আন্তর্জাতিক ডেস্ক, সুখবর বাংলা: সম্প্রতি ইউটিউবে ‘অবিশ্বাস্য ঘটনাবলী’ বা ‘ব্যাখ্যাতীত রহস্য’ শিরোনামে কিছু ভিডিও খুব দেখা যাচ্ছে। সেই ভিডিওগুলোর কয়েকটিতে একটি দৃশ্য প্রায় দেখা যায়, যেটাকে ভিডিওর ধারাভাষ্যকাররা বর্ণনা করেন ‘আশ্চর্যজনক’, ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’, এমনকি ‘ভিনগ্রহবাসীদের কাজ’ বলে। আদতে ব্যাপারটা তেমন কিছুই না। বরং সেটা বিজ্ঞানেরই আরেকটি চমৎকার আবিষ্কার।
ভিডিওগুলোতে যেই দৃশ্যটি দেখা যায় তা হলো, একটি জেট আকাশে উড়তে উড়তে মাঝপথে কিছুক্ষন থেমে একটু পিছিয়ে আবার সামনের দিকে উড়ে যায়। এই দৃশ্যটিকে ব্যাখ্যাতীত বলার বা অবিশ্বাস্য বলার আসলে কোন কারন নেই। কারন এর একটি ব্যাখ্যা আছে।
যেই জেট-এর দৃশ্য ভিডিওগুলোতে দেখা যায় সেই জেটটির নাম “হ্যারিয়ার জাম্প জেট”। এই জেটের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে এটা লম্বা ভাবে (ভার্টিকাল ভাবে) উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারে। ঠিক হেলিকপ্টারের মতন। আবার সাধারন উড়োজাহাজের মতো রানওয়েতেও উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে সক্ষম, তবে অন্যান্য উড়োজাহাজের তুলনায় হ্যারিয়ারের কম দূরত্বের রানওয়ে হলেই চলে। এই জেটের আরেকটি বৈশিষ্ট্য, যার কারনে সেই ভিডিওগুলোতে বারবার হ্যারিয়ারের দৃশ্যটি ব্যবহার হয়, তা হলো, এটা আকাশে এক জায়গায় স্থির থাকতে সক্ষম। এমনকি স্থির অবস্থান থেকে এটি ডানে-বামে এবং সামনে-পেছনে উড়তে সক্ষম।
হ্যারিয়ার জেটের এই বিশেষত্বকে বলা হয় ভিএসটিওএল, ভার্টিকাল অ্যান্ড/অর সর্ট টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং। এই ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করা হয় জেট ইঞ্জিন থেকে নির্গত গ্যাস নজলের মুখ ঘুরিয়ে।
হ্যারিয়ার জেটের নামকরন করা হয়েছে শিকারি পাখির নাম অনুসারে। এবং এই জেট আবিষ্কার হয়েছে ৫০ বছরেরও আগে। ১৯৬৭ সালের ২৮শে ডিসেম্বরে এটার প্রথম উড্ডয়ন হলেও হ্যারিয়ার জেটকে জনসম্মুখে আনা হয় ১৯৬৯ সালে। ১৯৬০ সালের দিকে একজন ব্রিটিশ নির্মাতা হকার সিডলী প্রথম এই জেটটি নির্মাণ করার কথা ভাবেন। অনেক চেষ্টা ও পরিবর্তনের পর সেই দশকেই ভিএসটিওএল বিশিষ্ট একমাত্র সফল জেট হয় হ্যারিয়ার জাম্প জেট।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র সহ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কাছেও এই সিরিজের জেট রয়েছে। ২০০৩ এ এই জেট নির্মাণ বন্ধ হয়ে গেলেও এখনও কিছু জায়গায় এই জেটকে দর্শকদের বিনোদন দিতে দেখা যায়। আকাশে উড়ে, খানিকক্ষণ থেমে থেকে আবারো পেছনের দিকে উড়ে যাওয়ার সময় কোন দর্শকের ক্যামেরায় বন্দী হওয়া একটি খণ্ডচিত্রই এখন ‘দেখুন অবিশ্বাস্য ব্যাপার’ শিরোনামে বিভিন্ন বাংলা ইউটিউবারের চ্যানেলে এবং ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ
হাইব্রিড এয়ার ভেইকেলস বা HAV। নির্মাণ করতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান