spot_img
25 C
Dhaka

৩০শে মার্চ, ২০২৩ইং, ১৬ই চৈত্র, ১৪২৯বাংলা

করোনা ভাইরাসের প্রথম ওষুধটি কি পাওয়া গেল

- Advertisement -

ইব্রাহীম খলিল জুয়েল:

মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে কার্যকর কোনো ওষুধ না পেয়ে এখনো দিশেহারা গোটা বিশ্ব। সব দেশের বড় বড় বিজ্ঞানী, গবেষকরা মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন কোনোরকম একটি ওষুধ এই ভাইরাসটির সামনে দেয়াল হিসেবে দাঁড় করাতে- ‘ওরে পাষণ্ড! আপাতত দাঁড়া। এর এপাশে আর আসিস নে।’

কিন্তু কোনো কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। অনেক ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। এই খবর আসছে- ভালো, কাজ হচ্ছে। পরক্ষণেই আরেক দেশ থেকে খবর আসছে- না, এটা ঠিক না। এই ওষুধ খাওয়া বা ব্যবহার করা ঠিক হবে না।

এমনি দোলাচলের মাঝে যে ওষুধটি পশ্চিমা বিশ্বে আশার আলো দেখিয়ে চলেছে এবং নতুন করে একটি ব্রেক-থ্রো এনে দিলো, সে ওষুধটির নাম ’রেমডিসিভির’ (Remdesivir)। এই ওষুধটি নিয়ে সুখবর.কম (www.sukhabor.com) এ আমরা গত ১৪ এপ্রিল সংবাদ প্রকাশ করেছিলাম। যেখানে আমেরিকার নিউইয়র্কের এল্মহার্স্ট হাসপাতালে দীর্ঘদিন কর্মরত বাংলাদেশী জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ডা. ওমর আশরাফকে উদ্ধৃত করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, “একটি সুখবর হলো, নতুন একটি ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। ওষুধটি হলো রেমডিসিভির।”

এখন আমেরিকা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছে যে, রেমডিসিভির-এর পরীক্ষা বা ট্রায়াল রানের পর “ইতিবাচক উপাত্ত”এবং কার্যকারিতার “সুস্পষ্ট প্রমাণ” পাওয়া গেছে।

বিবিসির স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদদাতা জেমস গ্যালাহার তার প্রতিবেদনে বলেছেন, ওষুধটি “হয়তো” পাওয়া গেছে।

আমেরিকান সরকারের সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি বলছেন, করোনাভাইরাসের পরীক্ষমূলক চিকিৎসায় ট্রায়াল রান দিয়ে অর্থাৎ রোগীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে প্রাথমিক যে ফলাফল পাওয়া গেছে তাতে তিনি আশাবাদী।

“জিলেড” নামে একটি আমেরিকান ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি তাদের উৎপাদিত ওষুধ “রেমডিসিভির” নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এ্যালার্জি এ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস – এর চালানো এক পরীক্ষা বা ট্রায়াল রানের পর “ইতিবাচক উপাত্ত” পাওয়া গেছে এবং এই পরীক্ষা তাদের “প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে।” তবে তারা কোনো তথ্য-প্রমাণ দেননি।

প্রসঙ্গত, রেমডিসিভির হচ্ছে এমন একটি এ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ যা ইবোলা রোগের চিকিৎসার জন্য তৈরি হয়েছিল।

জিলেডের এই বিবৃতি ব্যাখ্যা করে বিবিসির জেমস গ্যালাহার বলছেন, কঠিন মেডিক্যাল শব্দ বাদ দিয়ে সোজা কথায় বলা যায়, জিলেড জানাচ্ছে যে, রেমডিসিভিরে কাজ হয়।

“তবে আমরা যা জানি না, তা হলো কতটা ভালোভাবে এটা কাজ করে এবং তাদের তথ্যপ্রমাণ কতটা জোরালো” – বলেন তিনি।

যত আগে আগে দেয়া যায় ততই কার্যকর

তবে কোম্পানিটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে রেমডিসিভির যত আগে আগে দেয়া যায় ততই কার্যকর। জিলেড বলছে, “আগেভাগেই চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এমন শতকরা ৬২ ভাগ রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে। আর যেসব রোগীকে দেরিতে দেয়া হয়েছে তাদের শতকরা ৪৯ ভাগ হাসপাতাল ত্যাগ করেছে।

অবশ্য এ ঘোষণার আগে বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যান্সেট চীনে রেমডিসেভিরের একটি পরীক্ষার ফল উদ্ধৃত করে জানায় যে, এতে কাজ হয়নি। তবে এ জরিপ সম্পূর্ণ হয়নি কারণ তখন যথেষ্ট রোগী ছিল না।

জেমস গ্যালাহার বলছেন, নিশ্চিতভাবে জানতে হলে আমাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে পূর্ণাঙ্গ উপাত্ত পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

খুবই আশাব্যঞ্জক

ফিনান্সিয়াল টাইমস জানায়, বুধবার এ খবর বেরুনোর পর এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘ইতিবাচক’ বলে এর প্রশংসা করার পর জিলেডের শেয়ারের দাম ৬ শতাংশেরও বেশি বেড়ে যায়।

আমেরিকার করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের ডাক্তার এ্যান্থনি ফাউচি বলেন, প্রাথমিক ফল “খুবই আশাব্যঞ্জক”।

করোনাভাইরাস থেকে জীবন বাঁচাতে সম্ভাবনাময় কোনো ওষুধ বের হলে তা হাসপাতালের উপর চাপ কমাবে এবং আংশিকভাবে লকডাউনের উঠিয়ে দেওয়া সম্ভব করে তুলবে।

দুর্দান্ত ফলাফল হবে

বিশ্বজুড়ে হাসপাতালে রেমডিসিভিরের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের মাধ্যমে কোভিড-১৯ রোগীদের উপসর্গের স্থায়িত্ব ১৫ দিন থেকে ১১ দিনে নেমেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিশ্চিত হলে এটা একটা ‘দুর্দান্ত ফলাফল’ হবে, কিন্তু মনে রাখতে হবে এটা রোগ প্রতিরোধে ‘ম্যাজিক বুলেট’ নয়।

ইবোলার চিকিৎসার জন্য তৈরি হয়েছিল জীবানু-প্রতিরোধী ওষুধ রেমডিসিভির। এটি মানুষের শরীরে কোষ প্রতিস্থাপনে ভাইরাসের জন্য দরকারি এনজাইমকে আক্রমণের মাধ্যমে কাজ করে। এর ফলে ভাইরাস তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (এনআইএআইডি) পরিচালিত এই পরীক্ষায় ১ হাজার ৬৩ জন রোগী অংশ নেয়। এদের কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এই ওষুধ এবং অন্যদের প্লাসেবো (স্বান্ত্বনা ওষুধ) প্রয়োগ করা হয়।

এনআইএআইডি পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফাউচি বলেন, “প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রোগ সারানোর সময় কমাতে রেমডিসিভিরের সুস্পষ্ট, উল্লেখযোগ্য ও ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।”

তিনি বলেন, পরীক্ষার ফল প্রমাণ করেছে যে, ‘একটি ওষুধ এই ভাইরাসটিকে আটকাতে পারে’এবং ‘আমাদের রোগীদের চিকিৎসা করার ক্ষমতার দুয়ার খুলে দিচ্ছে’।

তবে মৃত্যু ঠেকানোর ক্ষেত্রে ওষুধটির প্রভাব এখনও স্পষ্ট নয়। রেমডিসিভির পাওয়া রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার ছিল ৮ শতাংশ এবং প্লাসিবো রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার ছিল ১১ শতাংশ। তবে এই ফলাফল পরিসংখ্যানগত দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ নয়। এর অর্থ হলো- এই তফাৎ প্রকৃত কিনা তা বৈজ্ঞানিকরা বলতে পারেননি।

এই ওষুধের ফলে যদি রোগীকে আইসিইউতে নিতে না হয়, তাহলে হাসপাতালে ভিড়ের ঝুঁকি আরও কমবে এবং সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বিধিও কিছুটা শিথিল হবে।

মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রেমডেসিভির নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষার ফল এমন সময় এলো, যখন চীনে একই ওষুধ পরীক্ষা করে অকার্যকর প্রমাণ হয়েছে।

তবে সেই পরীক্ষাটি অসম্পূর্ণ ছিল। কারণ উহানে লকডাউন সফল হওয়ায় চিকিৎসকরা এক পর্যায়ে রোগীই পাননি।

তবে কোভিড-১৯ চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন বিভাগের অনুমোদন পাবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়।

- Advertisement -

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলো করুন

25,028FansLike
5,000FollowersFollow
12,132SubscribersSubscribe
- Advertisement -

সর্বশেষ