ডা. শিহাব উদ্দিন।

তিনি বলেন, “আমাদের আইসিইউতে যে রোগী আছে, তাদের উপর এটা প্রয়োগ করছি। এটা অনেক প্রাথমিক পর্যায়, এজন্য কাজ করছে কি না, বোঝা কঠিন। এটা বিস্তারিত গবেষণা করেই কেবল বলা সম্ভব।”

ওষুধ প্রয়োগে কোভিড-১৯ সারানোর চেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। বতর্মানে কোভিড-১৯ মোকাবেলা গঠিত কারিগরী কমিটির সদস্য তিনি।

তবে মুশতাকও বলেছেন, সম্পূর্ণ ব্যবহারের আগে ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের’ ফল দেখতে হবে।

“তারাও নানা উপায়ে চেষ্টা করছেন। তবে এগুলো সবই পরীক্ষাধীন। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে যদি তারা প্রমাণ দেখাতে পারেন তাহলে আমরা একটা সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারব।”

রেমডেসিভির ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে হলে বিএমআরসির অনুমোদন লাগবে, যা কেউ নেয়নি বলে জানান ডা. মাহমুদ উজ জাহান।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে রেমডেসিভির। তার ভিত্তিতে বাংলাদেশেও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে শুধু পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য।

- Advertisement -

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলো করুন

25,028FansLike
5,000FollowersFollow
12,132SubscribersSubscribe
- Advertisement -

সর্বশেষ