ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: যখন সারা বিশ্ব ব্যবসা ও জাতীয় অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করছে, সে মুহূর্তে চীনে করোনার প্রাদুর্ভাব সারাবিশ্বে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে, যদি না সময়মতো করোনার বিস্তারকে রোধ করা যায়।
বর্তমানে চীনে করোনা আরো ভয়ংকর মাত্রায় ফিরে এসেছে, যার ফলে জনমনে আশংকা তৈরি হয়েছে। এ মহামারীর কারণেই বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।
চীনা কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে যা করেছিল, এখনও তার পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে। তারা করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তথ্য তাদের নিজস্ব নাগরিক এবং বাইরের বিশ্বের কাছে গোপন রাখছে। কিন্তু চীনা কর্তৃপক্ষের মূলত উচিত তাদের নাগরিক এবং বিশ্ব নাগরিকদের তাদের প্রতি আস্থা বজায় রাখা।
চীন থেকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ নতুন কেস রিপোর্ট করা হচ্ছে। সাংহাই এবং বেইজিং সহ চীনের প্রধান শহরগুলো দ্রুত ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের কবলে পড়ছে। হাসপাতাল এবং অন্তেষ্টিক্রিয়ার স্থানে ব্যাপক ভীড় দেখা যাচ্ছে, যেখানে রাস্তা জনমানবশূন্য। মানুষ হাসপাতালে জায়গা পাচ্ছে না। তারা হাসপাতালের মেঝেতে ঘুমাতে বাধ্য হচ্ছে।
অসুস্থ হয়ে পড়েছে স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা। শিক্ষার্থীদেরকে স্কুলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তিন বছর আগে উহানে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর এটিই হয়ত করোনার সবচেয়ে বড় তরঙ্গ, অর্থাৎ মারাত্মক রূপ। ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবেলায় সরকার অসহায় হয়ে পড়েছে।
বেইজিংয়ের চিকিৎসক, হাওয়ার্ড বার্নস্টেইন বলেন, হাসপাতালের প্রতি কক্ষ ভর্তি রোগী। চিকিৎসকরা এতসব রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
২০২২ সালের শেষ নাগাদ সাংহাইয়ের ২৫০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই হয়ত করোনা সংক্রমিত হবেন। কোনও কারণ ছাড়াই চীনের সরকার নতুন কেস এবং বর্তমান কোভিড রোগীদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, চীনে চলমান সংকট নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখানোর জন্য রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস পশ্চিমা গণমাধ্যমকে দায়ী করেছে। এটি দাবি করেছে যে চীনা কর্তৃপক্ষ মহামারীটি সুচারুভাবে পরিচালনা করছে।
তবে ফাঁস হওয়া সরকারি নথি থেকে জানা গেছে যে চীনের পরিস্থিতি আরও খারাপ পর্যায়ে রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরুরী পরিচালক মাইক রায়ান বলেছেন, চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলো আইসিইউতে তেমন কোনও রোগী নেই। কিন্তু সত্য হলো আইসিইউতে অনেক রোগী রয়েছে।
ডিসেম্বরের প্রথম তিন সপ্তাহে চীনে প্রায় ২৫ কোটি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মানে হল চীনের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ১৮ শতাংশই কোভিড আক্রান্ত হয়েছে।
ডিসেম্বরের শুরুর দিকে, যখন আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছিল তখন চীন সংক্রমণের আসল সংখ্যা লুকিয়েছিল। পরবর্তীতে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন তথ্য প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয়।
সত্য এবং বাস্তব তথ্যের অনুপস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, অন্যান্য দেশগুলো ২০২০ সালের বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তির ভয়ে ভুগছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দেশগুলো করোনা সংক্রমণ মোকাবেলার জন্য আগেভাগেই ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে। দেশগুলোতে মাস্ক, প্রয়োজনীয় খাবার এবং ওষুধ সংগ্রহ করে জমা করে রাখা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, কোভিডের কারণে চীনের অর্থনৈতিক স্থবিরতা বিশ্ব অর্থনীতিতেও প্রভাব বিস্তার করেছে।
চ্যাথাম হাউসের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের একজন সহযোগী ফেলো কেরি ব্রাউন বলেছেন, চীনের অনিশ্চয়তা বিশ্বের বাকি অংশে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে চলেছে।
তবে ছোট দেশগুলোর উপরই কঠোর প্রভাব পড়তে পারে। আইকেজে /