spot_img
25 C
Dhaka

৩০শে মার্চ, ২০২৩ইং, ১৬ই চৈত্র, ১৪২৯বাংলা

আজ মহাষষ্ঠী: ঢাকের তালে শুরু হলো দুর্গাপূজা

- Advertisement -

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর ডটকম: স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আজ মহাষষ্ঠী। চণ্ডীপাঠ, ধূপ আর ঢাকের তালে শুরু পূজার আনুষ্ঠানিকতা। দুপুরেই শেষ হবে দেবীর ষষ্ঠীবিহিত পূজা। সন্ধ্যায় হবে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস।

করোনা অতিমারীর কারণে উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে শুধুমাত্র সাত্ত্বিক ভাবেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের পূজা।

আজ ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হলো পাঁচদিনের পূজা যা আগামী ২৬ অক্টোবর সোমবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে। ভক্তরা পৃথিবীর সব মানুষকে করোনা মুক্ত রাখার জন্য এবার দেবীর কাছে প্রার্থনা জানাবেন।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের এবং সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে মেনে ধর্মীয় বিধিবিধান সমুন্নত রেখে দুর্গাপূজার আয়োজন ও অংশগ্রহণের জন্য সনাতন সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ। কারণ, এই বছরের পুজো অন্যান্য বছরের মত নয়। করোনা আতঙ্কের আবহেই এবার দেবীপক্ষের সূচনা হয়া। আর মহামারীর দুর্যোগ মাথায় নিয়েই এবার হচ্ছে মাতৃবন্দনা।

করোনা মহামারীর কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে এবছর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।

এবার মহালয়া ছিল ১৭ সেপ্টেম্বর। মহালয়ার ৬ দিন পর সাধারণত দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও পঞ্জিকার হিসাবে এবার আশ্বিন মাস ‘মল মাস’ মানে অশুভ মাস হওয়ার কারণে কার্তিক মাসে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

পঞ্জিকা মতে এবার দেবী দুর্গার আগমন হচ্ছে দোলায়। দোলায় চড়ে বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে স্বামীর ঘর থেকে রওনা দেবেন তিনি। ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, দোলায় আগমন এর অর্থ মড়ক। ফলে, পূজার বা তার পরবর্তী সময়েও মহামারীর পরিস্থিতি বজায় থাকার আশংকা রয়েছে। তবে, মায়ের গমন এবার গজে। অর্থাৎ হাতিতে চড়ে মা বাপের ঘর ছেড়ে পাড়ি দেবেন স্বর্গে। গজে চড়ে গমনের ফল শুভ হয়।

পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে এ পূজার আয়োজন করায় এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। আবার রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাত্রার আগে শ্রীরাম চন্দ্র দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবশ্যা তিথিতে। এ জন্যই দেবীর শরৎকালের এ পূজাকে অকাল বোধনও বলা হয়।

আজ সকালে কল্পারম্ভ এবং সন্ধ্যায় বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হবে। এদিন, সকাল থেকে চন্ডিপাঠে মুখরিত থাকবে সকল মন্ডপ এলাকা।

পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এবছর ঢাকায় কোনো মন্ডপে কুমারী পূজা উদযাপন করা হবে না। তবে, ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গায় কুমারী পূজা হতে পারে।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী বলেন, ‘করোনা অতিমারীর কারণে এবার উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে। একারণে এবারের দুর্গোৎসবকে ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করছি।’ সপ্তমী তিথিতে বিশ্ববাসীর করোনামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনের জন্য বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, নির্দেশনা মেনে এবারের পূজায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে না। অঞ্জলি দানের সময় ফেসবুক লাইভের সহযোগিতা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ‘যেসব জায়গায় সরাসরি অঞ্জলি হবে, সেখানে ২৫ থেকে ৫০ জনের বেশি আসতে পারবেন না। সন্ধ্যা আরতির পর রাত ৯টার মধ্যে অবশ্যই পূজা মন্ডপ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি। জনসমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই দুর্গা পূজায় আগেই প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’

এছাড়াও, ভক্তিমূলক সংগীত ছাড়া অন্য কোনো গান যেন বাজানো না হয়, মাইক বা পিএ সেট যেন ব্যবহার করা না হয়, পূজামন্ডপে ‘প্রয়োজনের অতিরিক্ত দীর্ঘ সময়’ কোনো দর্শনার্থী যেন না থাকে এবং সন্ধ্যার বিরতির পর দর্শনার্থীদের প্রবেশে যেন নিরুৎসাহিত করা হয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ২শ ২৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার মন্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। গতবছরের তুলনায় এবার ১হাজার ১শ ৭৫ টি মন্ডপে পূজা কম হচ্ছে। অন্য দিকে ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা মন্ডপের সংখ্যা ২৩৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিলো ২৩৭টি। আর ঢাকা জেলায় পূজা হচ্ছে ৭৪০টি।

রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মন্ডপ, রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামন্ডপ, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরোদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, সিদ্ধেশ্বরী কালিমাতা, ভোলানাথ মন্দির আশ্রম, জগন্নাথ হল, ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, গুলশান বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ মন্ডপ, শাখারী বাজারের পানিটোলা মন্দিরসহ অন্যান্য মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

রাজধানীসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামন্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।

- Advertisement -

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলো করুন

25,028FansLike
5,000FollowersFollow
12,132SubscribersSubscribe
- Advertisement -

সর্বশেষ