কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি, সুখবর ডটকম: গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় ট্রান্সফরমার ও ট্রান্সফরমারের তার চুরির হিড়িক পড়েছে। গত ৬ মাসে শতাধিক গ্রাহকের চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমার পুন:স্থাপনে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। এতে গ্রাহকদের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে। সেচে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা থানা পুলিশকে জানিয়েছি। নিজের সম্পদ নিজেকে রক্ষা করতে হবে।
থানা ও সিভিল প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় বিষয়টি অবহিত করেছে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। নতুন ট্রান্সফরমার লোকালয়ে পুন:স্থাপন করে চেইন দিয়ে তালাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা।
এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে রায়েদ, লোহাদী, বিবাদিয়া, বেলাশী, আমরাইদ, তরগাঁওসহ বিভিন্ন গ্রাম। বৈদ্যুতিক খুটির ট্রান্সফরমার খুলে মূলত তামার তার চুরি করছে চোরেরা।
প্রায় এক মাস আগে বাড়ির পাশ থেকে ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের বড়িবাড়ি গ্রামের আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ট্রান্সফরমার পুন:স্থাপনের জন্য গ্রাহকদেরকে নিজ খরচে সংগ্রহ করে দিতে বলেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু ট্রান্সফরমার কেনার জন্য অর্থ যোগান দেওয়া সম্ভব হয় না, এমনকি আমার নিজেরও অক্ষমতা রয়েছে।
বসতভিটার সামনে সড়কের পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছিল উপজেলার আমারাইদ গ্রামের তাজলিম বেগমের। তিনি বলেন, ২১ হাজার টাকা দিয়ে ট্রান্সফরমার কিনেছেন।
সামিট গ্রপ এর সিনিয়র সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার পারভেজ মিয়া বলেন, লোহাদী এলাকা থেকে ৬টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের টাওয়ারে বসানো ট্রান্সফরমারও চুরি হচ্ছে। আমরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। তিনি বলেন, শুনেছি রবি কোম্পানির ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।
বেলাশী গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহক হাবিবুর রহমান পন্ডিত, আবুল হোসেন, কামরুল মাসুদ বিপ্লব, শরীফ হোসেন, আ. বাতেন বলেন, রাতের অন্ধকারে কে বা কারা আমাদের ট্রান্সফরমারের তার চুরি করে নিয়ে গেছে। চুরি যাওয়া বেশির ভাগ ট্রান্সফরমারের ঢাকনা খুলে ভিতরের তার নিয়ে গেছে। চুরি ঠেকানো বন্ধে নিজেরাই ট্রান্সফরমারের মুখ ঝালাই করে আটকে দিয়েছি। এতে ঝুঁকি থাকলেও চুরি ঠেকাতে বিকল্প কিছু ভাবতে পারছি না।
স্কুলের ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন লোহাদী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আফরোজা সুলতানা। তিনি বলেন, ট্রান্সফরমারের খোলসটা ছিল, ভেতরের সব তার নিয়ে গেছে। আমরাইদ মিন্টু সিকদারের বাড়ী সংলগ্ন ট্রান্সফরমার, ভুলেশ্বর গ্রামের আল আমীনের সেচ পাম্প, বামনখলা গ্রামের শরীফ সিকদারের সেচ পাম্প চুরি হয়েছে। আমারাইদ মোল্লা ফিলিং ষ্টেশন থেকে জেনারেটর ব্যাটারি চুরি হয়েছে।
ভুক্তভোগী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, সাধারণ মানুষের বিদ্যুতের খুঁটি বেয়ে উঠার সক্ষমতা নেই। পল্লী বিদ্যুতের প্রশিক্ষিত লোক ছাড়া কেউ ঝুঁকিপূর্ণ এসব খুঁটিতে বেয়ে উঠতে পারবে না বা সাহস করবে না। একটি ট্রান্সফরমার চুরি হলে সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের চাঁদা তুলে নতুন ট্রান্সফরমার পুন:স্থাপন করতে হয়। অনেকে চুরি ঠেকাতে চাঁদা তুলে ওয়ার্কশপের কারিগর দিয়ে ট্রান্সফরমারের মুখ ঝালাই করে দিচ্ছে।
কাপাসিয়ার সিনিয়র ইলিকট্রিশিয়ান তৈয়ুবুর রহমান জানান, কিছুদিন আগে বড়পুশিয়া গ্রাম থেকে ১৫ কেভির ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ওই ঘটনায় এলাকাবসীর কাছে পাঁচ চোর ধরা পড়েছে। তারা আশপাশের থানার ভাঙ্গারী জিনিস ক্রেতা। সনমানিয়া এলাকায় ট্রান্সফরমার চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পর্শে এক চোরের মৃত্যু হয়েছে। লাইনম্যান বাচ্চু মিয়া বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।
গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহীন মিয়া বলেন, চুরি বন্ধে মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রাহক সচেতন হতে আমরা গ্রাহকদের উদ্বুদ্ধ করছি। তাছাড়া গ্রাহকেরা দলবদ্ধভাবে পাহারাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, চুরির ঘটনায় প্রথমবার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৫০ শতাংশ দামে ট্রান্সফরমার সরবরাহ করে। দ্বিতীয়বার ঘটনা ঘটলে গ্রাহককে পুরো টাকা বহন করতে হয়।
গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ কাপাসিয়ার জোনাল অফিস উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) রুহুল আমীন বলেন, সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে। স্থানীয়ভাবে কমিটি গঠন করে পাহারা দিতে হবে। আইন শৃংখলা বাহিনী আরো সচেতন হলে, তৎপর হলে, চুরি কমতে পারে।
আমরাইদ সাব জোনাল অফিসের ভারপ্রাপ্ত এজিএম আনিসুর রহমান বলেন, ব্যাপক চুরির ঘটনায় আমরা সমস্যায় আছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে এসপি, ডিসি, ইউএনও এবং থানায় অবগত করেছি।
কাপাসিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কাশেম বলেন, চুরি ঠেকাতে এলাকাভিত্তিক পাহারার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এলাকাবাসী সচেতন হচ্ছে। আশা করছি চুরি ঠেকানো সম্ভব।
এম/ আইকেজে/
আরো পড়ুন:
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিকে হাইকোর্টে তলব