ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: পাকিস্তানের করাচিতে বসবাসকারীদের মধ্যে ১০ শতাংশ নাকি বাঙালি। সংখ্যায় – কেউ বলে ১০ লাখ, কেউ বলে ৩০ লাখ। তবে ১০ লাখের কম কেউ বলে না। ভোটের সময় নেতারা এদের সংখ্যা দেখায়। ভোটের পর আবার এরা ‘বেআইনি’ হয়ে যায়।
করাচির ‘ইব্রাহিম হায়দেরি’ ছিল এক সময় ছিমছাম একটি জেলে পল্লী। তবে এখন এটি হয়ে উঠেছে ঘিঞ্জি একটি জনপদ। যেখানে-সেখানে নোংরা পানি জমে আছে। তার ওপর ভাসছে আবর্জনা। রাস্তার দুপাশে বস্তির মতো ঘর। আর এখানকার সিংহভাগ বাসিন্দাই বাঙালি।

করাচি শহরে মোটামুটি ১৫ লাখের মতো বাঙালির বাস; যাদের এখনও নাগরিক হিসেবে মর্যাদা দেয়নি পাকিস্তান। ভারত ভাগের পর থেকে তাদের অধিকাংশই বংশপরম্পরায় এই ইব্রাহিম হায়দেরি এলাকাতে বাস করছেন।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাখো বাঙালিকে নাগরিক হিসেবে মর্যাদা না দিয়ে তাদের সাথে যে বঞ্চনা করা হয়েছে সেটির সাথেও যতটা না রয়েছে জাতিসত্তার সম্পর্ক, তার চেয়ে বেশি পাকিস্তানের জটিল ইতিহাসের সম্পর্ক।
ওই এলাকায় বাঙালিদের একটি সংগঠনও রয়েছে। নাম- পাকিস্তানি বেঙ্গলি অ্যাকশন কমিটি।
কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, করাচিতে একসময় খারাপ ছিল না বাঙালিরা। জাতীয় পরিচয়পত্র জোগাড় করতে কর্মকর্তাদের কিছু ঘুষ দিতে হতো। তাছাড়া ঠিকঠাকই চলেছে।
তবে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, করাচিতে সন্ত্রাস এবং জঙ্গি তৎপরতা বাড়তে থাকায় জীবনযাপনের সেই স্বস্তি দিন দিন চলে যাচ্ছে। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র জোগাড় করা পাকিস্তানের বাঙালিদের জন্য এখন প্রায় অসম্ভব।

পরিচয়পত্র না থাকায় কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে সমস্যার কথাও উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে। শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে পাকিস্তানে বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।
মূলত নাগরিকত্বের প্রশ্নে প্রতি বছর হাজারো বাঙালি তরুণ-তরুণী কলেজ থেকে ঝরে পড়ছে। এরপর ছোটোখাটো কাজে লেগে যাচ্ছে তারা। এরা হয় রাস্তার পাশে সবজি বিক্রি করছে, না হয় চায়ের দোকানে বা মুদি দোকানে কাজ করছে।
এসবের সঙ্গে রয়েছে পুলিশের ভয়ও। এই পুলিশের ভয়েই এলাকার বাইরে খুব একটা বের হতে পারেন না তারা। কলোনির ভেতরেই যেসব ছোটোখাটো ফ্যাক্টরি আছে সেখানে নামমাত্র পয়সায় খাটতে হয় অধিকাংশ বাঙালিকে।
পাকিস্তানে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বিবিসিকে বলেন, একজন অবাঙালি শ্রমিক যেখানে মাসে ১২-১৩ হাজার রুপি মজুরি পায়, একজন বাঙালি পায় তার অর্ধেক।
বাঙালি মেয়েরা ফ্যাক্টরি, বাসাবাড়িতে কাজ করে। সেখানে শুধু যে পয়সা কম তা নয়, তারা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বাঙালি নেতা মনে করেন, সস্তা শ্রমের সুবিধার জন্য পাকিস্তানে কেউ চায় না বাঙালিরা দেশ ছেড়ে চলে যাক, আবার বৈধতার জন্য কেউ তাদের জন্য কিছু করছেও না।
তারপরও হাল ছাড়তে রাজি নন তিনি। বলছেন, যাই হোক না কেন আমরা এদেশ ছেড়ে যাবো না। আমরা এখানেই থাকবো, এখানেই মরবো।
কারণ সম্ভবত পাকিস্তানে বন্দী অবস্থা থেকে তারা উত্তরণের স্বপ্ন দেখেন। আবার অনেককে সেই সনদ দেয়া হয়নি। কারণ এর ফলে বাঙালিদের হয়রানি করে ঘুষ নেয়া যায়। বৈধ সনদ সেই ঘুষের পথ বন্ধ করে দেবে মাত্র। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
আই. কে. জে/