নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর ডটকম: পৌষের সকালে শিশির ভেজা ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো হলুদ ফুলের সমারোহ। সরিষা ফুলের হলুদ রঙে ভরে উঠেছে ফসলের মাঠ। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র্য। সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য পাল্টে দিয়েছে দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর চরাঞ্চলগুলোসহ কৃষকের বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত। সরিষার মাঠে একদিকে চলছে মধু সংগ্রহ অন্যদিকে প্রকৃতি-প্রেমিকদের আনাগোনা।
উপজেলার বড়ভিটা, শিমুলবাড়ী ও নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত বছরের চেয়ে এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় প্রান্তিক চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, কৃষি অফিসের কর্মকর্তাগণ কৃষকের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করায় কৃষকরা আমন ধান ঘরে তোলার সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলের প্রান্তিক চাষিরা একই জমিতে সরিষা চাষাবাদ করেছে। কৃষি বিভাগ প্রতিনিয়ত কৃষকের সরিষা ক্ষেত দেখে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সরিষা একটি লাভ জনক ফসল। সরিষার ফলন ঘরে তোলার সঙ্গেই আবারও একই জমিতেই কৃষকরা বোরো চাষ করবেন। সরিষা বিক্রি করে কৃষকেরা বোরো আবাদের জন্য স্বল্প খরচ ও কম পরিশ্রমেই সরিষার জমিতে ইরি-বোরো আবাদ হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হওয়ায় সরিষা চাষাবাদ এ অঞ্চলে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেওয়াসহ সরিষার ভালো দামের আশায়ও করছেন ওই সব প্রান্তিক চাষিরা।
উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষাফেরুষা গ্রামের কৃষক আলম মিয়া জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি এবছর ৪ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার চাষাবাদ করেছেন। গাছে গাছে প্রচুর পরিমাণে ফুল ধরায় আশানুরূপ ফলন হবে বলে মনে করছেন তিনি। ফলন ভাল দেখায় আশা বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ মন করে সরিষা ঘরে তুলবেন বলে আশা করছেন এই কৃষক।
একই উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়ভিটা চরাঞ্চল এলাকার কৃষক এছাহক আলী ও বকুল মিয়া বলেন, তারা প্রত্যেকেই ধরলার চরে চার বিঘা জমিতে সরিষার চাষাবাদ করেছেন। প্রতি বছরেই চরাঞ্চলের জমিগুলোতে সরিষার চাষাবাদ অল্প খরচেই লাভবান হন। আমন ধান ঘরে তোলার সঙ্গে সঙ্গে আমন ক্ষেতের জমিতেই কম খরচে সরিষার আবাদ করে থাকেন। সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে তারা ইরি-বোরোর চাষাবাদ খরচ মেটানো সম্ভব হয় বলে জানান চাষিরা। তবে এবছর সরিষার ফলন ভাল দেখায় হাসি ফুটেছে ওই চরাঞ্চলের শতশত চাষিদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. নিলুফা ইয়াছমিন বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে বিভিন্ন চরাঞ্চল ও দাসিয়ারছড়াসহ মোট ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে চাষিরা সরিষার চাষাবাদ করেছে। সরিষা চাষাবাদের জন্য ১ হাজার ৯০০ জন কৃষকদের মাঝে বিনা মূল্যে সরিষার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকের মাঠে মাঠে গিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আশা করছি চাষিরা সরিষা চাষে লাভবান হবেন।
এম/
আরো পড়ুন:
শুরুতে অল্প যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল, থামবে তিন স্টেশনে