একদিন সহস্র জীবন
-ভীষ্মদেব বাড়ৈ
ঘরের বারান্দায় টিনের
ঢেউ-খাদ ঝুলে অহনার ঘরে শিশির ঝরছে,
বাইরে কুয়াশা,
শীত জাঁকিয়ে বসেছে সর্বহারা ভিক্ষুকের মতো,
নিশুতি রাত গভীর থেকে গভীরতর—-
আজ সাত বছর পরে অবিনাশ ঘরে ফিরছে, ছেলেটির বয়স সাত বছর সাত মাস,
মেয়েটি পড়ছে কলেজে!
গভীর রাতে ঘরের জড়াজীর্ণ কাঠের খিলে কড়া নড়ে উঠে, বুক ধড়ফড় করে ওঠে অহনার, ঘুম আবছা চোখে গভীর স্বপ্ন ভেঙে যায়,
পরিচিত কে যেন নাম ধরে ডাকছে, হাতে চিমটি কাটে- স্বপ্ন না কল্পনা!
দরজা খুলে হা করে দাঁড়িয়ে থাকে,
অভ্যাসহীনতা, বলতে ভুলে যায়- “ঘরে এসো”!
আজ বছরের শেষ রাত,
দীর্ঘ বিদেশ যাপন শেষে অবিনাশ ঘরে ফিরে আসে,
কাল ঘরে নতুন সূর্য উঠবে অহনার,
অহনা-অবিনাশ বাকি রাতটুকু লন্ঠনের আলোয় চোখে-চোখে রাত জেগে থাকে,
আলো ছড়িয়ে পড়ে বাঁশের বেড়ার চাল গড়িয়ে পাশের সুরম্য দালানে!
কুয়াশার রাত শেষ হয়, ভোরের আলো মিলিয়ে যায় নতুন রবির লাল দিগন্তে।
অহনা ভাবে-
সাত বছর সাত মাস
দীঘির গভীর জলে
হারানো গহনার মতো হারিয়ে গেল!
জীবনের পাতাগুলো এভাবেই শিশির আর কুয়াশার মতো টিনের চাল হতে টুপ করে ঝরে পড়ে যায়,
আমারা নতুন বছর গুনি
আমরা নতুন স্বপ্ন দেখি
আমরা নতুনের গান গাই
সবকিছুর আড়ালে কে যেন হাতছানি দেয় গভীর পশ্চিমে,
এতো দিনে- কতো সহস্র প্রদীপ পুড়ে-পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, কতো জল নদীতে মিশেছে কতো কথার মরণ হয়েছে
কতো জীবন চলে গেছে দিশাহীন বৈকুন্ঠের পথে।
অহনা, পাশ ফিরে জেগে উঠে-
“দিন গেছে, একেবারেই কি গেছে!”
তার চোখের দৃষ্টি আকাশের শেষ তারাটির দূরের আলোর সাথে মিশে যায়।
তবু বুকে আশা বাঁধে অহনা-
এবার নতুন দিনে
এক পৃথিবী ভালবাসায় সবকিছু পুষিয়ে নিবে,
প্রেমে প্রেমে সপ্ত আকাশ ভরিয়ে দিবে,
যে ভালোবাসতে জানে তার কাছে “একদিন সহস্র জীবন”।
এবার জগতে বহিছে স্রোত
মিলনের ধারা,
নতুনের নবলোকে দিকে-দিকে পড়ে গেছে সাড়া ।
এসি/ আই. কে. জে/
আরো পড়ুন:
আদ্রিতা মুভিজের রহস্যঘেরা ভৌতিক সিরিয়াল ‘ছায়াশিকার’ (ভিডিও)