আন্তর্জাতিক ডেস্ক, সুখবর ডটকম: পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কপ১৫ সম্মেলনে এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গতকাল সোমবার কানাডার মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে চুক্তিটি হয়। এতে চলতি শতকের মধ্যে বিশ্বের ৩০ শতাংশ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এমন চুক্তি করতে গত চার বছর দুই শতাধিক দেশের প্রতিনিধিরা দরকষাকষি করছিলেন। অধিকাংশ দেশ রাজি থাকলেও শীর্ষ ধনী দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তহবিল দিতে সম্মত ছিল না। তবে শেষমেশ ১৫০ দেশের পরিবেশমন্ত্রীদের বৈঠকের মধ্যে দিয়ে কপ১৫ একটি সুরাহায় পৌঁছায়।
চুক্তিতে পৃথিবীর ভূমি ও সমুদ্র রক্ষা, ক্ষতিকর ভর্তুকি হ্রাস এবং আক্রমণাত্মক প্রজাতির মোকাবিলা মূল লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মহামারির কারণে দুই বছরের বেশি সময় পর ৬ ডিসেম্বরে দুই সপ্তাহব্যাপী কপ১৫ উদ্বোধন হয়। আর ২০টি লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্তের মধ্য দিয়ে গতকাল শেষ হয় সম্মেলন। ‘প্রতিবেশগত সভ্যতা : পৃথিবীর সব জীবনের জন্য একটি সম্মিলিত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ২০২১ সালে চীনের কুনমিং শহরে কপ১৫ শুরু হয়েছিল; কিন্তু করোনার কারণে তা হয়নি। এরপর চীনই কানাডায় সম্মেলনের আয়োজন করে।
চুক্তিটি শুরুতে আটকে দিয়ে ভেটো দিয়েছিল আফ্রিকার দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো; কিন্তু পরে সম্মেলনের চেয়ার হুয়াং রানকিউ জানান যে, চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়েছে এবং এ থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। ক্যামেরুন, উগান্ডা ও কঙ্গোর মধ্যস্থতাকারীরা এই চুক্তিকে ‘জালিয়াতি’ ও ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, এই চুক্তির কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো বাড়তি কোনো সুবিধা পাবে না।
একাধিক পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে হওয়া চুক্তিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ৫০০ বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দেওয়ার পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। সাবেক পরিবেশবাদী ক্যাম্পেইনার ও মন্ত্রী স্টিভেন গুইলবাল্টের মতে, ‘প্রকৃতির সুরক্ষায় কুইনমিং-মন্ট্রিল চুক্তি একটি দৃঢ় পদক্ষেপ। ছয় মাস আগেও আমরা নিশ্চিত ছিলাম না সম্মেলনটির ব্যাপারে। সব দেশের সহযোগিতার কারণেই এটা করা সম্ভব হয়েছে।’
চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো, প্রাণীদের বিলুপ্তি ঠেকানো, বাস্তুসংস্থান নষ্ট হয় এমন পদক্ষেপ থেকে সরে আসা, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় টেকসই বন্দোবস্ত নিশ্চিত করা, আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণ, বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে ওষুধ তৈরির প্রকল্প নেওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
শতাধিক দেশ এই দশকের শেষ নাগাদ অন্তত ৩০ শতাংশ ভূমি ও মহাসাগর সংরক্ষণের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। কিন্তু প্রান্তিক জেলে ও আদিবাসীরা বলছেন, তারা সাগর বা বনভূমির ক্ষতি করেননি। অথচ এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা তাদের শাস্তি দেওয়ার নামান্তর। সমুদ্রে অবাধ দায়বিহীন বাণিজ্যিক নৌযান চলছে।
মেগাডাইভার্স দেশগুলো বলেছে, ৩০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার জন্য উল্লেখযোগ্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা লাগবে। কপ২৭-এ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আদিবাসীদের ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রথম বছরের অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোট তহবিলের মাত্র ৭ শতাংশ আদিবাসীদের সংস্থাগুলো পেয়েছে।
এম/
আরো পড়ুন:
শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিচ্ছেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন