ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: পাকিস্তানে পশ্চিমদিকের প্রদেশগুলো ক্রমাগত অশান্ত হয়ে উঠেছে। উত্তরে গিলগিট-বাল্টিস্তান থেকে দক্ষিণে গোয়াদর বন্দর নগরী পর্যন্ত জনগণ বিক্ষুব্ধ। তারা তাদের দীর্ঘস্থায়ী, দীর্ঘদিনের উপেক্ষিত দাবির জন্য রাস্তায় বিক্ষোভ করছে।
হিমালয়ের তুষারাবৃত পর্বত থেকে আরব সাগরের ধারে বালির টিলা পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের মতো তাদের অভিযোগও বৈচিত্র্যময়। তবে সব নাগরিকের বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে একটি অভিযোগ সবারই, সেটা হলো জনগণের নিরাপত্তা প্রদানে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। তাদের মতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান অভিজাতদের দ্বারা পরিচালিত এবং অভিজাতদের জন্যেই কাজ করে। সেখানে তাদের মতো সাধারণ মানুষদের কোনও স্থান নেই। যখনই তারা তাদের সমস্যার কথা জানিয়ে বিক্ষোভ করে, তখনই রাষ্ট্র বল প্রয়োগ করে তাদের থামিয়ে দেয়। এমনকি রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে জনগণের উপর অহেতুক নিপীড়ন চালায়, ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে চলে যায়।
গিলগিট-বাল্টিস্তান প্রদেশে বিক্ষোভ নতুন কিছু নয়। পাকিস্তান অধিকৃত জিবি অঞ্চলকে কোনো রাজনৈতিক মর্যাদা দিতে অস্বীকার জানিয়েছে, এবং এ অঞ্চলকে নিজেদের উপনিবেশ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। এইটাই এ অঞ্চলের মানুষদের বিক্ষোভের প্রধান কারণ।
গত কয়েকদিন ধরে গিলগিট-বাল্টিস্তান জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ এই অঞ্চলের ভৌগলিক এবং ধর্মীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের একত্রিত করেছে। তাছাড়া উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোও এ বিক্ষোভের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে। জমির অধিকার, কর আরোপ, ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট, গম সরবরাহে হ্রাস ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ রাস্তায় নেমেছে।
তাছাড়া এ অঞ্চলের প্রধান সমস্যা হলো রাষ্ট্রের নেতৃত্বে ভূমি অধিগ্রহণ। বাইরের লোকেদের দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলে ভূমি অধিগ্রহণ একটি বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) এ সমস্যায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে, প্রশাসন ও উপজাতীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনা সত্ত্বেও পঞ্চম দিনের মতো বিক্ষোভ চলমান। ১০ জানুয়ারি, বিক্ষোভকারীরা তাদের নেতাদের এবং স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আলোচনায় বসে। এ আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর তারা রাস্তা অবরোধ করে। আন্দোলনকারীরা সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল ব্যাহত করে। এ সময় আট হাজারেরও বেশি দোকানপাট বন্ধ ছিল।
গোয়াদর প্রদেশেও সিপিইসি নিয়ে বিক্ষোভ চলছে। গোয়াদর অধিকার আন্দোলনের নেতা মাওলানা হিদায়াতুর রহমান চীনা নাগরিকদেরকে বন্দর এলাকা ছেড়ে যেতে হুমকি দিয়েছেন। তিনি সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি সরকার তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে উপেক্ষা করে, তবে তারা বাধ্য হয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নিবে।
সিপিইসি প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকেরা পাকিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। চীনা নাগরিকদেরকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বেড়েই চলেছে। এ ব্যাপারে চীন উদ্বেগ প্রকাশ করে তার নাগরিকদের জন্য কার্যকর নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে।
রহমানের আন্দোলন সাধারণ জনগণের সমস্ত অভিযোগ তুলে ধরছে। স্থানীয়দের চোখে মুখে চীনাদের জন্য ক্রোধ দৃশ্যমান। চীনা মাছ ধরার ট্রলারের কারণে স্থানীয় জেলেরা স্বাধীনভাবে মাছ ধরতে পারছে না। ফলে তারা তাদের নিজেদেরই দেশে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীরা সরকারকে ইরানের সাথে অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা সহজ করার জন্য আহ্বান জানায়। যদিও এই দাবি গোয়াদরে চীনা প্রকল্পগুলোর সাথে সরাসরি যুক্ত নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের যুক্তি হলো অনেক স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন যে, সিপিইসি সমস্ত সমস্যার মূল কারণ।
২০১৫ সালে পুনরায় চালু হওয়া সিপিইসি এর স্বাভাবিক গতিকে প্রভাবিত করছে স্থানীয় প্রতিরোধ। পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে চীনের বিরোধের কারণে প্রকল্পটির গতি আরো ধীর হয়ে যায়৷ তবে নতুন সরকার এ প্রকল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতেই আগ্রহী।
শেহবাজ শরীফ সরকার দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে মুক্তির পথ হিসেবে এ প্রকল্পটিকে দেখছে। সেই সাথে শেহবাজের সাথে ইমরানের লড়াইয়েও এ প্রকল্পের বিশাল বড় ভূমিকা রয়েছে, যদিও এ প্রকল্পটির কারণে দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণে গণবিক্ষোভ দৃশ্যমান।
আই. কে. জে/