ধর্ম ও জীবন ডেস্ক, সুখবর ডটকম: আমরা মানুষ ও সামাজিক জীব। জীবনের প্রয়োজনে আমাদেরকে মিশতে হয় সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে।
বলতে হয় নানা বিষয়ে কথাবার্তা। তাই ইসলাম কথা বলার ক্ষেত্রে কিছু বিধিমালা দিয়েছে। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এসব মেনে চলা। কারণ আমরা যা বলছি এর সবই সংরক্ষণ করা হয়।
প্রবাদে আছে যে, ‘বোবার কোনো শত্রুর নেই।’ এ প্রবাদের দ্বারাই মূলত বোঝা যায়, কথাবার্তার নানাবিধ বিপজ্জনক পরিণতির কথা। কথা বলার ক্ষেত্রে মিথ্যা সবচেয়ে বাজে অভ্যাস। বলা হয়েছে, মিথ্যা হলো গোনাহের জননী। তাই আমাদের মিথ্যা কথা অবশ্যই বর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে পরনিন্দার অভ্যাসও পরিহার করতে হবে।
উপরোক্ত বিষয়াদী ছাড়াও কথা বলার ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখা দরকার-
ক. নিশ্চিত হয়ে কথা বলা: কথা বলার ক্ষেত্রে নিশ্চিত হয়ে কথা বলা। যাচাই-বাছাই ও নিশ্চয়তা ব্যতীত কারো সাথে শোনা কথা বলতে নেই। কারণ আপনি অন্যদের কাছ থেকে সত্য ও মিথ্যা এবং সত্য ও সন্দেহযুক্ত কথাবার্তা শুনতে ও জানতে পারেন। যদি আপনি যা শোনেন তাই বলে বেড়ান, তাহলে আপনি গোনাহের অংশীদার হবেন। হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির জন্য গোনাহ (আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য) করার জন্য এটাই যথেষ্ট যে- সে যা শোনে, তাই প্রচার করে।’
খ. স্পষ্ট করে কথা বলা: কথা বলার উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে অন্যের সাথে কথা বলা। যেন এটা নিয়ে কোনো ভজঘট সৃষ্টি না হয়। সত্যের মিশেলে আংশিক মিথ্যা কিংবা সন্দেহ সৃষ্টি করে এমন কথা না বলা।
গ. অপ্রয়োজনীয় তর্ক না করা: অন্যের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় তর্কে (যার উদ্দেশ্য থাকে অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করা কিংবা অন্যের ওপর জয়লাভ করা) জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকা। কারণ, উদ্দেশ্যহীনভাবে তার্কিক হওয়া বিপথগামীতার লক্ষণ। এ বিষয়ে তিরমিজি শরিফে বর্ণিত এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর পক্ষ হতে হেদায়েত পাওয়া সত্ত্বেও তারা পথভ্রষ্ট হয়েছিল, কেননা তারা অযথা তর্কে জড়িত হতো।’
হাদিসে এও বলা হয়েছে যে, অযথা তর্ক করা পরিহার করুন যদিও সত্য আপনার পক্ষে থাকে। আবু দাউদ শরিফে বর্ণিত অন্য এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাত পরিবেষ্টিত একটি গৃহের নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে সঠিক হওয়া সত্ত্বেও অকারণ বিতর্কে লিপ্ত হয় না।’
ঘ. বক্তব্য স্পষ্ট করুন: আপনার বক্তব্য সুস্পষ্ট ও প্রাঞ্জল করুন। বুঝতে অসুবিধা হয় এমন শব্দ ব্যবহার করবেন না। অপ্রয়োজনীয় বাকপটুতা পরিহার করুন এবং অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন কিছু বলবেন না। কারণ, রাসুল (সা.) এমন কথাবার্তা বলা ঘৃণা করতেন। এ প্রসঙ্গে তিরমিজি শরিফে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘ওই সব লোকদের আমি চরম ঘৃণা করি ও কিয়ামতের দিন তারা আমার নিকট থেকে সর্বাপেক্ষা দূরে থাকবে, যারা অপ্রয়োজনে কথা বলে ও অন্যদের হেয় প্রতিপন্ন করে এবং কথা বলার সময় যারা লোকপ্রদর্শনী করে।’
সবচেয়ে ভালো হয়, বক্তব্য ধীরস্থির, স্পষ্ট, শ্রুতিযোগ্য ও অন্যের নিকট বোধগম্যময় করে উপস্থাপন করা। রাসুল (সা.) কথা বলার সময় কঠিন বিষয় ও শব্দাবলী তিন তিনবার করে পুনরাবৃত্তি করতেন; এটা নিশ্চিত করার জন্য যে তা যেন বোধগম্য হয়।
ঙ. ঠাট্টা ও মশকরা করবেন না: কথা বলার সময় আন্তরিক হোন এবং অযথাই ঠাট্টা-মশকরা এড়িয়ে চলুন। আর যদি করেনও তবে রাসুল (সা.)-এর অনুরূপ সত্যবাদী হন। এছাড়া কারো কথা বলার সময় তাকে বাধাগ্রস্ত করবেন না ও তার বক্তব্য সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত শুনতে থাকুন। প্রয়োজনে তার কথা বলা শেষে কোনো প্রশ্ন থাকলে সেটা নিয়ে আলোচনা করুন।
এম এইচ/ আই. কে. জে/
আরও পড়ুন:
ইসলামে সোনা-রুপার পাত্র এবং রেশমী কাপড় ব্যবহার নিষিদ্ধ, কিন্তু কেন?