spot_img
30 C
Dhaka

২৩শে মার্চ, ২০২৩ইং, ৯ই চৈত্র, ১৪২৯বাংলা

এক টাকা খরচেই বাড়িতে বসে সুগার হিমোগ্লোবিন টেস্ট

- Advertisement -

সুখবর ডেস্ক: আপনার ব্লাড সুগার কত, হিমোগ্লোবিনের মাত্রার কতটা ওঠা-নামা হয়েছে, তা জানতে এ বার খরচ হবে মাত্র এক টাকা! এমনই একটি যন্ত্র আবিষ্কার করলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুর আইআইটি-র একদল বিজ্ঞানী।

যন্ত্র বলতে হয়তো ভাবছেন জটিল কোনও কিছু। না, তা নয়। ওই যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়েছে একটি স্মার্টফোন। সঙ্গে রয়েছে আরও কয়েকটি সস্তা উপাদান। বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এই যন্ত্র অব্যর্থ।

এখনও প্রত্যন্ত গ্রামবাংলার অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে ন্যূনতম প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা নেই। সেখানে রক্ত পরীক্ষার সুবিধা যে থাকবে না, সেটাই স্বাভাবিক। সেই সব এলাকার মানুষ কেন রক্ত পরীক্ষার মতো জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবেন? এই ভাবনা থেকেই খড়গপুর আইআইটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী ৭ বছর আগে শুরু করেন গবেষণা। এই অভিনব পদ্ধতির খবর প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘র‌য়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি’র জার্নালে।

লাগবে শুধু একটি স্মার্টফোনএকটি হোল্ডারও!

সাত বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর তাঁরা তৈরি করেছেন ‘আল্ট্রা লো-কস্ট ব্লাড টেস্ট ডিভাইস’ বা অত্যন্ত স্বল্প মূল্যে রক্ত পরীক্ষার যন্ত্র। সুমন ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে জানিয়েছেন, যন্ত্রটি বানানোর পদ্ধতিতে কোনও জটিলতা নেই। তা বানাতে খরচও হয়েছে খুব কম। খরচ বলতে, একটি স্মার্টফোন লেগেছে। আর সেটি রাখার জন্য লেগেছে একটি হোল্ডার। সেই হোল্ডারে একটি ছোট্ট ‘এলইডি’লাইট রয়েছে। যার আলো একটি কাগজের মধ্যে দিয়ে গিয়ে মোবাইলের ক্যামেরায় পড়বে। সেই কাগজটি একটি ‘ফিল্টার পেপার’। তাতেই রাখা থাকবে রক্তের নমুনা। সেই ছবি দেখেই রক্তে শর্করা বা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নির্ণয় করা সম্ভব।

কীভাবে করা হবে রক্ত পরীক্ষা?

প্রথমে মাত্র এক ফোঁটা রক্ত ফেলা হবে ফিল্টার পেপারে। সেখানে রক্তরস ও রক্তকণিকা আলাদা হয়ে যাবে। এখনকার চালু পদ্ধতিতে রক্তরস ও রক্তকণিকা-সহ পুরো রক্ত নিয়ে তাতে শর্করার মাত্রা নির্ণয় করা হয়। কিন্তু সুমনদের উদ্ভাবিত যন্ত্রে তার প্রয়োজন হবে না। এক্ষেত্রে শুধু রক্তরসেই শর্করার মাত্রা কতটা, তা নির্ণয় করা যাবে। ফলে, রক্তে শর্করারপরিমাণ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আরও বেশি সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।

এক ফোঁটা রক্ত থেকে পাওয়া রক্তরস টিউবের সরু পথ ধরে পৃষ্ঠটান (সারফেস টেনশন)-এর মাধ্যমে কাগজের অপর প্রান্তে রাখা কয়েকটি রাসায়নিকের মধ্যে গিয়ে পড়বে। সেখানে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ওই রক্তরস লালচে বাদামি রং নেবে। এই রং যত গাঢ় হবে, রক্তে শর্করার পরিমাণ তত বেশি বলে প্রমাণিত হবে। মোবাইলে একটি অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ ডাউন লোড করতে হবে। সেই অ্যাপ ওই রং বিশ্লেষণ করে বলে দেবে আপনার রক্তে শর্করা বা হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কত।

তিনি আরও জানিয়েছেন, ফিল্টার হওয়া থেকে শুরু করে রাসায়নিকের কাছে পৌঁছতে রক্তরসের সময় যাতে কম লাগে তার জন্য তাঁরা ‘পেপার অ্যান্ড পেন্সিল’ নামে একটি পদ্ধতির আবিষ্কার করেছেন। যেখানে কাগজে পেন্সিলের গ্রাফাইট গুঁড়ো মিশিয়ে দেওয়া হয়। তার উপর বিদ্যুত্শক্তি প্রয়োগ করলে, রাসায়নিক পর্যন্ত পৌঁছতে রক্তরসের সময় লাগবে অনেক কম।

একইভাবে মাপা যাবে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও

সুমন বলছেন, ‘‘একই পদ্ধতিতে রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণও নির্ণয় করা যায় এই অত্যন্ত স্বল্পমূল্যের যন্ত্রে। প্রাথমিক খরচ বলতে একটি স্মার্টফোন ও তার হোল্ডার। তারপর ফিল্টার পেপার ও রাসায়নিকেরজন্য কিছু খরচ। পরীক্ষাগারে অন্যান্য খরচ বাদ দিলে এই ফিল্টার পেপার ও রাসায়নিকের জন্য প্রতিবার পরীক্ষা করতে খরচ হয় মাত্র ১ টাকা। শুধু তাই নয়, প্যাথলজি ল্যাবের মতো পরীক্ষার জন্য লাগবে না এক সিরিঞ্জ রক্ত। মাত্র এক ফোঁটা রক্তই বলে দেবে, তাতে কতটা শর্করা ও হিমোগ্লোবিন রয়েছে।’’

প্যাথলজিল্যাব ও সুমনের যন্ত্রসুবিধাঅসুবিধা

প্যাথলজি ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষার জন্য যে যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়, সেগুলি নির্দিষ্ট চাপ ও তাপমাত্রায়, যথাযথ পরিবেশে রাখতে হয়। না হলে যন্ত্র খারাপ হয়ে যেতে পারে আর পরীক্ষার ফলও ভিন্ন ভিন্ন হয়।

কিন্তু সুমন ও তাঁর সহযোগী গবেষকরা সম্প্রতি গিয়েছিলেন শালবনি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সেখানে কিছু মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে হাসপাতালের বাইরের বেঞ্চে বসেই তাঁরা পরীক্ষা করেন। সেই একই নমুনার উপর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের পরীক্ষাগারে শর্করা ও হিমোগ্লোবিন মাপা হয়। দেখা যায়, দুটি ক্ষেত্রে ফলাফলের তারতম্য হচ্ছে মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ। যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ‘গ্রহণযোগ্য’ বলে ধরা হয়। বীরভূমের বড়রায় শিশুসাথী বিদ্যানিকেতনে প্রায় ৬০ জনের হিমোগ্লোবিন মাপা হয় সুমনদের উদ্ভাবিত যন্ত্র দিয়ে। হিমোগ্লোবিন মাপার চালু যন্ত্র ‘হিমোকিউ’ আর সুমনদের বানানো এই স্বল্পমূল্যের রক্ত পরীক্ষার যন্ত্রে ফলাফলের হেরফের যেটুকু হয়েছে, তা প্রায় নগণ্যই।

সুমন জানিয়েছেন, এই যন্ত্রের দ্বারা শর্করা ও হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা পদ্ধতির পেটেন্ট নেওয়া হয়ে গিয়েছে। পেটেন্ট নেওয়া হয়েছে ‘পেপার অ্যান্ড পেন্সিল’ পদ্ধতিরও।

সাধারণের ব্যবহারের জন্য চাই বাণিজ্যিক উৎপাদন

দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার পর সুমন-সহ গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন, এই যন্ত্র মানুষের ব্যবহারের জন্য বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা যাবে। আর তার জন্য প্রয়োজন যন্ত্রটির বাণিজ্যিক উত্পাদন। তার জন্য চাই অর্থসাহায্য। এই কাজে এগিয়ে এসেছে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান মন্ত্রক। তাদের অর্থসাহায্য ও কয়েকটি বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাত ধরে খড়গপুর আইআইটি ক্যাম্পাসেই ওই যন্ত্রের বাণিজ্যিক উত্পাদন শুরু হবে ৬ মাসের মধ্যে। গবেষকদের আশা, এক বছরের মধ্যেই মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে যাবে এই যন্ত্র।

- Advertisement -

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলো করুন

25,028FansLike
5,000FollowersFollow
12,132SubscribersSubscribe
- Advertisement -

সর্বশেষ